কোরআন মহান আল্লাহর বাণী তার প্রমাণ:ইসলামে অবিশ্বাসীদের নিকট জিজ্ঞাসা – এ কোরআন কি বর্বর অশিক্ষিত জাতির নিরক্ষর নবী দ্বারা রচিত হওয়া সম্ভব ? আপনাদের মুক্তমনা বিবেক কি বলে ?
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
ﻭَﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﻳْﺐٍ ﻣِّﻤَّﺎ ﻧَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰٰ ﻋَﺒْﺪِﻧَﺎ ﻓَﺄْﺗُﻮﺍ ﺑِﺴُﻮﺭَﺓٍ ﻣِّﻦ ﻣِّﺜْﻠِﻪِ ﻭَﺍﺩْﻋُﻮﺍ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ [ ٢: ٢٣ ]
ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢْ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﻭَﻟَﻦ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻭَﻗُﻮﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُۖ ﺃُﻋِﺪَّﺕْ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ
[ ٢: ٢٤ ]
“আমি আমার বন্দার প্রতি যাহা অবতীর্ন করেছি, তাহাতে তোমাদের বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ থাকলে, তোমরা ইহার অনুরুপ কোন সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি সত্যবাদি হও তাহলে আল্লাহ ব্যাতিত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে নিয়ে আস। যদি আনয়ন না কর তবে সেই আগুনকে ভয় কর কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হয়েছে। (সূরা বাকারা:২৩, ২৪)।
এটা এমন এক বিষ্ময়কর কথা, যা মানব ইতিহাসে কোন গ্রন্থকারই নিজের বইয়ের পক্ষে দাবি করেন নি এবং জ্ঞানবুদ্ধি থাকা অবস্থায় কোন মানুষই এমন সাহস করতে পারবেন না যে, সে কোরআনের মত একটা বই লিখে ফেলেছে।
কোরআনের এই চ্যালেঞ্জ চলে আসছে সেই কোরআন নাযিলের সময় থেকে। শত শত লোক, শত শত সংগঠন এই চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা করতে এগিয়ে এসেছে। চরমভাবে ব্যার্থ হয়ে সম্পূর্ণ নিরাস হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের সাবাইকেই।
দুটি ঘটনা :
১. লবিদ বিন রাবিয়া। তৎকালীন আরবের শেষ্ঠ কবি। তার শক্তিশালী ভাষা আর তেজোদিপ্ত ভাব তাকে সারা আরবে পরিচিত করে তুলেছিল। উনি যখন কোরআনের এই চ্যালেঞ্জের কথা জানলেন তখন জবাবে একটি কবিতা রচনা করে কাবা শরীফের চৌকাঠের উপর ঝুলিয়ে রাখলেন। পরে একজন মুসলমান কোরআনের একটি সূরা লিখে ঐ কিতাবের পাশে ঝুলিয়ে দেন।
লবিদ পরের দিন কাবার দরজায় এলেন এবং ঐ সূরা পাঠ করলেন। অত:পর বললেন, “নি:সন্দেহে এটা মানুষের কথা নয় এবং আমি এর উপর ইমান আনলাম” অত:পর তিনি প্রকাশ্য কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। তিনি কোরআনের ভাব আর ভাষায এতো বেশী প্রভাবান্নিত হন যে, পরবর্তীতে তিনি আর কোনদিন কোন কবিতাই রচনা করেন নি।
২. দ্বিতীয় ঘটনাটি হল ইবনে মুকাফ্ফা এর। যা ঘটে কোরআন নাযিলের প্রায ১০০ বছর পর। এই ঘটনা প্রথমটির চাইতেও চাঞ্চল্যকর। এই ঘটনা সম্বন্ধে প্রাচ্যবিদ Wollaston বলেন “That Muhammad is boast as to the literary excellence of Quran was not unfounded is further evidence by a circumstance which occurred about a century after the establishment of Islam”
ঘটনাটি এরকম, ধর্মবিরোধীদের একটি সংগঠন সিদ্ধান্ত নিল ওরা কোরআনের অনুরুপ একটি বই লিখবে। এই লক্ষে ওরা ইবনে মুকাফ্ফার (মৃত্যু-৭২৭ খৃ:) কাছে এলো। যিনি ছিলেন ঐ সময়ের সবথেকে জ্ঞানী, প্রখ্যাতি সাহিত্যিক এবং বিষ্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তিনি তার নিজের কাজের উপর এতো বেশী আস্থাবান ছিলেন যে উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে যান। এবং বলেন এক বছরের মধ্যে তিনি কাজটি করে দিবেন। শর্ত ছিল এই এক বছরকাল সময়টা যাতে তিনি পুরোপুরি মনোযোগের সাথে সূরা রচনা চালিয়ে যেতে পারেন এ জন্য তার যাবতীয় সাংসারিক আর অর্থনৈতিক কাজের দায়িত্ব সংগঠনটিকে নিতে হবে।
ছ’মাস পেরিয়ে গেলে সঙ্গিরা কি পরিমান কাজ হয়েছে জানার জন্য তার কাছে এলো। তারা দেখতে পেল বিখ্যাত ঐ ইরানী সাহিত্যিক অত্যন্ত ধ্যানমগ্ন অবস্থায় হাতে একটি কলম নিয়ে বসে আছেন; তার সামনে রয়েছে একটি সাদা কাগজ এবং কক্ষের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিড়েফারা কাগজের স্তুপ। অসীম প্রতিভাধর, যাদুকরী ভাষার অধিকারী ঐ ব্যাক্তি আপন সর্বশক্তি ব্যায় করে ছয়মাস চেষ্টা করে কোরআন তো দূরের পথ একটি আয়াতও রচনা করে উপস্থাপন করতে পারেন নি।
যা হোক শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত লজ্জিত ও নৈরাশ্যমনে তিনি কাজে ইস্তফা দেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল কোরআন নাযিলের ১০০ বছর পর। কুরআনের ঐ চ্যালেঞ্জ কত শতাব্দি পেরিয়ে গেছে আজো বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জ থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।
সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না পৃথিবীর তাবত তাগুতি শক্তি কিভাবে পরাজিত হয়ে আছে কোরআনের কাছে ?
কোরআন নাজিলের সময় বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতি :
সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল হয়। মানুষ তখন পযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল। তখন মানুষ মহাবিশ্ব, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানতো না। এই যেমন-
সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,
১. পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।
২. পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে। অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা স্তম্ভ।
৩. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল বিশাল পাহাড় আছে।
৪. মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের পেটে বড় হয়।
৫. বাচ্চার লিঙের জন্য মা দায়ি।
৬. গাছের লিঙ্গ নেই।
৭. কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।
৮. ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের সাথে রিলেটেড আয়াতের সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি। অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা গেছে, তা কোরআনের সাথে মিলে গেছে। এরকমই কয়েকটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করা যাক।
১। আকাশের খুটি :
সেই সময়ে নাযিল হওয়া কোরআনে লেখা হল- আকাশের কোন দৃশ্যমান খুটি নেই। “তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা রাদ:২)
আমাদের বিজ্ঞান আজ জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি! আর কোরআনও বলে দিচ্ছে একই কথা।
২। মহাবিশ্বের আদি অবস্থা :
আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্ব গ্যালাক্সিগুলো তৈরী হওয়ার পূর্বে সব পদার্থগুলো গ্যাসিয় অবস্থায় একত্রে ছিল।চলুন দেখি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এ বিষয়ে কি বলে- পৃথিবী সৃষ্টি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে- “অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুমৃকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল স্বেচ্ছায় আসলাম।” (সূরা হামিম আস সিজদাহ : ১১)।
কিভাবে এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কোরআনে এলো!
৩। মহাবিশ্বের প্রসারনশীলতা :
“আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী” (সূরা জারিয়াত : ৪৭)
মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা এই কিছুদিন আগে প্রমাতি হয়েছে। বিজ্ঞানী আরভিন সর্বপ্রথম আলোর লোহিত অপসারন পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন এ বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সিগুলো একটার থেকে আরেকটা দূরে সরে যাচ্ছে।
মুহাম্মদ (স এর কাছে কি শক্তিশালী কোন টেলিস্কোপ ছিলো, যা দিয়ে উনি গ্যালাক্সিগুলোর সরে যাওয়া দেখেছিলেন ?
৪। বিগ ব্যাং থিওরি :
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম” (আম্বিয়া:৩০)।
আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে পরিস্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময় একজায়গায় পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের জন্ম হয়।
আজকের বিজ্ঞান কি বলে এ সম্বন্ধে ? ষ্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যাং থিওরী আজ সর্বময় স্বীকৃত। এ থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য অদৃশ্য গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা বিশাল বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এরা চারিদেকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিভাবে মরুভুমির বুকে সংকলিত দেড় হাজার বছর আগের একটি বই এ এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা ধারণ করতে পারল ?
ড:মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সএর নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
ড:মিলার বলেছেন, দেড় হাজার বছর আগে ইসলামের নবীর পক্ষে কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেন নি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক বিষয়, যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে এই আয়াতে সেই বিগ ব্যাং এর কথাই বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে।এই বিগ ব্যাং থিওরীর একটা অনুসিদ্ধান্ত হল “অনবরত দূরে সরে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রগুলো একসময় আবার কাছাকাছি আসা শুরু করবে কেন্দ্রবিমুখী বল শুন্য হয়ে যাওয়ার ফলে এবং সময়ের ব্যাবধানে সব গ্রহ নক্ষত্র আবার একত্রে মিলিত হয়ে একটা পিন্ডে পরিনত হবে”।
“সেই দিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর” (সূরা আম্বিয়া : ১০৪)
কি কিছু বুঝা গেল ? এই হল কোরআন———–!
৬। কে স্থির আর কে গতিশীল :
টলেমী বিশ্বাস করতেন থিওরী অফ জিওছেনট্রিজম এ। আর মতবাদটি হল- পৃথিবী একদম স্থির, আর সূর্য সহ সব গ্রহ নক্ষত্রগুলো ঘুরছে পৃথিবীর চারিদেকে। এ মতবাদটি ষোরস শতাব্দি পর্যন্ত বিজ্ঞান হিসেবে টিকে ছিলো। এরপর কোপার্নিকাস এসে প্রমাণ করলেন, পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের চারিদেকে প্রদক্ষিণ করছে। মাত্র ২৫ বছর আগেও বিজ্ঞান মানুষকে জানাচ্ছিল সূর্য স্থির থাকে, এটি তার নিজ অক্ষের চারপাসে প্রদক্ষিন করে না।কিন্তু আজ এটা প্রমানীত যে পৃথিবী ও সূর্য দুটোই গতিশীল। আর এদের দুজনের রয়েছে আলাদা কক্ষপথ। চলুন দেথি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এই ব্যাপারে কি বলে !
“তিনিই একজন যিনি নিদ ও রাত সৃষ্টি করেছেন, সুর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে। (সূরা আম্বিয়া:৩৩)
“এবং সূর্য তার নিজস্ব পথে চলছ যা সর্বশক্তিমানেরই আয়ত্বে। তিনিই সব জানেন।”(সূরা ইয়াসিন:৩৮)
এই কিছুদিন আগে প্রমাণিত হয়েছে যে, সূর্যও স্থির নয় বরং গতিশীল এবং ২০ লক্ষ বছরে একবার ওর নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে। আর এর গতি ৭২০০০০ কিমি/ঘন্টা।
“আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা পরিপূর্ণ”(সূরা জারিয়াত:৭)
এটা প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্বের অন্য তারকারাজিও স্থির নয় বরং গতিশীল। যার সাথে আধুনিক বিজ্ঞান একাত্বতা ঘোষণা করেছে।
৭। ব্লাক হোলস :
“আমি শপথ করছি সেই জায়গার যেখানে তারকারাজি পতিত হয়। নিশ্চই এটা একটা মহাসত্য, যদি তোমরা তা জানতে।” (সূরা ওয়াক্বিয়া : ৭৫, ৭৬)
৭৫ নং আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, মহাবিশ্বে এমন জায়গা আছে, যেখানে তারকা পতিত হয়। ঠিক পরের আয়াতেই এটাকে, মহাসত্য বলে দাবি করা হয়েছে। মহাকাশে এরকম স্থান আছে, এটা মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই জায়গাগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ব্লাক হোলস। এগুলোতে শুধু নক্ষত্র নয়, যে কোন কিছুই এর কাছাকাছি এলে, এখানে পতিত হতে বাধ্য।
৮। নিরাপত্তার ছাদ :
“আমরা আকাশে একটি সংরক্ষিত ও নিরাপত্তার ছাদ বানিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া : ৩২)।
আয়াতটি বলছে আকাশে এমন কিছু আছে যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা দেয়।
১.আমাদের পৃথিবীল বায়ুমন্ডলের উপরিভাগ কোটি উল্কাপাত থেকে হামেশা রক্ষা করছে। এটা এমন কিছু যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা দেয়।
২. বায়ুমন্ডলের একেবারে উপরিভাগে ভ্যান-এলেন-বেল্ট নামের একটি অতিরিক্ত স্তর রয়েছে। এই স্তরটি প্রায় ৬০,০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই স্তর শুধুমাত্র সেই সমস্ত রশ্মিই পৃথিবীতে আসতে দেয় যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটা সত্যি বিষ্ময়কর যে শুধু রেডিও ওয়েভ বা আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর মত ক্ষতিকর রশ্মিগুলোই পৃথিবীতে আসতে পারে না। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। একইসাথে এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর কসমিক রে কে পৃথিবীকে আসতে বাধা দেয়। অতিরিক্ত কম ঘনত্বের কারণে, এই স্তরটি আয়োনিত বা প্লাজমা অবস্থায় আছে। এই প্লাজমা মেঘ প্রায় ১০০ বিলিয়ন আনবিক বোমার (হিরোসিমায় মাত্র ১ টা ফেলা হয়েছিল) সমান পরিমান ক্ষতিকর শক্তি বিশিষ্ট রশ্মিকে আটকিয়ে দিতে পারে!
