Skip to main content

★পৃথিবী ঘুরে নাকি সুর্য ঘুরে?আল কোরআন কি বলে?

পৃথিবী ঘুরে নাকি সুর্য ঘুরে?আল কোরআন কি বলে?




এক সময় সূর্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে এ বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক মতানৈক ছিল। যেমন, প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মহাবিশ্বের সব কিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু “পৃথিবী স্থির।”
এ ধারণাটা পরবর্তী বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভুল প্রমাণিত হয়।
পোল্যান্ডের একজন জ্যোতিবিজ্ঞানী যার নাম “কোপানিকাস” (১৪৭৩-১৫৪৩) তিনি বলেছিলেন, পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে। কিন্তু কেউই তার উক্তিটি বিশ্বাস করেনি।
পরবর্তীযুগে বিজ্ঞানী “নিউটন” আবিস্কার করেন, যে পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে এবং পক্ষান্তরে সূর্যও তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে।
বর্তমানে সূর্যকেন্দ্রিক এই মডেল প্রমানিত এবং বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ তা গ্রহন করেছে।
অথচ কুরআনুল কারীম আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শত বছর আগেই একথা বলে দিয়েছে যে, চন্দ্র, সূর্য ওপৃথিবীসহ মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্র,গ্রহ,ও উপগ্রহই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করতেছে ।’
নিম্নে পবিত্র কোরআনের আলোকে পৃথিবী সহ মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্র,গ্রহ ও উপগ্রহের ঘুর্নায়মান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল-
★কুরআনুল কারীমের সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭَ ﻭَﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻛُﻞٌّ ﻓِﻲ ﻓَﻠَﻚٍ ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ
“এবংতিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে।”
বিশ্বখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন, বিজ্ঞানী আল্লামা ত্বানত্ববী আল জাওহারী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, উক্ত আয়াতটি ব্যাপক অর্থ সম্বলিত। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও পৃথিবী, মোটকথা প্রত্যেকটি নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। [আল জাওয়াহিরু ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম : ১০/১৯৯]
বিশ্বনন্দিত মুফাস্সীরে কুরআন আল্লামা মাহমুদ হিজাযী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, আল্লাহ পাক পৃথিবীর বুকে পাহাড়সমূহের বোঝা রেখে দিয়েছেন; যাতে করে পৃথিবী মানব মণ্ডলীকে নিয়ে ঝুঁকে না পড়ে। পৃথিবী নিজ কক্ষে ঘুরে এবং সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। (আল্লাহ্) সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন যেন প্রত্যেকটি নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরে।
[আত তাফসীরুল ওয়াজেহ : ১৭/৫২৮]
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে।
★পবিত্র কোরআনের (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮-৪০) নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻟِﻤُﺴْﺘَﻘَﺮٍّ ﻟَﻬَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﺗَﻘْﺪِﻳﺮُ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢِ , ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻗَﺪَّﺭْﻧَﺎﻩُ ﻣَﻨَﺎﺯِﻝَ ﺣَﺘَّﻰ ﻋَﺎﺩَ ﻛَﺎﻟْﻌُﺮْﺟُﻮﻥِ ﺍﻟْﻘَﺪِﻳﻢِ , ﻟَﺎ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻳَﻨْﺒَﻐِﻲ ﻟَﻬَﺎ ﺃَﻥْ ﺗُﺪْﺭِﻙَ ﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞُ ﺳَﺎﺑِﻖُ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻭَﻛُﻞٌّ ﻓِﻲ ﻓَﻠَﻚٍ ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ
“সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।”
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা আহমদ মোস্তফা মারাগী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা ইয়াসীনের অত্র আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, প্রত্যেকটি গ্রহ-নক্ষত্র অর্থাৎ পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে (ঘুরছে)। যেভাবে মাছ পানিতে সাঁতার কাটে। সূর্য ঘুরছে নিজ কক্ষপথে।
[আত তাফসীরুল মারাগী : ২৩/১০]
★পবিত্র কোরআনের সূরা যুমারের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻳُﻜَﻮِّﺭُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻭَﻳُﻜَﻮِّﺭُ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺳَﺨَّﺮَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻛُﻞٌّ ﻳَﺠْﺮِﻱ ﻟِﺄَﺟَﻞٍ ﻣُﺴَﻤًّﻰ ﺃَﻟَﺎ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰُ ﺍﻟْﻐَﻔَّﺎﺭ -
“তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন।প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।”
এই আয়াত দ্বারাও পৃথিবী ঘুর্নায়মানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।কারনে আয়াতে বলা হয়েছে সৌরজগতের প্রত্যেকেই বিচরণ করতেছে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।আর পৃথিবীও যেহেতু সৌরজগতের একটি গ্রহ সুতরাং পৃথিবীর ঘুর্নায়মান হওয়াটাই স্বাভাবিক।
পরিশেষে বলা যায় যে,পবিত্র কোরআন গতানুগতিক কোন বৈজ্ঞানিক থিওরীর কিতাব নয় বরং এটা হল-এই বিশ্বভ্রম্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতীর হেদায়াতের আলোকবর্তিকা।এখানে শুধু বৈজ্ঞানিক থিওরীর এতটুকুই বর্ণিত হয়েছে যতটুকুতে মানুষের উপদেশের সম্পর্ক রয়েছে।বাকিটা মানুষ নিজ নিজ প্রজ্ঞা দিয়ে আবিষ্কার করে নিবে।
বিজ্ঞানের কোন থিওরি যদি কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে বুঝতে হবে এ থিওরি এখনও ১০০% চুড়ান্ত পর্যায়ে পোঁছেনি।কারন বৈজ্ঞানীকদের জ্ঞান হল-সসীম আল্লাহর জ্ঞান হল-অসীম।সসীম জ্ঞান কখনও অসীমের সমকক্ষ হতে পারেনা।
বি.দ্র. : এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে নিম্নে প্রদত্ত তাফসীরগ্রন্থদ্বয় ও গুগলের লিঙ্কটি অধ্যয়ন করুন।
১.তাফসীরে ছানায়ী। [লেখক : আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী রহ.। খন্ড- ৮ম : পৃষ্ঠা-১৯২]
২. তাফসীরে আনওয়ারুল বয়ান। [লেখক : আল্লামা আশেক এলাহী বুলন্দশহরী রহ.। খন্ড : ৭ম : পৃষ্ঠা-৩৮১]
৩. http://fatwa.islamweb.net/fatwa index.php page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=56931