৩. আবার এই স্তর পৃথিবীকে মহাকাশের অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে, যা মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (স কি করে জানলেন, পৃথিবীর উপরের এই সংরক্ষিত আর নিরাপত্তার ছাদের কথা ? তার এই তথ্যের উৎস কোথায় ?
৯। আকাশের চক্রশীলতা বা পর্যায়বৃত্ততা :
“শপথ চক্রশীল আকাশের এবং বিদারণশীল পৃথিবীর”। (সূরা তারিক:১১-১২)
আমাদের বায়ুমন্ডল সাতটি স্তরে বিভক্ত। পত্যেকটি স্তর কিছু ভিন্ন চক্র সম্পূর্ণ করতে কাজ করে। এই যেমন-
ট্রপোস্ফিয়ার : তের থেকে পনের কিলোমিটার উর্দ্ধে অবস্তিত। বায়ু থেকে জলীয় বাস্পকে ঠান্ডা করে বৃষ্টির ফোটা তৈরী করে। এভাবে পানিকে আবার পৃথিবীতে পাঠাতে সাহায্য করে। এভাবে পানি চক্র পূর্ণতা পায়। এই স্তর না থাকলে পৃথিবী সম্পূর্ণ শুস্ক ও অন্ধকার থাকতো।
ওযোন স্তর : ২৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ও রেডিও রশ্মি থেকে পৃথিবীকে বাচতে সাহায্য করে। এই রশ্মিগুলোকে পুনরায় মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়।
আয়নোস্ফিয়ার : পৃথিবী হেত পাঠানো বিভিন্ন রেডিও ওয়েভ আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠাতে সাহায্য করে। যা দ্বারা রেডিও ও টেলিভিশন সিস্টেম কাজ করছে।
…………………………………………বাকীগুলো আর লিখলাম না।
১০। সাত আসমান :
“তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন, যা কিছু যমিনে রয়েচে সেই সমস্ত, অতপর তিনি মনোযোগ দিয়েচেন আকাশের প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত”। (সূলা বাকারাহ:২৯)
আমাদের মাথার উপরের আকাশ অর্থাৎ বায়ুমন্ডল সাতটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই কিছুদিন আগে বিংশ শতাব্দির আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা ইহা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানীত হয়েছে। কোরআনে দেড় হাজার বাছর আগে এই সাতটি স্তরের কথাই এভাবে বলেছে!খুবই বিষ্ময়কর।
এই সাতটি স্তরের নামগুলো এরকম- ট্রাপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, ওযনোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার, আয়নোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিযার।
১১। ভূমির সাতটি স্তর :
“তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং পৃথিবী সেই একই পরিমানে”। (সূরা তারেক:১২)
আয়াতটি আমাদের কি বলছে ? আয়াতটি আমাদের বলছে শুধু আসমানই নয় বরং পৃথিবীরও সাতটি স্তর রয়েছে। মোহাম্মদ (স তখনকার দিনে কিভাবে একথা বলতে পারেন!যখন মানুষ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করাই শেখেনি ?
আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এর উপরিভাগ পর্যন্ত সাতটি স্তর রয়েছে। গঠনগত এবং কার্যগত দিক থেকে একটার সাথে আরেকটার কোন মিলই নেই। এগুলো হল – Crust, 2. Lithosphere, 3. Upper mantle, 4. Asrenosphere, 5. Lower mantle, 6. Outer core, 7. Inner core. (Robart Gardner, Samuel F, Allyn and Bacon, Newton, Howe: General science-1885 Page-319-322)
১২। চাদের আলো কার আলো ? :
“আল্লাহ তায়ালাই এই সূর্যকে করিয়াছেন তেজস্কর আর চন্দ্রকে করিয়াছেন পিতিবিম্বিত আলো”। (সূরা ইউনুস:৫)
“কত কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করিয়াছেন রাসিচক্র এবং উহাতে স্থাপন করিয়াছেন প্রদীপ এবং চাদ-যাহার রহিয়াছে ধার কার আলো”। (সূলা ফুরকান:৬১)
চাদের আলো যে প্রতিবিম্বিত আলো অন্য কথায় ধার করা আলো একথাটা দেড় হাজার বছর আগের একটা বইয়ে আসাটা খুবই স্বাভাবিক, যদি সে বইটা হয় এমন এক মহাসত্বার কাছ থেকে যিনি সাময়িক জাগতীক ধ্যান-ধারণার অনেক উর্ধে। সুবহানাল্লাহ। বিজ্ঞান সুস্পষ্ট কোরআনের সাথে এখন একমত।
১৩। থিওরী অফ রিলেটিভিটি :
রিলেটিভিটি থিওরী মতে আমাদের দৃশ্যমান সময়ের পরিমান, আমাদের নিজেদের আপেক্ষিক বেগের উপর নির্ভর করে। সহজ কথায় সময়ের পরিমাণ বেগের সাথে পরিবর্তনশীল। আইনস্টাইনের আগে কোন বিজ্ঞানী আমাদেরকে এই বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন নি। মানুষ তখন সময়কে একটা ধ্রুব রাসি হিসেবে বিবেচনা করতো। আথচ দেড় হাজার বছর আগের কোরআনে আছে আমরা যে সময়কে বাস্তবে বিবেচনা করতে পারি, সেই সময়ই অন্য একটি ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
“ফেরেশতারা আর রুহেরা আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হয়, এমন একদিনে যাহার পরিমান একহাজার বছরের সমান।” (সূরা মায়ারিজ:৪)
“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কার্য পরিচালনা করেন, অত:পর তা তার কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যাহার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান”। (সূরা সেজদাহ:৫)
সময়ের পরিমান ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন হয়, এই কথাটা থিওরী অফ রিলেটিভিটি যতটা পরিস্কারভাবে বলেছে, তার থেকেও বেশি পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে এই আয়াতদুটিতে। ভুলে গেলে চলবেনা, থিওরীটি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক শতাব্দি আগে!
১৪। পর্বতের গঠন ও কাজ :
“আমি কি করিনি ভূমিকে বিস্তৃত এবং পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে” (সূরা নাবা:৬,৭)।
আয়াতটি বলছে পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে তৈরী করা হয়েছে।
পেরেকের কাজ হলো দুই বা ততোধিক কাষ্ঠখন্ডকে এমনভাবে জোরা লাগানো, যাতে সংযুক্ত বস্তুটিকে নাড়াচড়া করে হলেও খুলে না যায়।
আমরা যে বিস্তির্ণ ভূমির উপর বিচরণ করি, তা মূলত একধরনের পাতলা প্লেট। এদেরকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। পৃথিবীর ঘুর্ণনের ফলে এই প্লেটগুলো সদা নড়াচড়া করে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিয়েছে, দুই বা ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর আরেকটি চলমান হয়, অথবা ধাক্কা খায়, তখন এদের মিলনস্থলে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। এই পাহাড় ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের অংশে অনেকগুন পরিমানে ভূমির নিচে দেবে যায়। অনেকটা ভাজ সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়। অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা পেরেকের মত কাজ করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ একটা ভীষণ উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থে পূর্ণ। পেরেকের আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে, পৃথিবীর ঘুর্ননের কারনে, হয়তো কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ঐ অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের হয়ে আসার সুজোগ করে দিতো। ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো।
যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার সবচেয়ে উচু মাথা ভূমির প্রায় ৯ মাইল উপরে উঠেছে। ঠিক একই জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির নীচে পৌছে গেছে ১২৫ কিমি পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে আমরা বিবেচনা করি, তাহলে একে দেখতে মনে হবে-দৈত্যাকার এক পেরেকের মত!
আর কোরআন চমৎকার ভাবে বলে দিয়েছে একথাটাই দেড় হাজার বছর আগে। আচ্ছা মুহাম্মদ (স কি পৃথিবী ঘুড়ে পর্বতগুলোর নিচে কি রকম তা দেখেছিলেন ?
১৫। পর্বতমালার অবস্থান :
“তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর (আসলে সেগুলো সচল), অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত সচল হবে। এটা আল্লাহর কারিগরি যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংগত। তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা অবগত।” (সূরা নামল:৮৮)
১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সোসাইটি (ওয়াশিংটন ডিসি) প্রমাণ করে যে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে পাহাড়গুলোও সম্পূর্ণ স্থির নয় বরং প্রতি বছর ২-৫ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে। যদিও এদের কার্যক্রম পেরেকের মতই। আর আমরা পাহারকে স্থির মনে করে যে একটা ভুলের মধ্যে আছি. একথাটাই কোরআন বলেছে কাব্যিকভাবে।
১৬। লোহার রহস্য :
আমি লৌহ নাযিল করেছি, যার মাঝে অনেক শক্তি রয়েছে এবং যা মানবজাতির অনেক ব্যবহারে আসবে।” (সূরা হাদীদ:২৫)
বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে, আমাদের সৌরজগতের কোন গঠন প্রনালী নেই যা লোহার উৎপত্তি ঘটাতে পারে। লোহা কেবলমাত্র সূর্যের চেয়ে বড় কোন নক্ষত্রেই তৈরী হতে পারে যেখানে তাপমাত্রা কোটি ডিগ্রির কাছাকাছি। এ রকম কোন গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরনের মাধ্যমেই লোহার উৎপত্তি সম্ভব। আর এই ধরনের বিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট লোহার টুকরাগুলো পরবর্তিতে পৃথিবীতে পরার ফলেই লোহা অস্তিত্বলাভ করেছে।
অর্থাৎ লোহা যে আকাশ থেকে এসেছে এটা বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়, সুরা হাদিদ (হাদীদ অর্থ লোহা) কোরআনের ৫৭ নং সূরা। আজব ব্যাপারটা হলো ‘আলহাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থও ৫৭, অর্থাৎ আরবীতে এই শব্দের মান হল ৫৭।
শুধু ‘হাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থ হল ২৬, যা লোহার এটমিক নাম্বার (২৬) এর সাথে মিলে যাচ্ছে। আর সূরাটির ১ থেকে ২৫ নং আয়াত (২৫ নং আয়াতে লোহার গুন সম্বন্ধে বলা হয়েছে) পর্যন্ত হাদিদ শব্দটি এসেছে ২৬ বার। (হা=৮, দাল=৪, ইয়া=১০, দাল=৪)।
১৭। পেট্রোলিয়ামের সৃষ্টি :
“তিনি তৃনাদি বের করে এনেছেন, অত:পর তিনিই তাদের পরিনত করেন কাল বন্যার পানির মত” (সুরা আলা:৪,৫)
গাছ-গাছরা, ফার্ন, শ্যাওলা এসব অরগ্যানিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে একটা দীর্ঘ পদ্ধতির মাধ্যামে শেসে পেট্রোলিয়াম (খনিজ তেল) এর রূপ নেয়। খনিতে পদার্থটি অনেকটা বন্যার পানির মত গার থাকে, একই সাথে এটির রং থাকে কালোবর্ণের। যদিও মানুষ পেট্রোলিয়ামের ব্যাবহার শিখেছে অনেক আগে, কিন্তু তারা জানতো না কি থেকে এই পদার্থটি পৃথিবীতে তৈরী হয়েছিল।
কোরআন উক্ত আয়াতে একটি তরলের কথা বুঝিয়েছে, যা পেট্রোলিয়ামের বৈশিষ্টের সাথে মিলে যায়। এভাবে-
১. এটি তৈরী হয় তৃনাদি থেকে। অর্থাৎ অরগ্যানিক ম্যাটারিয়াল থেকে।
২. এটির রং কাল হবে, আর এটি বন্যার পানির মত তরল হবে।
কোরআন হাজার বছর আগে বলে দিয়েছে পেট্রোলিয়াম তৈরী হয়েছে গাছ-গাছড়া থেকে। আজ এটা বৈজ্ঞাকি সত্য।
১৮। বাতাশ ও বৃষ্টির সম্পর্ক :
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ুকে চালিত করে আকাশের কছে নিয়ে যাই, অত:পর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদের তা পান করাই। বস্তুত তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই” (সূরা হিজর:২২)
বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকেও মানুষের ধারনা ছিল যে, বৃষ্টির সাথে বাতাসের সম্পর্ক হল, বাতাস মেঘকে চালিত করে দূরে নিয়ে যায়, ফলে বৃষ্টি সমভাবে হয়। বাতাসের মাধ্যমেই যে জলিয়বাস্প উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে, এ সম্পর্কে মানুষ জানত না।
বৃষ্টিভর্গ বায়ু বলতে জলিয়বস্পপূর্ণ বায়ু বুঝানো হয়েছে। “বাতাস জলিয়বাস্পকে আকাশে উড়িয়ে নেয়, অত:পর মেঘ সৃষ্টি হয়” একথা এই আয়াতে। বাতাসের ভুমিকা না থাকলে সূর্য যতই তাপ দিক না কেনো জলিয়বাস্প কখনোই আকাশে পৌছতেই পারতো না, মেঘ হওয়া তো দূরের কথা।
১৯। পরিমানমত বৃষ্টি :
“তিন সে যিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী পানি পৃথিবীতে বর্ষণ করেছেন। যা একটি মৃত জমিকেও জীবিত করতে পারে, ঠিক সেভাবে যেভাবে একদিন তোমরা জীবিত হবে” (সূরা যুখরাফ:১১)
প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬ কোটি পানি বাতাসের সাথে মিশে। যা বছরে পাচ হাজার তেরশ কোটি টন। এই পানির পুরোটাই আবার প্রতি বছর মাটিতে ফিরে আসে। যদি এই ফিরে আসাটা পরিমিত না হত তাহলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতো। যেমন পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হয়। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখার জন্য যা খুবি জরুরী। গবেষনায় দেখা গেছে যদি ঠিক এই পরিমাণ পানি বাতাশে না মিশে কিছু কম মিশতো, তাহলে মেরু অঞ্চলের জীববৈচিত্র নষ্ট হয়ে যেত। কারন মেরু অঞ্জলে বরফ স্তরের গভীরতা বেড়ে যেতো। যা গোটা পৃথিবীর জীববৈচিত্র রক্ষার সাথে সম্পর্কিত।
২০। সমুদ্রের পানির রহস্য :
“তিনি পাশাপশি দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, উভয়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।”(সূরা আর-রহমান:১৯-২০)
সমুদ্রের এই বৈশিষ্ট্য অতি সম্প্রতীককালে আবিষ্কৃত হয়েছে। সমুদ্রের সারফেস টেনসন এবং ঘনত্বের পার্থক্যের জন্য এক সমুদ্রের পানি অপরটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও মিশে যায় না। যেমন গালফ অফ মেক্সিকোতে এর হাজার হাজার মাইলব্যাপি লোনা আর মিষ্টি পানির সাগর পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও একটির পানি আরেকটির সাথে মিশে যায় না। কোরআন নাযিলের সময় মানুষের মাঝে পদার্থবিজ্ঞানের কোন জ্ঞান ছিল না আর মুহাম্মদ (স ছিলেন মরুভুমির মানুষ।
২১। সমুদ্র বিজ্ঞান :
সূরা নূরের ৩০ ও ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
“যারা কাফের তাদের কাজ মরুভুমির মরীচিকার মত, যাকে পিপাসার্ত ব্যাক্তি পানি মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, এরপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব নেন। অথবা (তাদের কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের মত, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের পর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই”
সমুদ্র বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের আলোর তিন থেকে ত্রিশ ভাগ সাগরে প্রতিফলিত হয়। তাই ২০০ মিটার গভীর সাগরে নীল রং ছাড়া আলোর সব রংই মিশে যায়। আগেকার দিনে মানুষ যন্ত্র না থাকায় ২০-২৫ মিটারের নীচে নামতে পারতো না। সাবমেরিনসহ নানা উন্নত সাজ সরাঞ্জাম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জেনেছেনে গভীর সাগরের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় দুই ধরনের ঢেউ সৃষ্টি হয়। উপরের ঢেউ ও ভিতরের ঢেউ। নিচের ঢেউ অন্ধকার হওয়ায় দেখা যায় না। ফলে কেউ হাত বের করলেও সেই হাত দেখতে পারবে না ।সাগর বিষয়ক জার্মান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্গারও মনে করতেন বিজ্ঞানের উন্নতির কারেনে ধর্মেল দরকার নেই। কিন্তু সূরা নূরের এ আয়াত শোনার পর তিনি বলেছেন, “এসব কথা কোন মানুষের কতা হতে পারে না, এ আয়াত ইসলামের অলৌকিকতার প্রমাণ।
২২। বাচ্চার লিংগ :
“তিনিই জোরা সৃষ্টি করেছেন, ছেলে অথবা মেয়ে, যা একফোটা বীর্য এর দ্বারাই নির্ধারিত”।
আধুনিক জীববিজ্ঞানের আবিস্কারের পূর্বে মানুষের ধারনা ছিল যে, ছেলে বা মেয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য মহিলাই দায়ি। কিন্তু কোরআনে দেড় হাজার বছর আগে বলা হয়েছে বাচ্চার লিংগ নির্ধারন হয় স্পার্ম দ্বারা। অর্থাৎ বাচ্চার লিংগ কি হবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে স্বামি বা পুরুষের উপর।
আর আজকে জেনেটিক আর বায়োলোজিকাল গবেষকগণ বহু পরিক্ষারিরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে, স্পার্ম সেলের মাধ্যমে লিংগ নিধার্রন হয় যা আসে পুরুষ হতে।
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে একথাটা কে জানতে পারে ?
২৩। গাছের লিংগ :
“তিনি প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।” (সুরা রাদ:৩)
“আর তিনি প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন, তা জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ হোক, কিংবা তারা স্বয়ং অথবা এমন সৃষ্টি হোক যার সম্বন্ধে তারা এখনো জানেই না।” (সূরা ইয়াসিন:৩৬)
জোড়া অর্থাৎ পুরুষ আর স্ত্রী লিঙ্গ। এই আয়াতটি আমাদের বলছে গাছপালারও লিঙ্গ রয়েছে। আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে গাছপালারও লিঙ্গ থাকে। পুরুষ গাছ এবং স্ত্রী গাছ। এমনকি উভলিঙ্গ গাছে পুরুষ এবং মাহিলা অংশ আলাদা অবস্থায় থাকে।
সর্বপ্রথম যে বিজ্ঞানী উদ্ভিদরে মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল লিনে। খৃষ্টিয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তার ওই বক্তব্যে অনেকেই বিষ্মিত হয় এবং তারা গীর্জার কর্মকর্তাদরেকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে কয়েক বছর ধরে ইউরোপে তার লেখনীকে ভূর মতামত হিসেবে ধরা হত। কিন্তু এর কিছু পরই বিজ্ঞানীরা লিনের মতামতকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেন এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক মূল নীতি হিসেবে গৃহিত হয়।
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে কে জানতো যে গাছেরও লিঙ্গ আছে ?
২৪। গাছের নি:শ্বাস-ফটোসিনথেসিস :
“শপথ সকালের যখন তারা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়”। (সূরা তাকভীর:১৮)।
ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার পূর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল। মানুষ ভাবতো এটা এমন কি হতে পারে যা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা, কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা। যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি মানুষকে জানালো এমন এক প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে গাছ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড কে শোষণ করার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে। একইসাথে অক্সিজেনকে পরিবেশ এ মুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের বেলাতেই ঘটে, যেহেতু আলো এখানে অনঘটক হিসেবে কাজ করে।
অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি গাছের উল্যেখ করে আয়াতটি নাজিল করেন নি। বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও কোরআন যে কালোত্তির্ন, এই বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।
২৫। জমাট রক্ত বা আলাক :
“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি মানুষকে তৈরী করেছেন জমাট রক্তপিন্ড(আলাক)থেকে”। (সূরা আলাক:১,২)
আলাক শব্দটির অর্থ আরবিতে জমাট রক্তপিন্ড, পরিস্কারকারি যন্ত্র, জোক। যে কোন একটি বা একাধিক অর্থ নিতে পারেন আপনার পর্যবেক্ষনের জন্য, যাই নেন না কেন, তা ভ্রুনের বৈশিষ্টের সাথে মিলে যাবে! শব্দটির ব্যাবহার এতটাই যৌক্তিক!
এটি কি খুবি আশ্চর্য নয় যে, মাতৃগর্ভাষয়ে একেবারে প্রথমদিকে জন্ম নেওয়া জাইগট বা জিগট দেখতে ঠিক জোকের মত, গর্ভের দেয়ালে ঝুলেও থকে ঠিক জোকের মত, এটা মায়ের দেহ থেকে খাবার নেয় অন্য কথায় মায়ের দেহ পরিস্কারের কাজ করে আর এটা জৈবিক গঠন ঠিক রক্তপিন্ডের মত?
শত শত বছর আগে নিশ্চয়ই মানুষ জানতো না জাইগোটের এই বৈশিষ্টগুলো!
২৬। আঙ্গুলের ছাপের ভিন্নতা :
“মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহকে একত্রিত করতে পারব না? বস্তুত আমি উহাদের অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত সুবিন্যস্ত করব”। (সূরা কিয়ামাহ: ৩,৪)
অর্থাৎ কারো আঙ্গুলের অগ্রভাগই অন্য কারো সাথে পুরোপুরি একই হবে না।
আজ প্রমানীত এ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। কারো ছাপই কারো সাতে মিলবে না। আর এ জন্যই এই ছাপ এখন ব্যবহার করা হয় পরিচয়পত্র হিসেবে। ১৯ শতকের পূর্বে মানুষ আঙ্গুলের ছাপকে শুধু কিছু ভাজ বলেই জানতো।
উল্লেখ্য আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন হয়, এটা ১৮৮০ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন।
২৭। পেশি ও হাড়ের গঠন :
কোরআনে বলা হয়েছে মাতৃগর্ভাষয়ে মাংশপেশী গঠিত হওয়ার আগই বাচ্চার হাড় গঠিত হয়।
“এর পর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাটরক্তবিন্দুতে পরিনত করেছি, অত:পর জমাট রক্তকে মাংষপিন্ডে অত:পর সেই পিন্ডকে হাড়-এ আর তারপর সে হাড়কে মাংসপেশী দ্বারা সজ্জিত করি। এবং এরপর তাকে একটি নতুন সৃষ্টিতে রুপান্তরিত করি, আল্লাহতায়ালার আর্শিবাদ দ্বারা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রূপে। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কত কল্যানময়।” (সূরা মুমিনুন:১২-১৪)
কিছুদিন পূর্বেও এম্ব্রয়লোজি জানতো যে, এম্ব্রয় এর হাড় ও মাংসপেশী একই সময়ে তৈরী হয়। এখন আধুনিক এমব্র্যয়লজি এভাবে দেয়া হয়েছে “সাত সপ্তাহের মদ্ধে কংকালের গঠন শেষ হয় এবং দেহের সবখানে ছড়িয়ে পরতে থাকে। এবং হাড় এর বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। অষ্টম সপ্তাহের দিকে মাংসপেশী গঠিত হতে থাকে যা হাড়ের চারপাশে অবস্থান নিতে থাকে।” Keith Moore (developing Human, 6 part)-1998
অর্থাৎ মানুষের জন্ম ঠিক সেভাবেই হয় যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে।
মার্কিন নাগরিক ও বিজ্ঞানী মার্শাল জনসন ভ্রুনতত্ত্ব সম্পর্কিত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভ্রণের বিকাশের পর্যায়গুলো সম্পর্কে কোরআনের এ বাস্তবতা আবিস্কার করা সম্ভব। কোরআন হল দেড় হাজার বছর আগের গ্রন্থ। সে সময় কোন মাইক্রোসকোপের অস্তিত্ব ছিল না। তখনও মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃতই হয়নি। কোরআন নাজিলের বহু বছর পরে যখন মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃত হল তখন ওই মাইক্রোস্কোপ কোন বস্তুকে ১০ গুণের বেশি বড় করতে পারতো না এবং স্বচ্ছতাও কম ছিল কাজেই কোরআনের বানী মানুষের হতে পারে না”
২৮। জন্মের তিন ধাপ :
“তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক (ধাপে ধাপে) ত্রিবিধ অন্ধকারে”। (সূরা যুমার:৬)
আধুনিক এমব্রয়লজি ও বিজ্ঞান জানিয়েছে গভাষয় তিনটি দেয়াল বা স্তর নিয়ে গঠিত। ১. ইন্টেরিয়ার এবডোমিনাল ওয়াল, ২. ইউটেরাইল ওয়াল, . এমনিওকার্ডিওনিক মেমব্রেন। ভ্রুনের বৃদ্ধি ব্যাখ্যা করতে কোরআনে বলা তিনটি অন্ধকার স্তর এবং বাস্তবে পাওয়া তিনটি স্তর মিলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, কারণ কোরআন সকল বিজ্ঞানের উর্দ্ধে। বিজ্ঞান ভুল করতে পারে কিন্তু কোরআন কালোত্তির্ন।
২৯। দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি: কোনটা আগে ?
“অত:পর তিনি তাতে রুহ সঞ্চার করেন, এবং তোমদের দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্ত:করণ, তোমরা সামা্ন্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”। (সূরা সেজদাহ : ০৯)।
“অত:পর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা ইনসান : ০২)।
অর্থাৎ কোরআন বলছে মানুষ আগে শ্রবণশক্তি আর তারপর দৃষ্টিশক্তি পায়। আসলে কি তাই? চলুন দেখি বিজ্ঞানীরা কি বলেন- গর্ভে পাচ মাস থাকার পর ভ্রুনের শ্রবন ইন্দ্রিয় তৈরী হয়। পরবর্তিতে সাত মাস থাকার পর ভ্রুনের চোখ তৈরী হয়।
কি ধ্রুব-বিজ্ঞানময় এই কোরআন!
৩০। পেইন রিসেপটর, ব্যাথাটা আসলে কোথায় লাগে ?
আগেকার দিনের ডাক্তাররা ভাবত শুধুমাত্র ব্রেণের কারণে, আমরা ব্যাথা অনুভব করি। এখন আমরা জানি চামড়ার নিচে কিছু রিসেপ্টর আছে যেগুলোকে বলা হয় পেইন রিসেপ্টর। এগুলোর কারনেই আমরা ব্যাথা অনুভব করতে পারি। এগুলো পুড়ে যাওয়ার পর ঐ পোড়াযায়গাতে খোচালেও মানুষ ব্যাথা অনুভব করে না ।
“যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করিবে তাহাদেরকে দোযখের অগ্নিতে দগ্ধ করিব, আর যখনি উহাদের চর্ম ঐ অগ্নিতে দগ্ধ হইবে তখনি উহার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করিয়া দিব, যাহাতে তাহারা শাস্তি ভোগ করিতে পারে।” (সূরা নিসা : ৫৬)।
এই আয়াত আমাদের বলছে আমাদের চামড়ায় একটা কিছু আছে যেটার কারণে আমরা ব্যাথা অনুভব করি। আর এই কারনে নতুন করে ব্যাথা দিতে গেলে নতুন চামড়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কি রহস্যময় বিজ্ঞান এই কোরআন!