Comments

Popular posts from this blog

মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে অজানা তথ্য জানুন

 মনোবিজ্ঞান বা মানুষের মনের গবেষণাঃ আমরা প্রতিদিন অনেক ধরণের কাজ করি। চেতন কিংবা অবচেতন মনে আমরা অনেক কাজ করে ফেলি কিংবা করতে পছন্দ করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কিন্তু জানিনা এই কাজগুলো আমরা কেন করি! 'নিজেকে জানো' মতবাদ নিয়ে সক্রেটিস বেশ মুক্ত আলোচনা করেছিলেন। সারাজীবন তিনি ব্যয় করেছেন এই নিজেকে জানার মধ্যে। যদিও নিজেকে জানার জন্য সক্রেটিসের "নিজেকে জানো" পন্থাটি যথেষ্ট ছিলো, তবুও সত্যিকার অর্থে আমরা নিজের সম্পর্কে খুবই কম জানি। বেশ চাঞ্চল্যকর হলেও সত্যি যে, আমরা নিজের সম্পর্কে যা জানি, অন্যের সম্পর্কে তার চেয়েও বেশি জানি। অন্যের ভালো, খারাপ, প্রশংসা, নিন্দাসহ বেশ কিছু উপর্সগ কিংবা অনুসর্গ আমরা ধরতে পারলেও নিজের সম্পর্কে আমরা আসলে অনেক কিছুই জানিনা। মনোবিজ্ঞান নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে আমরা কীভাবে পৃথিবীকে উপলব্ধি করি এবং আমাদের আচরণকে কে নিয়ন্ত্রণ করি তার উত্তর জানার চেষ্টা করে আসছেন। বিজ্ঞানের এই পর্যায়ে এসে তারা বেশ সফল হয়েছেন এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অনেক কাজের কারণ তারা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। আজকের আলোচনায় আমরা বেশ কয়েকটি হিউম্যান বিহ্যাভিয়ার কিংবা মানুষের

(মা`আল মোস্তফা) বই পিডিএফ লিংক । সাড়া জাগানো সিরাত বিষয়ক বই।

পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু কথন https://roar.media/bangla/main/world/bridge-of-longest-bridge-in-the/amp

সেতু কথন ঃঃ পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের কতই না আগ্রহ। সমান আগ্রহ ছিল সেই যমুনা সেতু নিয়েও। একেকটি সেতু কেবল একেকটি জনপদকেই যুক্ত করে না, সহজ করে জীবনকে, বাঁচিয়ে দেয় মহামূল্যবান সময়। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংযুক্তির ব্যাপার তো থাকছেই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যমুনা ব্রিজ। চার কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের এই সেতু আমাদের অনেক অর্জনের, অনেক পাওয়ার। সূর্যাস্তে যমুনা সেতু; Image Credit: Asif Quazi অন্যদিকে, বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুও নির্মিত হচ্ছে পালে তিরতির হাওয়া লাগার গতিতে। একটু একটু করে নাম লেখাচ্ছে নতুন অর্জনের খাতায়। সফলভাবে পদ্মা সেতু তৈরি হলে যমুনা সেতুর জন্য একটু খারাপ খবরই বটে। কারণ তার নাম চলে যাবে দ্বিতীয় অবস্থানে। সোয়া ছয় কিলোমিটারের পদ্মা সেতু হয়ে যাবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। বিশ্বজুড়ে সেতু হলো নির্মাণের অন্যতম একটি শিল্পকলা। এসব স্থাপনা মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলে। হাজার হাজার বছর ধরে এই ধরনের স্থাপনা এক ভূখণ্ড থেকে আরেক ভূখণ্ডের মানুষকে সংযুক্ত করে চলেছে। স্থাপত্যবিদ্যার আশীর্বাদ ও প্রযুক্তির কল্যাণে নিত্যনতুন স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে বটে, কিন্তু নির্মাণ