৩১। পাখিদের গতিপথ :
“তাহারা কি উড়ন্ত পাখির দিকে লক্ষ করে না? যাহারা আকাশে শু্ন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রনাধিন। অন্য কেহই তাহাদের স্থির রাখে না, শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।” (সূরা নাহল:৭৯)।
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কার কি ? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে পাখিদের মাথায় উড়ে বেড়ানোর প্রোগ্রামিং করা আছে। আর এই কারনেই ছোট ছোট পাখি আগে কোনরকম অভিজ্ঞতা না থাকলেও হাজার হাজার মাইল উড়ে বেড়িয়ে আবার নিজ বাসায় ফিরে আসতে পারে। এই যেমন শীতকালে আমাদের দেশে সাইবেরিয়া থেকে এভারেষ্ট এর উপর দিযে উড়ে আসে অতিথী পাখিরা। শীত শেষে আবার চলে যায় নিজের বাসায়। এই বিশাল দুরুত্ব (মাত্র ৬৫০০ মাইল গড়ে) পরি দিতে ওদের কোন গাইড লাগে না! কে তাদরে মাথায় রাস্তা চেনার এই ক্ষমতা দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আ্ল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।”
কি আশ্চর্যকর এই কোরআন!
৩২। পিপিলিকার সমাজ :
“সোলায়মানের সম্মুখে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বীন, মানুষ ও পক্ষিকুলকে। অত:পর তাদরেকে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যষিত উপত্যকায় পৌছল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সোলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদরে পিষ্ট করে ফেলবে”( সূরা নামল: ১৭,১৮)।
কি ভাবছেন ? কোরআনে এসব রুপকথার গল্প লিখা হয়েছে কেন ?
হে বিজ্ঞানপ্রেমী, এগুলো এখন আর রুপকথা নয়! আপনার বিজ্ঞান ঘোষনা করে দিয়েছে, মানুষের সাথে সামাজিক কাঠামোয় সবথেকে মিল যে পাণীর সেটা পিপীলিকা। ওরা আরো জানিয়েছে পিপীলিকারা নাকি ওদের মৃহদেহ কবর দেয়, ওদের সমাজের কাজ নাকি ভাগ করে করে, ওদের নাকি আছে ম্যানেজার, সুপারভাইজার, শ্রমিক ইত্যাদি ব্যাবস্থা! ওরা নাকি ভবিষ্যত চিন্তা করে মানুষের মত খাদ্য মজুদ করে, আরো অবাক করা কথা কি জানেন, ওদের মজুদকৃত শষ্যদানায় যদি কুড়ি গজায় তো ওরা কুড়িগুলো কেটে ফেলে, যেন ওরা জানে, এই কুড়িগুলো ওদের শষ্যকে নষ্ট করে দিবে। আর কোনভাবে শষ্যদানাগুলো ভিযে গেলে, ওরা ওগুলো বাইরে এনে শুকাতে দেয়। যেনো ওরা জানে, এগুলো না শুকালে শষ্যগুলো পচে যাবে!
পিপীলিকাদের এই উন্নত প্রকৃতি সম্বন্ধে বিজ্ঞান আমাদরে জানালো এই কিছুদিন আগে। আর কোরআন জানিয়েছে ——-১৪০০ বছর আগে!
৩৩। পাখিরা কথা বলে ?
“সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হলো, সে বলল, হে মানুষরা আমাদের উড়ন্ত পক্ষিদের ভাষা পর্যন্ত শিখানো হয়েছে।”(সূরা নামল:১৬)
কোরআন এখানে পাখিদের ভাষার কথা বলছে, যা শিথানো হয়েছিল সুলায়মান (আ কে ।পাখিরা কি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারে ?
চলুন দেখি বিজ্ঞান কি বলে। মারিয়া লুইসা ডা সিলভা কর্তৃক ব্রাজিলিয়ান হামিং বার্ড এর উপর দীর্ঘ এক গবেষণার পর এর ফলাফল বিখ্যাত সাইন্স ম্যাগাজিন “ন্যাচার” এ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়-হার্মিং বার্ড এর কন্ঠনি:সৃত শব্দগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, যেগুলো অন্য হার্মিং বার্ডকে নির্দিষ্ট কাজ করতে উৎসাহিত করে। এরা নিজেদের মধ্যে শব্দ বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।
কাকের উপর গবেষণার একটি ফলাফল এরকম- এরা কয়েকশত প্রকারের বিভিন্ন সাউন্ড তৈরী করতে পারে, যেগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, একটি কলোনির সকল কাকাকে সতর্ক করতে, কোন কলোনির কাকাদরকে এক জায়গায় একত্রিত করতে, নিজেদের দুরবস্থার কাথা অন্যকে জানাতে——এর নির্দিষ্ট ধরনের সাউন্ড তৈরী করে থাকে। এমনকি এরা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রয়োগ ঘটিয়েও অন্য কাককে তা মনের কথা জানাতে পারে।
এ রকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে।
৩৪। মধুর ওষুধীগুন :
“মৌমাছির উদর হইতে নির্গত হয় বিবিধ বণের পানীয়, যাহাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য” (সূরা নাহল:৬৮, ৬৯)
আমারা আগে জানতাম মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফুল থেকে অত:পর তা মৌচাকে মজুদ করে রাকে সরাসরি। আসলে তা নয়, বিজ্ঞান কিছুদিন আগে প্রমাণ করেছে মৌমাছির শরীর থেকে মধু বের হয়। কোরআন দ্বারা যা প্রমাণিত।
কোরআন আরো বলেছে মধুর ওষুধীগুনের কথা। আজ আমরা জেনেছি মধুর মদ্ধে রয়েছে প্রচুর ধাদ্যগুন। আছে প্রচুর ভিটামিন কে আর ফ্রুক্টোজ। আরো আছে মাঝারি এন্টিসেপ্টিক গুন। কেটে যাওয়া যায়গায় মধু লাগিয়ে রাখলে কোনরকম ইফেকশান হয়না।
৩৫। সূরা নাহল ও কর্মি মৌমাছির লিঙ্গ :
কোরআনে মৌমাছিকে নিয়ে একটি সূরা আছে। এটি হল সূরা নাহল, নাহল শব্দটির অর্থ মৌমাছি।
ক. এই সূরাটির অবস্থান কোরআনের ১৬ নাম্বার স্থানে।
খ. খুব সম্প্রতি বিজ্ঞান জানিয়েছে, পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোসোম সংখ্যা ১৬! ইস্ত্রী মৌমাছির ৩২ । ১৬*২=৩২ ।এভাবে মিলে যেতে হবে ?
গ. আবার সুরাটিতে আয়াত আছে ১২৮ টা। ১৬*৮=১২৮।
ঘ. এই সূরার ৬৮ নং আয়াতে প্রথম নাহল বা মৌমাছি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এই আয়াতটিতে ১৩টি শব্দ আছে। সূরাটির একেবারে প্রথম শব্দ থেকে গুনে গুনে এই নাহল শব্দটি পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৮৮৪। তো কি হয়েছে ? ৬৮ নং আয়াতে ১৩ টা শব্দ থাকতেই পারে আর সর্বপ্রথম নাহল শব্দটিও থাকতেই পারে, এটার গুরুত্ব কি আছে! আছে বৈ কি, কারণ ১৩*৬৮=৮৮৪ হয় যে!!!
কি অস্বাভাবিক গানিতীক অবস্থান এই কোরআন মেনে চলে!!!
এই সূরার ৬৮ এবং ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে কর্মি মৌমাছির কথা। ওখানে কর্মী মৌমাছিকে বলা হয়েছে”কুল্লিঅফাছলুক”। এই শব্দটির অর্থ স্ত্রী মৌমাছি ।অর্থাৎ কোরআন কমী মৌমাছিদেরকে বলেছে মেয়ে মৌমাছি।
“আর তোমর প্রভু নারী মৌমাছিকে বললেন, তোমাদের বাসস্থা বানাও। পাহারে, বৃক্ষে আর মানুষের গৃহে” (সূরা নাহল:৬৮)।
আগে আমরা জানতাম কর্মী মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি। আজ আমরা জেনেছি কর্মী মৌমাছিদের আসলে কোন রাজা নেই আেছে রাণী আর কর্মী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি। কোরআন দেড় হাজার বছর আগে মৌমাছির লিঙ্গ সনাক্ত করেছিল ?
৩৬। কিছু রহস্যময় আয়াত :
১. ইলেকট্রিক বাল্ব : ” আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের নূর। তার নূরের উদাহরণ যেন এক কুলঙ্গি, যাতে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপিট একটি কাচপাত্রে আবদ্ধ। কাচপাত্রটি নাশপতি ফল বা পৃথিবীর আকৃতির। যাকে প্রজ্জলিত করা হয়, পবিত্র বৃক্ষের তেল দ্বারা, যা পূর্বমূখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। যার তেল আলোর ঠিক নিকটে থাকে, যদিও অগ্নি উহাকে স্পর্শ করতে পারে না। জ্যোতির উপরে জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথ দেখান তার জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (নূর:৩৫)
কার সাথে তুলনা করেছেন মহান আল্লাহ এই আয়াতে ? এটা কি আধুনিক যুগের ইলেকট্রিক বাল্ব নয় ? যা দেখতে পৃথিবীর মতই গোলাকার, কাচপাত্রে আবদ্ধ, যার তেল হচ্ছে ইলেকট্রন কনা, যার আলো সমভাবে ব্যাপ্ত হয় (কোন নির্দিষ্ট দিকে নয়) আর প্রজ্জলনের সময় এই তেলটা শিখার একেবারে কাছই থাকে, কিন্তু এই তেলে কখনো আগুন লাগে না। কি অবাক মিল এই বস্তুটির সাথে ?
দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ, যে ইলেকট্রিক বাল্ব দেখেনি, ইলেকট্রন এর বৈশিষ্ট জানেনা তাকে এর থেকে সহজ আর যৌক্তিক উপায়ে উলেকট্রিক বাল্ব সম্বন্ধে ধারনা দেয়া সম্ভব ?
২২. স্টেট অফ ম্যাটার : “কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল- আপনি আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি উহাকে আপনাকে এনে দিব। অত:পর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখতে পেলেন, তখন তিনি বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ”। (সূরা নামল : ৪০)
বস্তুর রুপান্তর করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, আলোর গতিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই টেকনোলজীকে বলে স্টেট অফ আর্ট বা ম্যাটার সাইন্স। এই তত্বটা নিয়ে সারা দুনিয়ায় ১৯৯৩ সালের পর থেকে ব্যাপক গবেষনা হচ্ছে। এমন একদিন আসবে হয়ত মানুষ চোখের পলকে একটি বস্তুকে আমেরিকা থেকে জাপানে পাঠিয়ে দিবে। এটা সম্ভব কারণ কোরআন বলছে হাজার হাজার বছর আগে সোলাইমান (আ এর যুগেই এমন ঘটনা ঘটে গেছে!
৩৭। কোরআনের ভবিষ্যতবানি :
১. মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে আল্লাহ তায়ালার আদেশে মুহাম্মদ (স মদিনায় হিযরত করেন। মদিনায় তিনি ও তার সাথিরা এতোটা নি:স্ব অবস্থায় পৌছান যে উনাদের মাথা গোজার ঠাই না থাকায় খোলা ছাপরার মদ্ধে দিন পার করছিলেন। এ কারনেই ওনারা আসহাফে সুফফা নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। তার উপর ছিল কাফেরদের আক্রনের ভয়। এমনি ভায়ানক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা ওহী পাঠালেন-
“তুমি মসজিদুল হারামে নিরাপদভাবে প্রবেশ করবে, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কোন ভয় ছারা। তোমার মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তিনি যানেন তোমরা যা জান না। এবং আদেশক্রমে এই জায়গায় তোমাদেরই জয় হবে।” (সুরা ফাতাহ:২৭)
সত্যি সত্যি কিছু কালের মদ্ধেই সমগ্র আরব ভূ-খন্ড আল্লাহর রাসূলের অধিকারে এসে গেল, আর মুহা্ম্মদ (স মক্কায় প্রবেশ করলেন কোন বাধা ছারাই। সামান্য কয়েকজন নি:স্ব গরীব লোক, ঐ সমস্ত লোককে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত করল, যারা সংখ্যায় ছিল অধিক, সময় ও পরিবেশ ছিল যাদের অনুকুলে এবং যাদের কাছে ছিল উন্নত সমরাস্ত্র ও ধন-সম্পদের প্রাচুর্য।
২. কোরআনের আর একটি ভবিষ্যতবানী, যার উল্লেখ আমি এখানে করতে চাই তাহলো- ইরানীদের উপর রোমানদের বিজয়।
“রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবকিছু নিচু জায়গায় এবং তারা পরাজয়ের পর বিজয়ী হবে এবং কিছু বছরের মদ্ধেই। অগ্র পশ্চাতের কাজ হাতেই, সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে।” (সূরা রুম:২-৩)
এই আয়াতগুলো নাযিল হয় ৬২০ সনে। তখন রোমান অর্থাৎ বাইজেন্টাইনরা, ইরান বা পারস্য শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিজেরা এতটাই দূর্বল হয়ে পরেছিল যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকবে কিনা এই নিয়ে শংসয় চলছিল। উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার ঠিক ৭ বছর পর ৬২৭ সনে রোমানরা অবিশ্বাস্যভাবে ইরানীদের পরাজিত করে। সত্যি প্রমাণিত হয় কোরআনের ভবিষ্যতবাণী।
আর একটি বিষয় খুবি চাঞ্চল্যকর। বলা হয়েছে “রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবচেয়ে নিচু জায়গায় (Adna al-ard পৃথিবীর নিম্নতম স্থান)। – রোমানরা ইরানীদের কাছে যে জায়গায় পরাজিত হয় সেটা হল ডেড সি বেসিন। এটি কি সত্যি পৃথিবীর নিম্নতম স্থান ?
আজকে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর নিম্নতম স্থান হল ডেডসি বেসিন, এই স্থানটি সমুদ্রতল থেকে মিটার নীচে অবস্থিত। পূর্বে নিশ্চয়ই এটি জানা অসম্ভব ছিলো যে, এটিই পৃথিবীর সবচাইতে নিচু জায়গ। মহানবী (স এই জাযগাটির গভীরতা কি দিয়ে পরিমাপ করেছিলেন ?
৩. কোরআনের ভবিষ্যতবানীর আরেকটি দৃষ্টান্ত সূরা কাওসার। বিশ্বনবী (সএর পুত্র সন্তান মারা যাওয়ায় এবং তার দ্বিতীয় কোন জীবিত পুত্র সন্তান না থাকায় কোন কোন অজ্ঞ মুশরিকরা বলত, মুহাম্মদ (স এর বংশ নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। যে লোকটি রাসূল (স কে ‘আবতার’ বা বংশহীন বলে উল্লেখ করত পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাকেই ‘আবাতার’ বলে উল্লেখ করেছেন।বাস্তবেও হয়েছে তাই। লোকটির সন্তানাদি থাকা সত্বেও দু্ই প্রজন্ম পরই তার বংশ নিশ্চিহৃ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বনবী (স এর পবিত্র বংশধারা (আওলাদে রাসূল) তার কণ্যা হযরত ফাতেমা (রা এর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে এবং তা আজো অব্যাহত রয়েছে। পবিত্র বৃক্ষের মত এর শাখা-প্রশাখা আজো ক্রমবর্ধমান। মহান আল্লাহ পাক সূরা কাওসারে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওসার (তথা ব্যাপক কল্যাণ ও বরকত) দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নাময পড়ুন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বর্শ।”
৪. ফেরাউনের লাশ সংরক্ষন :
কোরআনে আছে ফেরাউন ডুবে মারা গেছে আর মৃত্যুর পরও তার শরীর অক্ষত রাখা হবে, পরবর্তি সীমালংঘনকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে।
“বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী, অত:পর তাদের পশ্চাদ্ভাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্ধেশ্যে, এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করলো, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া যার ইবাদত করে বনী ইসরাঈলরা। অতএব আজকের দিনে রক্ষা করছি আমি তোমার দেহকে যাতে তা তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নি:শন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।” (সূরা ইউনুস:৯২)।
ঐতিহাসিকগণ ১৮৯৮ সালে ফেরাউনের লাশ উদ্ধার করেন। যা আজ মিশরের কায়রোতে দ্যা রয়েল মমী হলে একটি কাচের সিন্দুকের মধ্যে রয়েছে। এর দৈর্ঘ ২০২ সেন্টিমিটার। ৩১১৬ বছর পানির নীচে থাকা সত্ত্বেও তার লাশে কোন পচন ধরে নি। এটা কি মোটেও যৌক্তিক ? মুহাম্মদ (স এর যুগের আরব জাতি ও অন্যরা মিশরীয়দের মধ্যে, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিংবা তার লাশ যে সংরক্ষিত হবে এরকম ভবিষ্যতবানী করা এবং তা মিলে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব।
ইরাম শরহ এর রহস্য :
কোরআন মাজিদের সূরা আল ফজর এর সাত নং আয়াতে ইরাম নামক একটি শহর এর ধ্বংস এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইরাম নামক কোন শহর এর নাম পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায় না। এজন্য ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকগণ ঐ শহরটির সম্বন্ধে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। বহুদিন ধরেই বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল কোরআন।
১৯৭৩ সালে সিরিয়ার এরলুস নামক একটি প্রাচিন শহর খননের সময় কিছু শিলালিপি পাওয়া যায়। এ সমস্ত লিপি পর্যবেক্ষন করে সেখানে ৪০০০ বছরের পুরনো একটি সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। শিলালিপিগুলোতে উল্যেখ পাওয়া যায় ইরাম নামক একটি শহরের নাম, যে শহরের সাথে তৎকালীন এরলুস শহরের লোকজন ব্যবসা-বানিজ্য করতো।
এই সত্যটা অবিস্কার হলো মাত্র সেদিন, ১৯৭৩ সালে। এর আগে কেউ এই শহরের রহস্য জানতো না। অথচ কোরআন শহরটির কথা বলে গিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। কোরআনের উৎস কোথায় ?
কোরআনের শব্দ রিপিটেশন চ্যালেঞ্জ :
কোরআনের আয়াত রচনার জন্য Choose করা বিভিন্ন শব্দগুলো নেয়া হয়েছে বিশেষ নিয়মে। একই অর্থবোধক ও বিপরীত অর্থবোধক শব্দগুলোর রিপিটেসনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে। যেমন, দিন, মাস, ঘন্টা। কতগুলো শব্দের রিপিটেসন পর্যবেক্ষনগত নিরিক্ষনের সাথে আর্শ্চাভাবে মিলে গেছে। যেমন ভুমি ও জলাভুমি। এমনকি তুলনা ও ফলাফলগত শব্দগুলির মধ্যেও সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। আমরা নিচে শ্রেনীবদ্ধভাবে এগুলোর আলোচনা পাব।
ক. একদিনে কত ঘন্টা হয় ? কোরআনে ঘন্টা অর্থে ‘সায়াত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৪ বার।
একবছরে কতদিন হয় ? কোরআনে ‘দিন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ৩৬৫ বার। (একবচনে)
এভাবে বহুবচনে দিন (days) শব্দটি এসেছে ৩০ বার। (আরবীতে ৩০ দিনে হয় একমাস)।
মাস শব্দটি এসেছে ১২ বার। (একবছর হয় ১২ মাস এ)
চাদ শব্দ- ২৭ বার। (চাদ পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২৭.২৩ দিন)। এখানে অনেকে বিভ্রান্তিতে পরতে পারেন, পূর্ণচন্দ্রের সময (২৯.৫৩ দিন) এর সাথে। এই সময়টা লাগে চাদের এক পূর্নিমা থেকে আরেক পুর্ণিমা পর্যন্ত পৌছতে। আর এটা দিয়ে আরবী মাস হিসেব করা হয়)।
বছর শব্দটি কোরআনে এসেছে ১৯ বার। এর পেছনেও সুনির্দিষ্ট কারন আছে। লিপ-ইয়ার এর মাধ্যমে সৌরবর্ষ সঠিক করা হয়। পৃথিবী যে সময়ে (৩৬৫ দিন) সূর্যের চারিদেকে একবার ঘুরে সেই সময়ে চাদ প্রায ১২ বার (একটু কম) পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে। প্রথমটা দিয়ে সৌরবর্ষ আর পরেরটা দিয়ে চন্দ্রবর্ষ হিসেব করা হয়। এভাবে পৃথিবী ও চাদ যে স্থান থেকে ঘুরা শুরু করেছিল ঠিক সেই অবস্থানে আসতে সময় লাগে ১৯ বছর। আর কোরআনে ঠিক ১৯ বারই এসেছে বছর শব্দটি। কি অনুপম মিল রাখে এই কোরআন।
খ. শাস্তি-১১৭ বার, ক্ষমা- ২৩৪ (২*১১৭) বার।
গরিবী- ১৩ বার, প্রাচুর্য- ২৬ (১৩*২) বার।
ধার্মিক- ৬ বার, নাস্তিক- ত বার।
প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত দয়ালু (রহমত)- ১১৪ বার। দয়াবান (রহিম)- ১১৪ বার, সদয় (রহমান)- ৫৭ বার (৫৭*২=১১৪) বার করে এসেছে।
আশা এবং ভয় শব্দ দুটি এসেছে = ৮ বার।
গরম এবং ঠান্ডা = ৪ বার।
কালু (তারা বললো) এবং কুল (তুমি বল) = ৩৩২ বার।
বীজ এবং চারা এবং ফল = ১৪ বার।
অশ্লিলতা এবং পথভ্রষ্ট এবং সীমালংঘনকারী = ২৪ বার।
পাপ = ৪৮ (২৪*২) বার।
দুনিয়া এবং আখেরাত = ১১৫ বার।
পবিত্র এবং অপবিত্র = ৭ বার।
অপবিত্রতা এবং নোংরামী = ১০ বার।
উপকার এবং অপকার = ২০ বার।
খোলামেলা এবং জনসম্মুখে = ১৬ বার।
ফেরেশতা এবং শয়তান = ৮০ বার।
যাদু এবং প্রলুব্ধকারী = ৬০ বার।
ভাষা এবং উপদেশ = ২৫ বার।
ক্ষমা এবং পথ-প্রদর্শক = ৭৯ বার।
ন্যায়নিষ্ট এবং পুরুস্কার = ২০ বার।
গন্তব্যহীন এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল = ২৮ বার।
বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস = ২৫ বার।
যাকাত এবং আর্শিবাদ = ৩২ বার।
সাত বেহেশ্ত এবং বেহেশ্ত তৈরীকরণ = ৭ বার।
সূর্য এবং আলো = ৩৩ বার। সুবিচার এবং অবিচার = ১৫ বার।
খুবি অল্প এবং উপলব্ধিযোগ্য = ৭৫ বার।
নবী এবং সাধারণ মানুষ = ৩৬৮ বার।
লাভ এবং ক্ষতি = ৯ বার।
কেয়ামতের প্রথম ফুৎকার এবং দ্বিতীয় ফুৎকার শব্দ দুটি এসেছে = ৫ বার।
ঘ. মানুষ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার।
মানুষ = ( মাটি- ১৭ বার + বীর্য ফোটা- ১২ বার + ভ্রুন- ৬ বার + মাংসপিন্ড- ৩ বার + হার- ১৫ বার + মাংস- ১২ বার) = ৬৫।
অর্থাৎ মানুষ তৈরীর বিভিন্ন উপাদানগুলো কোরআনে যতবার করে এসেছে এই রিপিটেসনের সংখ্যার যোগফল আর মানুষ শব্দটির শব্দটার রিপিটেসনের সমান। (মানুষ= মটি+বীর্যফোটা+ভ্রুন+মাংসপিন্ড+হার+মাংস)
এটা কি এমনি এমনি মিলে গেছে ?
চ. বর্তমান বিজ্ঞান নিরীক্ষনের মাধ্যমে দেখিয়েছে পৃথিবীতে স্থলভাগের মোট আয়তনের ২৯ ভাগ আর জলভাগের পরিমান ৭১ ভাগ প্রায়। চলুন দেখি কোরআন কি বলে-
কোরআনে সমুদ্র বা জলাধার শব্দটি এসেছে ৩২ বার।
ভুমি বা জমি শব্দটি এসেছে ১৩ বার।
এদের রিপিটেশন এর পরিমানকে অনুপাতে প্রকাশ করলে পাওয়া যায়-
স্থলভাগের পরিমাণ = {১৩/(১৩+৩২)}=২৮.৮৮৮%
জলভাগের পরিমান = {৩২/(১৩+৩২)}=৭১.১১১%
দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ কি জানতো পৃথিবীর জলভাগ আর স্থলভাগের অনুপাত কতো! এভাবে মিলে যাওয়ার কি কারন থাকতে পারে ?
ছ. আসহাবে কাহাফ বা গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা থেকে জানা যায় ওরা গুহার ভিতর ৩০৯ বছর ঘুমন্ত ছিল। এই গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা আছে, কোরআনের সূরা কাহাফের ৯ থেকে ২৫ নং আয়াতে। এই আয়াত কয়টির মোট শব্দের সংখ্যা গণনা করুন্ ৩০৯ টি শব্দ পাবেন!
জ. সামুদ জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনা বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে ভয়ংকর এক শব্দের মাধ্যমে আজাবের কথা। এখানে আজাবের উপকরন “ভয়ংকর শব্দ”। আবার লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার কথা বলতে গিয়ে কোরআন বলছে পাথর-বৃষ্টির কথা। এখানে আজাবের উপকরণ “পাথব বা শিলা-বৃষ্টি”।
ভয়ংকর শব্দ – ১৩, সামুদ জাতি – ২৬ (১৩*২) বার করে এসেছে।
পাথর বৃষ্টি – ৪ বার, লুত সম্প্রদায় – ৮ (৪*২) বার করে এসেছে।
লক্ষনীয় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতীর রিপিটেশন, ধ্বংস করার উপকরণের রিপিটেশনের দ্বিগুন।
ঝ. কোরআন অনেক জায়গায় তুলনা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হলো যে দুটি শব্দের মাঝে তুলনা করা হয়েছে ঐ দুটি শব্দ কোরআনে সমপরিমান সংখ্যায় এসেছে।যেমন-
১. “আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমরে মত”। (আল-ইমরান : ৫৯)।
২. যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মত”। (সূরা আরাফ)
যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অস্বীকার করে বাক্যটি কোরআনে এসেছে ৫ বার। আবার কুকুর শব্দটিও কোরআনে এসেছে ৫ বার।
ঞ. কোন কাজ করলে সেই কাজের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল সম্পর্কিত রিপিটেশন সমান সংখ্যায় এসেছে কোরআনে।
১. যাকাত দিলে বরকত আসে। তাই যাকাত ও বরকত শব্দ দুটি এসেছে ৩২ বার করে।
২. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদ করা। তাই “মানুষ সৃষ্টি” ও “ইবাদত” শব্দ দুটি এসেছে ১৬ বার করে।
৩. গোলামের কাজ হলো গোলামী করা। গোলাম ও গোলামী শব্দ দুটি এসেছে ১৫২ বার করে।
৪. নেশা করলে মাতাল হয়। “নেশা” ও “মাতাল” শব্দ দুটি এসেছে ৬ বার করে।
৫. হায়াত লাভ করলে মউত হবেই। তাই হায়াত ও মউত শব্দ দুটি এসেছে মোট ১৬ বার করে।
৬. মানুষ হেদায়েত পেলে তার উপর রহমত বর্ষিত হয়। হেদায়েত ও রহমত শব্দ দুটি এসেছে মোট ৭৯ বার করে।
৭. কাজ করলে কাজের ফলাফল হবে। কাজ – ১০৮ বার ফলাফল ১০৮ বার।
কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে – “এটি যদি আল্লাহর বানী না হত তাহলে এতে অনেক ভুল এবং পার্থক্য লক্ষ্য করা যেতো।”
এইটা কি করে সম্ভব ? !!!
ক. কোরআনে Specially চাদকে নিয়ে একটি সূরা লেখা হয়েছে। ৫৪ নং সূরা; সূরা আল-ক্বামার। ক্বামার অর্থ চাদ।
মানুষ প্রথম চাদে পদার্পন করে ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দে। যদিও চাদে অবতরন নিয়ে রাসিয়ানরা প্রথমদিকে সন্দিহান ছিলেন কিন্তু কেউই রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘটনাটার মোকাবেলা করার সাহস পায়নি। এবং প্রথম চাদে অবতরনের বছর হিসেবে ১৯৬৯ সালই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে লক্ষনীয় যে ১৯৬৯ সাল হল হিজরী ১৩৮৯ সাল।
১. এখন সূরা আল-ক্বামার এর প্রথম আয়াত “কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ন হয়েছে” এই আয়াতটির আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৮৯ । যেমন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এই আয়াতটির আক্ষরিক মান ৭৮৬।
২. এই সূরাটির প্রথম আয়াত থেকে শুরু করে গুনে গুনে কোরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত গুনলে মোট আয়াত সংখ্যা হয় ১৩৮৯ টা।
এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতেই বলা হয়েছে, “এরা কোন নিদর্শন দেখলে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটাতো একটা চিরাচরিত (স্বাভাবিক ) ব্যাপার” – (আল-কামার : ০২)।
আমি জানিনা এই সূরার অবস্থান এবং এর পরবর্তি সূরাগুলোর আয়াত কাঠামো, আর এই সূরাটির প্রথম আয়াতের গঠন, কেন এভাবে চাদে অবতরনের বছরের সাথে মিলে যায়! তবে এটা কিছুটা বুঝতে পেরেছি, কেন আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন- তার নিদর্শন সম্বন্ধে।
এটা অসম্ভব! পৃথিবীর ইতিহাসে আরো লক্ষ কোটি ঘটনা আছে। তাদের মধ্য হতে বেছে বেছে শুধুমাত্র চাদের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই বছরটার সাথে এতো অবিকলভাবে এগুলোর এরকম মিলে যাওয়যটার সত্যি কোন ব্যাখ্যা হতে পারে না!
খ. “তিনিই সর্বোচ্চ ডিগ্রীর অধিকারী, আর তিনিই আরশের মালিক” (সুরা মুমিন : ১৫)।
এ আয়াতে ডিগ্রী শব্দটি বুঝাতে আরবী “রাফিই” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে । রাফিই শব্দটির সংখ্যাগত মান ৩৬০ । রা-২০০, ফা-৮০, ইয়া-১০, আইন-৭০। আজকের বিশ্বে সর্বোচ্চ ডিগ্রী যে ৩৬০ ডিগ্রী ধরা হয়, এটা কে না জানে! কথা হচ্ছে ডিগ্রী বুঝাতে কোরআনের “রাফিই” কেই ব্যাবহার করতে হবে ! যার সংখ্যাগত মান ৩৬০ ?
কুরআনে ১৯ সংখ্যাটির প্রয়োগ :
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ এখানে ১৯ টি অক্ষর দ্বারা বাক্যটি গঠিত যা একটি সুরা বাদে প্রতিটি সুরার শুরুতে ব্যবহার করা হয়েছে
ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺗِﺴْﻌَﺔَ ﻋَﺸَﺮَ
٧٤ :٣٠
ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔًۙ ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻋِﺪَّﺗَﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﺘْﻨَﺔً ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻟِﻴَﺴْﺘَﻴْﻘِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﻳَﺰْﺩَﺍﺩَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎۙ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺮْﺗَﺎﺏَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَۙ ﻭَﻟِﻴَﻘُﻮﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻢ ﻣَّﺮَﺽٌ ﻭَﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻬَٰﺬَﺍ ﻣَﺜَﻠًﺎۚ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻳُﻀِﻞُّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳَﻬْﺪِﻱ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀُۚ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺟُﻨُﻮﺩَ ﺭَﺑِّﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۚ ﻭَﻣَﺎ ﻫِﻲَ ﺇِﻟَّﺎ ﺫِﻛْﺮَﻯٰ ﻟِﻠْﺒَﺸَﺮِ [ ٧٤ :٣١ ]
“এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ । আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি-যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান। আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।। (সূরা মুদ্দাসসির : ৩০,৩১)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্যে ও ১৯ জন ফেরেশ্তা রাখা হয়েছে। আর তাদের সংখ্যাকে কাফেরদের পরিক্ষা করার জন্য নিধারণ করা হয়েছে। একই সাথে কিতাবীদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে আর মুমিনদের ইমান বৃদ্ধির কাজেও নাকি লাগবে!
১৯৭৪ সালে প্রথম আবিস্কৃত হয় যে, কোরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি শব্দ ১৯ সংখ্যার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পরে আরো ব্যপক গবেষণার ফলে ফলাফল এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যে কেউ সামান্য গুন, ভাগ বুঝতে পারলে, কোরআনে ১৯ এর প্রয়োগ বুঝতে পারবে। এসব গবেষণার ফল আমাদেরকে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই কিতাবটিতে ১৯ সংখ্যাটিকে একটি গানিতিক কোড হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। যা কিতাবটিকে সুরক্ষিত করেছে।
চলুন দেখি কিভাবে ১৯ সংখ্যাটি কিতাবী আর মুমিনদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে সাহায্য করে-
১. কোরআনে মোট ১১৪ টি সূরা আছে। ১১৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১১৪/১৯=১৬।
২. প্রথম আয়াত নাযিল করা হয় সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত। যাতে ১৯ টি শব্দ আছে। এই ১৯ টি শব্দের মধ্যে ৭৯ টি অক্ষর। ৭৬ শব্দটিও ১৯ দ্বারা নি:শেষে বিভাজ্য। ৭৬/১৯=৪ ।
সূরাটিতে মোট ২৮৫ টি অক্ষর আছে । যা এই সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ১৯ ।
সুরাটি যদিও নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে সবার আগে কিন্তু কোরআনে এর অবস্থান ৯৬ তম। যদি উল্টা দিক থেকে গুনা শুরু করেন (অর্থৎ সূরা নাস কে ১, ফালাক কে ২ এভাবে) তাহলে এই সূরাটির অবস্থান হবে ১৯ তম।
সূরা মুদদাসসির এর ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “এর উপর রয়েছে ১৯” যা আমি শুরুতে একবার বলেছি। ঘটনা তা না, ঘটনা হল- আল্লাহ তায়ালা সূরা মুদদাসসির এর ৩০ নং আয়াতটি নাযিলের পর একটু বিরতি দিয়ে সুরা আলাকের বাকি ১৪ টি আয়াত নাযিল করেন। এর ফলে পুর্বে নাযিলকৃত ৫ আয়াত সহ, গোটা সূরা আলাকের আয়াত দাড়ালো ১৯ । সূরাটিতে ১৯ এর যে আকষ্যিক কোন কারিসমা রচিত হয় নি, বরং এর পিছনে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার সূক্ষ ইচ্ছা তা এই ঘটনার রহস্য বুঝে বুদ্ধিমানরা সহযেই আন্দাজ করতে পারবেন।
৩. কোরআনের সর্বশেষ সূরাটি হল সূরা আন-নাস। এটি ১১৪ তম সূরা। এ সূরার শব্দ সংখ্যা হল ১৯। আর এই ১৯ টি শব্দে আছে মোট ৬ টি আয়াত। ১৯*৬=১১৪। কি অদ্ভুত মিল!
৪. প্রথম ওহী সূরা আলাকের প্রথম পাচটি আয়াতের শব্দসংখ্যার মতই কোরআনের আরো বহু পরিসংখ্যান ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
কোরআন যিনি নিয়ে এসেছেন তিনি রাসূল। রাসূল শব্দটি এসেছে- ৫১৩ বার।
যার বানি রাসূল নিয়ে এসেছেন তিনি রব। রব শব্দটি এসেছে- ১৫২ বার।
কোরআনের কেন্দ্রীয় বানি হচ্ছে ইবাদাত। ইবাদাত শব্দটি এসেছে- ১৯ বার।
কেন্দ্রীয় বানির অপর পরিভাষা হচ্ছে আবদ। আবদ শব্দটিও এসেছে- ১৫২ বার।
আবদ এর কাজ যে করবে তাকে বলে আবীদ। আবিদ শব্দটিও এসেছে- ১৫২ বার।
এ সব কটি পরিসখ্যানই ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
৫. কোরআনে “সংখ্যা” এর উল্লেখ আছে ২৮৫ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য। আবার কোরআনে যে সংখ্যাগুলো উল্লেখ আছে তাদের যোগফল করলে দাড়ায় ১৭৪৫৯১, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৬. কোরআনে বিভিন্ন সূরা শুরু হয়েছে বিচিত্র কিছু বর্ণমালা দিয়ে। এগুলোর কোন অর্থ কেউ এখনো বের করতে পারেনি। এগুলোকে বলা হয় “হরুফে মুকাত্তায়াত”। যেমন আলিফ-লাম-মিম, হা-ত্বোয়া-সিন ইত্যাদি।
ক. হরুফে মুকাত্তায়াত আছে ২৯ টি সূরার শুরুতে। হরুফে মুকাত্তায়াত মোট ১৪ টি মৌলিক বর্ণ সমাহারে গঠিত। ১৪ টি বিভিন্ন সমাহারে এই বর্ণগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। এদের যোগফল ২৯+১৪+১৪=৫৭, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
খ. “আলিফ-লাম-মিম” এই হরুফে মুকাত্তায়াতটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬ টি সূরার শুরুতে। সূরা বাকারা, সূরা আল-ইমরান, সূরা আনকাবুত, সূরা রুম, সূরা লুকমান, ও সূরা সাজদায়। এ সূরা গুলোর মধ্যে আলিফ, লাম ও মিম যতোবার করে এসেছে তার যোগফল ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে এ যে এক অসম্ভব কল্পনা!
সূরা বাকারা : আলিফ-৪৫০২ লাম-৩২০২ মিম-২১৯৮ মোট- ৯৮৯৯ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা আল ইমরান : আলিফ-২৫২১ লাম-১৮৯২ মিম-১২৪৯ মোট-৫৬৬২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা আনকাবুত : আলিফ-৭৭৪ লাম-৫৫৪ মিম-৩৪৪ মোট- ১৬৭২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা রুম : আলিফ-৫৪৪ লাম-৩৯৩ মিম-৩১৭ মোট- ১২৫৪ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা লূকমান : আলিফ-৩৪৭ লাম-২৯৭ মিম-১৭৩ মোট- ৮১৭ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা সাজদা : আলিফ-২৫৭ লাম-১৫৫ মিম-১৫৮ মোট- ৫৭০ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এর পরও কি কোন অবিশ্বাসী থাকতে পারে ?
আসুন এবার দেখি এই ছয়টি সূরাতে আলিফ লাম আর মিমের মোট অবস্থাটা কি দ্বারায়।
উল্লেখিত ছয়টি সূরাতে আলিফ মোট ৮৯৪৫ বার, লাম মোট ৬৪৯৩ বার, মিম মোট ৪৪৩৬ বার এসেছে। এদের মোট যোগফল ১৯৮৭৪, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযিম।
গ. সূরা মারইয়াম এর হরুফে মুকাত্তায়াত : ক্বাফ, হা, ইয়া, আইন, সোয়াদ। এ সূরায় ক্বাফ-১৩৭ বার, হা-১৭৫ বার, ইয়া-৩৪৩ বার, আইন-১১৭ বার, সোয়াদ- ২৬ বার করে এসেছে। এদের যোগফল- ৭৯৮, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ঘ. সূরা আরাফ এর হরুফে মুকাত্তায়াত : আলিফ, লাম, মিম, সোয়াদ। এ সূরায় আলিফ ২৫২৯ বার, লাম ১৫৩০ বার, মিম ১১৬৪ বার, সোয়াদ ৯৭ বার করে এসেছে। এদের যোগফল- ৫৩২০, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ঙ. সূরা মুমিন থেকে সূরা আহক্বাফ পর্যন্ত ৭ টি সূরার শুরুতে রয়েছে একই হরুফে মুকাত্তায়াত; হা-মিম। এ সাতটি সূরায় হা ও মিম এই অক্ষরগুলো যতবার ব্যাবহার হয়েছে তার যোগফল ২১৪৭। এ সংখ্যাটিও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
চ. সূরা ইউসুফ, সূরা ইব্রাহীম ও সূরা হেজর এর হরুফে মুকাত্তায়াত হচ্ছে আলিফ-লাম-রা।
সূরা ইউসুফ এ আলিফ-লাম-রা এসেছে মোট ২৩৭৫ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য।
সূরা ইব্রাহীম এ আলিফ-লাম-রা অক্ষরগুলো এসেছে ১১৯৭ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য।
সূরা হেজর এ আলিফ-লাম-রা অক্ষরগুলো এসেছে ৯১২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এছাড়া সূরা ইউনুস ও সূরা হুদ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-রা দিয়ে। এ দুটি সূরাতে এই আক্ষরগুলো ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৮৮৯ বার। এ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ছ. সূরা রাদ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-রা এই অক্ষর ৪টি দিয়ে। এই সূরাতে এই চারটি অক্ষর এসেছে মোট- ১৪৮২ বার; যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
জ. হরুফে মুকাত্তায়াত সম্বলিত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে সূরা কালাম। এই সূরার শুরু মাত্র একটি অক্ষর দিয়ে- নুন। এই সূরাটিতে নুন অক্ষরটি এসেছে ১৩৩ বার, এটিও নি:সন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৭. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
ক. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এই আয়াতটি লিখতে ১৯ টি অক্ষর লাগে। কোরআনে মোট ১১৪ বার এই আয়াত এসেছে। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
খ. এই আয়াতে মোট চারটি শব্দ আছে। ইছেম, আল্লাহ, রহমান ও রহীম। ঘটনা তা না; ঘটনা হল এই চারটি শব্দ কোরআনে যতবার করে এসেছে সেই সংখ্যাগুলো ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ইছেম – ১৯ বার এসেছে; ১৯/১৯=১।
আল্লাহ – ২৬৯৮ বার এসেছে; ২৬৯৮/১৯=১৪২।
রহমান – ৫৭ বার এসেছে; ৫৭/১৯=৩।
রহীম – ১১৪ বার এসেছে; ১১৪/১৯=৬।
এমনকি ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর যে সংখ্যাগুলো পাওয়া গেলো এদের যোগফলও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। (১+১৪২+৩+৬) = ১৫২ (১৯*৮) কি পরাক্রান্ত সেই মহাপ্রজ্ঞাময়!
গ. কোরআনে এই চারটি শব্দের অন্তত একটি শব্দ আছে এরকম আয়াতের সংখ্যা কত ? এরকম আয়াতের সংখ্যা ১৯১৯!!! যা নি:সন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ঘ. ইছেম শব্দটির অর্থ নাম। বাকি তিনটি শব্দ আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম। এই তিনটি শব্দের সংখ্যাগত মানের যোগফলও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য!
আল্লাহ (৬৬) + রহমান (৩২৯) + রহীম (২৮৯) = ৬৮৪। ৬৮৪/১৯=৩৬।
ঙ. হরুফে মুকাত্তায়াত সম্বলিত সূরাগুলোর মধ্যে এই চারটি শব্দ এসেছে মোট ১২৯২ বার। সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ইসেম ৩১ বার + আল্লাহ ১১২১ বার +রহমান ৬৬ বার + রহীম ৭৪ বার = ১২৯২ বার। ১২৯২/১৯=৬৮।
এতোটা কোডিং করে কি কিছু লিখা সম্ভব !
চ. আরেকটি আশ্চার্যের বিষয় : “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটির চারটি শব্দ কোরআনে যতবার যে সংখ্যায় এসেছে, শব্দগুলোর অপরিহার্য গুণবাচক শব্দটিও ঠিক ততবার করে এসেছে।
ইছেম এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “হয়াহেদ” এসেছে ১৯ বার।
আল্লাহ এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “যুল ফাদল” এসেছে ২৬৯৮ বার।
রহমান এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “মাজিদ” এসেছে ৫৭ বার।
রহীম এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “জামেউ” এসেছে ১১৪ বার।
ছ. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ আয়াতটিতে ব্যবহৃত ১৯ টি সংখ্যামানের সমষ্টি ৭৮৬ আয়াতটিতে একই অক্ষরের পুরাবৃত্তি বাদ দিলে মৌলিক অক্ষর থাকে মোট ১০ টি। আয়াতটিতে পুনরাবৃত্তি অক্ষরগুলোর সংখ্যামান ৪০৬। ৭৮৬ থেকে ৪০৬ বাদ দিলে থাকে ৩৮০।
যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
জ. সূরা তওবা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে শুরু হয় নি। অন্যদিকে সূরা নামলে এই বাক্যটি ২ বার এসেছে। ফলে বাক্যটির মোট রিপিটেসন ১১৪ হয়েছে। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। একইসাথে সুরা তওবা থেকে সূরা নামল পর্যন্ত মোট সূরা সংখ্যা ১৯।
ঝ. সূরা নামল কোরআনের ২৭ নং সূরা। এই সূরার শুরুতে একবার এবং ৩০ নং আয়াতে একবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটি এসেছে। ৩০ তম সংখ্যাটি ১৯ তম নন প্রাইম সংখ্যা। (৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪,১৫,১৬,১৮,২০,২১,২২,২৪,২৫,২৬,২৭,২৮, ৩০)।
প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আছে ১১৩ টি সূরাতে। ১১৩ সংখ্যাটি অংকের ৩০ তম প্রাইম নাম্বার!
ঞ. যদি আমরা যোগ করি সূরা নামলের ক্রমিক নং (২৭) এবং রিপিট হওয়া “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর আয়াত নাম্বার (৩০), তাহলে যোগফল হবে ৫৭ ! যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ট. ৯ নং সূরা (সূরা তওবা) তে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” নাই। ২৭ নং সূরাতে আছে দুই বার। যদি আমরা যোগ করি ৯ নং থেকে ২৭ নং সূরা পর্যন্ত, সূরার ক্রমিক নং গুলো (৯+১০+১১+…….+২৭) তাহলে যোগফল পাব ৩৪২। ৩২৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এই শেষ নয়!
২৭ নং সূরাটির ৩০ নং আয়াত যেখানে রিপিটেড “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাওয়া গেছে, সূরাটির প্রথম শব্দ থেকে রিপিটেড বিসমিল্লাহ শব্দ পর্যন্ত মোট শব্দ আছে ৩৪২ টি। এখানেই শেষ নয়!
৯ নং সূরার প্রথম থেকে শুরু করে ২৭ নং সূরার রিপিটেড “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পর্যন্ত মোট আয়াত সংখ্যা ৩৪২ টি।
এই পরিসংখ্যানগুলোর একটার সাথে আরেকটার গণনায় বাহ্যিক কোন সম্পর্ক নেই, অথচ এরা কি সামঞ্জস্যতার সাথে ঘোষণা দিচ্ছে রিপিটেড ও মিসিং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আয়াতটির অবস্থানগত কারনের!
ঠ. এবার আমরা একটু অন্যভাবে পরিক্ষা করবো কোরআনকে। আমরা সুরা নামলের ৩০ নং আয়াতকে মধ্য আয়াত ধরে (যে আয়াতে মিসিং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাওয়া গেছে) কোরআনকে দুই ভাগ করে ফেলব। এভাবে ভাগ করার পর দেখা যাবে, প্রথম ভাগে ইসেম+আল্লাহ+রহমান+রহীম শব্দের মোট সংখ্যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যাবে। এমনকি দ্বিতীয় ভাগেরটাও।
দুইভাগ করার পর প্রথম ভাগে শব্দের সংখ্যা :
ইসেম – ৯, আল্লাহ – ১৮১৪, রহমান – ৩৫, রহীম – ৮০ মোট ১৯৩৮
= ১৯*১০২।
দ্বিতীয় ভাগে শব্দের সংখ্যা :
ইসেম – ১০, আল্লাহ – ৮৮৪, রহমান – ২২, রহীম – ৩৪ মোট ৯৫০
= ১৯*৫০।
সুবহানআল্লাহ! —— তিনি অর্থহীন কিছুই করেন না।
৮. কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালার সর্বোমোট নামের সংখ্যা ১১৪ টি (মূল ও গুনবাচক মিলে), যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৯. আল্লাহ শব্দটি কুরআনে এসেছে ২৬৯৮ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯*১৪২=২৬৯৮।
এখানে ১৪২ সংখ্যাটির একটি তাৎপর্য খুজে পাওয়া গেছে।
কোরআনের কিছু সূরার প্রথম আয়াতে “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে। প্রথম আয়াতে শব্দটি এসেছে মোট ৪২ বার। এখন এই ৪২ এর সামনে আল্লাহ শব্দটির অত্যাবশ্যকীয় গুনবাচক সংখ্যা ১ বসিয়ে দিলে, পাওয়া যায় ১৪২! আরো আছে!
২৬৯৮ সংখ্যাটিরও একটা সুন্দর তাৎপর্য আছে। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নাম হলো ‘যুল ফাদল আল-আজিম’। এই নামটির সংখ্যাগত মান ২৬৯৮, কি অদ্ভুত মিল!
শুধু এটাই শেষ নয়। যে আয়াতগুলোতে “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে, তাদের ক্রমিক নাম্বারগুলো একত্র যোগ করলে পাওয়া যায় ১১৮১২৩, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯*৬২১৭, এখানেই যদি শেষ হতো!
প্রথম হরুফে মুকাত্তায়াত “আলিফ-লাম-মিম” আছে ২ নং সূরায়, আর শেষ হরুফে মুকাত্তায়াত “নুন” আছে ৬৮ নং সূরায়। ২ নং থেকে ৬৮ নং সূরা পর্যন্ত “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে ২৬৪১ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। আর বাকি কোরআন জুড়ে শব্দটি এসেছে ৫৭ বার। এটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১০. সূরা ইয়াসিনে “ইয়া” হরফটি আছে ২৩৭ বার। আর “ছিন” হরফটি আছে ৪৮ বার। উভয়ের সমষ্টি ২৮৫, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ২৮৫/১৯=১৫।
১১. সূরা ত্বহা এর মধ্যে “ত্ব” হরফটি আছে ২৮ বার আর “হা” হরফটি আছে ৩১৪ বার। উভযের সমষ্টি ৩৪২, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ৩৪২/১৯=১৮।
১২. গোপন সূরার গোপন খবর:
কোরআন যে ১৯ সংখ্যার গানিতীক কোড দিয়ে সাজানো এটা প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৪ সালে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়।
আরবী “মুদ্দাসসির” শব্দটির অর্থ “লুকায়িত” বা গোপন। সূরা মুদ্দাসসির কোরআনের ৭৪ তম সূরা, আর এই সূরাতেই ১৯ সংখ্যাটির প্রয়োগ উল্লেখ করে একটি আয়াত (৩০ নং) আছে। যা এই অধ্যায়ের শুরুতে উল্লেখ করেছি। কথা হচ্ছে, যখন আমরা আবিষ্কৃত ১৯ আর সূরা মুদ্দাসসির এর কোরআনে অবস্থান ৭৪ কে পাশাপাশি বসাই, তখন যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা হলো ১৯৭৪, যা যে সালে বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে তার সমান।
হযরত ইসা (আ:) এর জন্মের পর ১৯৭৪ বছর ধরে একটা গোপন রহস্য মানবজাতীর জ্ঞানচক্ষুর আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন মহাশক্তিশালী বিচার দিনের মালিক !! কি মহামহিম তিনি!!!
রহস্য যদি এখানেই শেষ হয়ে যেতো! ইস! ——- কি পহাপরাক্রমশালী তিনি !!
১৯৭৪ সালটি যখন দুনিয়াতে চলছিল, তখন দুনিয়াতে হিজরী সাল চলছিল ১৩৯৩ সাল। কোরআন প্রথম নাজিল হওয়া শুরু হয় হিজরতের ১৩ বছর আগে। এই তের বছর ১৩৯৩ এর সাথে যোগ করলে মোট দাড়ায় ১৪০৯ বছর। অর্থাৎ কোরআন নাজিলের শরু থেকে শুরু করে মোট ১৪০৯ বছর পর কোরাআনের একটা “মুদ্দাসসির” বা “গোপন” রহস্য উন্মোচিত হয়। ১৪০৯ ?? এটার আবার গুরুত্ব কি ? হুমম—- ১৯ কে ৭৪ দিয়ে গুন করলে ১৪০৯ হয়ে যায় যে! ১৯*৭৪=১৪০৯।
রহস্যটা যদি এখানেই খতম হয়ে যেতো!
এই সূরার প্রথম দুই আয়াত এরকম ১. হে চাদরাবৃত ২. উঠুন সতর্ক করুন।
এই দুই আয়াতে মোট অক্ষর এর সংখ্যা ১৯ টি। আর আয়াতদুটির মোট সংখ্যাগত মান কত জানেন ? আপনি হয়তো ভাববেন আমি ভুল তথ্য দিচ্ছি, আসলে বলতে গিয়ে আমি আবেগাপ্লুত হযে যাচ্ছি ।এই আয়াতদুটির সংখ্যাগত মান হিসাব করলে তা দ্বারায় ১৯৭৪!!!!!! সতর্ক কেন করতে বলেছেন তিনি, বুঝেছেন ?
আয়াত দুটি হল, ইয়া আইয়্যুহাল মুদ্দাসসির, কুম ফাআনযির।
ইয়া=১০, আলিফ=১, আলিফ=১, ইয়া=১০, আলিফ=১, আলিফ=১, লাম=৩০, মিম=৪০, দাল=৪, ছা=৫০০, র=২০০, ক্বাফ=১০০, মিম=৪০, ফা=৮০, আলিফ=১, নুন=৫০, যাল=৭০০, র=২০০
মোট মান = ১০+১+১+১০+———-+১+৫০+৭০০+২০০=১৯৭৪।
এখা্নেই যদি শেষ হয়ে যেতো রহস্যের! সুবহানাআল্লাহ—তিনি কত মহান–!
সূরাটি ৭৪ নং সূরা, মুদ্দাসসির শব্দটা আছে ১ নং আয়াতে। সুতরাং ১ নং আয়াতকে কোথাও রেফার করা হয় (৭৪,১) লিখে। কমা ছারা সংখ্যাটি ৭৪১, কথা তা না, কথা হচ্ছে, এই ১ নং আয়াতটি থেকে শুরু করে , কোরআনের সর্বশেষ আয়াত পর্যন্ত গননা করলে মোট ৭৪১ টা আয়াত পাওয়া যায়। ৭৪১ আক্ষরটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য (১৯*৩৯=৭৪১)।
কোরআনে কিভাবে একেকটা আয়াত, একেকটা শব্দ, একেকটা অক্ষর এতো অবাক Mathematics কে মেনে চলতে পারে ? এগুলোকে কি বলবেন আপনি ? Coincidence ? আন্দাজে মিলে গেছে ?
দুনিয়ার কোন ঘটনাই কারণ ছারা ঘটে না। যা হোক মেনে নিচ্ছি আপনার কথা। আসুন আরো কিছু আন্দাজে (!) মিলে যাওয়া ঘটনা দেখি !
সূরাটিতে অগ্নি অর্থে “সাকার” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬, ২৭ ও ৪২ নং আয়াতে। যেগুলোতে বলা হচ্ছে, যারা সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখার পরও, কোরআনকে মানুষের উক্তি বলবে, তাদরেকে সাকার বা অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। এখন ২৬+২৭+৪২=৯৫, লক্ষনীয় ১৯*৫=৯৫।
এই ২৬, ২৭ ও ৪২ নং আয়াত তিনটির সংখ্যাগত মান (৫৫৬,৬৮৩,৬৬১) একত্রে যোগ করলে পাওয়া যায় ১৯০০, লক্ষনীয় ১৯*১০০=১৯০০।
আরো অবাক ব্যাপারটা হলো, যদি আমরা এই তিনটি আয়াতের সংখ্যাগত মানের সাথে, কোরআনের সূরাটির অবস্থান (৭৪) কে যোগ করি তাহলে আমরা সেই সালকে পাব যে সালে ১৯ এর রহস্য আবিষ্কার করা হয়। যে সূরাতে এতোকিছুকে গোপন করে রাখা হয়েছে, তার নাম মুদ্দাসসির কেন দেয়া হলো, এবার বুঝতে পেরেছি!
শেষ! না, এখনো হয় নি,——–
আপনি যদি সূরা মুদ্দাসসির পরেন, তাহলে দেখবেন, এই সূরাটির ১ টি আয়াত বাদে বাকি সব আয়াতগুলো খুব ছোট ছোট। আর এই অস্বাভাবিক আয়াতটা হচ্ছে সূরাটির ৩১ নং আয়াত। একমাত্র এই আয়াতেই ১৯ এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে বলা হয়েছে। সূরাটর ১ টি আয়াতে গড়ে যতগুলো অক্ষর এসেছে, তার ১২ গুন অক্ষর এসেছে এই ৩১ নং আয়াতে।
উল্লেখ্য কোরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত, সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত। সূরা বাকারতে একটি আয়াতে গড়ে যতগুলো অক্ষর এসেছে, তার সমান ৬ গুন অক্ষর এসেছে ২৮২ নং আয়াতটিতে। অর্থাৎ গড় অনুপাতের দিকে বিবেচনা করলে মুদ্দাসসির এর ৩১ নং আয়াতটি বাকারার ২৮২ নং আয়াতেরও ২ গুন। এই আয়াতটিতেই যেহেতু এসেছে ১৯ সংখ্যাটির কথা, তাই নিশ্চয়ই আয়াতটির মধ্যে ১৯ এর রহস্য লুকানো আছে ! আছে কি ?
আয়াতটিতে মোট ৫৭ টি শব্দ আছে। ১৯*৩=৫৭। আবার আয়াতটির যে বাক্যটিতে ১৯ অক্ষর আছে তাতে ৩ টি শব্দ আছে। ৩ এর একটা অর্থ আছে এখানে। তা হলো এই আয়াতে শব্দ সংখ্যা ৫৭, যেটা ১৯ কে ৩ দিয়ে গুন করে পাওয়া যায়।
আয়াতটির একটা বাক্য হলো, “——— আল্লাহ এর দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছেন?” এই বাক্যটিতে মোট ১৯ টা শব্দ আছে। আর আয়াতটির প্রথম থেকে এই আয়াত পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৩৮ টি। লক্ষনীয়, ১৯*২=৩৮। আরো লক্ষনীয় এই বাক্যটির পরের বাক্যগুলোতে মোট ১৯ টা শব্দ আছে।
প্রথম থেকে শুরু করে এই অস্বাভাবিক বড় আয়াতটি পর্যন্ত মোট আয়াত ৩০ টি। এই ৩০ টি আয়াতে মোট শব্দ সংখ্যা ৯৫ টি । লক্ষনীয, ১৯*৫=৯৫।
প্রথম থেকে শুরু করে এই আয়াতে উল্লেখিত “উনিশ” শব্দটি পর্যন্ত মোট ৩৬১ টি অক্ষর আছে। ৩৬১ কে ১৯ দিয়ে ভাগ করলে ১৯ পাওয়া যায়। (১৯*১৯=৩৬১)। সুবহানাল্লাহ——! এটা কি মোটেও মেনে নেয়ার মত !
সূরাটির প্রথম থেকে উনিশতম আয়াত পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৫৭ টি। ১৯*৩=৫৭।
সূরাটিতে ক্রমিক নম্বর সহ আয়াত আছে মোট ৫৬টা। আর ক্রমিক নম্বর ছারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আয়াতটি আছে সূরার শুরুতে। তাহলে মোট আয়াত ৫৬+১=৫৭। লক্ষনীয় ১৯*৩=৫৭। রাব্বুল আলামীন নিশ্চয়ই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কে “মুদ্দসসির” (গোপন) রেখেছেন সূরাটির নামটিকে শিল্পোত্তির্ণ করতে!
১৩. “হিসাব” শব্দের অদ্ভুত হিসাব :
“যাতে আল্লাহ জেনে নেন যে, রাসূলগণ তাদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কিনা। আল্লাহর সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন”। (সূরা জ্বীন : ২৮)।
এই আয়াতে “আদাদা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে হিসাব বুঝোতে। শব্দটি সূরা জ্বীনের সর্বশেষ আয়াতের সর্বশেষ শব্দ। লক্ষনীয়, কোরআনে ৫৭ (১৯*৩) প্রকারের বিভিন্ন সংখ্যা (আদ্দা) ব্যাবহার করা হয়েছে।
সূরা জ্বীন কোরআনের ৭২ নং সূরা আর “আদাদা” শব্দটি এসেছে এই সূরার ২৮ নং আয়াতে। এখন ৭+২+২+৮= কত ? = ১৯ !
“আদাদা” শব্দটি সুরাটির শেষ আয়াতের শেষ শব্দ। এই সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের শেষ শব্দগুলোর মোট অক্ষর সংখ্যা ১১৪। ১১৪=১৯*৬।
সূরাটির ২৮ টা আয়াত শেষ হয়েছে ২৮ টা শব্দ দিয়ে। কিছু কিছু শব্দ পুনরায এসেছে। এই পুনরায় আসা শব্দগুলোর রিপিটেসন বাদ দিলে পাওয়া যায় ১৯ টি মৌলিক শব্দ।
আর এই ১৯ টি মৌলিক শব্দ গঠিত হয়েছে ১৯ টি বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন সমাহারে। উল্লেখ্য আরবী বর্ণমালা ২৮ টি বিভিন্ন বর্ণ নিয়ে গঠিত।
“আদাদা” শব্দটি লিখা হয় আইন, দাল, দাল ও আলিফ বর্ণ দিয়ে। সূরা জ্বীন এ আইন ৩৭ বার, দাল ৫৪ বার, দাল ৫৪ বার, আলিফ ২১৬ বার করে এসেছে। এই অক্ষরগুলো মোট রিপিটেশন ৩৭+৫৪+৫৪+২১৬=৩৬১। ১৯*১৯ = কত ? ৩৬১! সুবহানাল্লাহ—– না জানি আরো কত হিসাব বাকি পরে আছে !
বুঝেছেন ! এতকিছু হিসেব করে এই একটি শব্দ “আদাদা” কে বসানো হয়েছে। কি বিষ্ময়কর এ মহাগ্রন্থ!
১৪. কোরআনে আসা সংখ্যাগুলো :
কোরআনে মোট ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যা এসেছে। কোরআনে আসা এই ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যার সমষ্টি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
(১*+২*+৩*+৪*+৫*+৬*+৭*+৮*+৯*+১০*+১১+১২*+১৯+২০+৩০*+৪০*+৫০+৬০+৭০*+৮০+৯৯+১০০*+২০০*+৩০০+১০০০*+২০০০+৩০০০+৫০০০+৫০,০০০+১০০,০০০=১৬২,১৪৬ (১৯*৮৫৩৪)।
এই সংখ্যাগুলোর মধ্যে স্টার দেয়াগুলো কোরআনে রিপিট করা হয়েছে। এদের রিপিটেসনকে ধরে নিয়ে যোগ করলে, যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। আর সংখ্যাটি হলো ১৭৪,৫৯১। ১৯*৯১৮৯!
মুহাম্মদ (স:) কি অংকের শিক্ষক ছিলেন? না ধর্মপ্রচারক? পৃথিবীর যে কোন অংকবিদ, ১৯ এর এরকম রহস্যভরা কোন বই লিখার সাহস করুক দেখি! আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন? নাকি ভয় পাচ্ছেন? রহস্য এখনো শেষ হয়নি—!!!
কুরআনে ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যা ছাড়াও, ৮টি দশমিক সংখ্যার উল্যেখ আছে। এগুলো হলো- ১/২০, ১/৮, ১/৬, ১/৫, ১/৪, ১/৩, ১/২, ২/৩। এই আটটি সংখ্যাকে ধরলে কোরআনে মোট মৌলিক সংখ্যা দ্বারায় ৩৮টি। ৩৮ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ কোরআনে উল্যেখিত মোট সংখ্যার সংখাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
যেসব সংখ্যাকে ঐ সংখ্যা ও ১ ব্যাতিত অন্য কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না তাদেরকে প্রাইম নাম্বার বলা হয়। ১৯ একটি প্রাইম নাম্বার।
কুরআনে পূর্ণ সংখ্যার সংখ্যা ৩০ টি। আর ৩০ সংখ্যাটি অংকের ১৯ তম নন-প্রাইম সংখ্যা। (৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪,১৫,১৬,১৮,২০,২১,২২,২৪,২৫,২৬,২৭,২৮, ৩০)।
কুরআনে ৮টি দশমিক সংখ্যা আছে। অংকে ৮ নাম্বার প্রাইম নাম্বার হচ্ছে ১৯। গুনে দেখতে পারেন। (২,৩,৫,৭,১১,১৩,১৭, ১৯)।
১৫. ১৯তম অক্ষর ক্বাফ :
ক্বাফ অক্ষরটি সংখ্যাগত মানের দিক থেকে আরবী বর্ণমালার ১৯তম অক্ষর।
(আলিফ, বা, তা, ছা, জ্বিম, হা, খা, দাল, জাল, রা, ঝা, ছিন, সিন, সোয়াদ, দোয়াদ, ত্বো, জো, আইন, গইন, ফা, ক্বাফ)
যেহেতু ১৯ নাম্বার অক্ষর, তাই এটার মধ্যেও নিশ্চয়ই মিরাকল থাকবে—
ক. কোরআনের সকল সূরার ১৯ নং আয়াতগুলোতে ক্বাফ অক্ষরটি এসেছে মোট ৭৬ বার। ৭৬ কে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। ৭৬/১৯=৪।
খ. কোরআনে যেসব সূরার অবস্থানকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়, ঐ সকল সূরায় ক্বাফ এসেছে মোট ২২৮ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১৯ ৩৮ ৫৭ ৭৬ ৯৫ ১১৪ মোট
৮৬ ৭৪ ৪৯ ১৫ ৩ ১ ২২৮
১৬. এটাই শেষ আর লিখবো না—–
হা-মিম এই দুটি অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে কোরআনের ৭ টি সূরা। এগুলো হলো ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নং সূরা। সূরাগুলোতে হা ও মিম এই অক্ষর দুটি এসেছে এভাবে
সূরা নং হা মিম ডিজিট গুলোর যোগফল মোট ডিজিট
৪০ ৬৪ ৩৮০ ৬+৪+৩+৮+০ ২১
৪১ ৪৮ ২৭৬ ৪+৮+২+৭+৬ ২৭
৪২ ৫৩ ৩০০ ৫+৩+৩+০+০ ১১
৪৩ ৪৪ ৩২৪ ৪+৪+৩+২+৪ ১৭
৪৪ ১৬ ১৫০ ১+৬+১+৫+০ ১৩
৪৫ ৩১ ২০০ ৩+১+২+০+০ ৬
৪৬ ৩৬ ২২৫ ৩+৬+২+২+৫ ১৮
মোট ২৯২ ১৮৫৫ ১১৩
মোট হা-মিম =২১৪৭ (১৯*১১৩)!!! মোট ডিজিট = ১১৩।
শুধু এই নয়- যদি আমরা সূরাগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করি; এভাবে ৪০,৪১,৪২ এক গ্রুপে আর বাকী চারটি আরেকগ্রুপে, তাহলে প্রতি গ্রুপে হা-মিমের মোট সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য পাওয়া যাবে। আর উপরের টেবিলের মতই ডিজিটগুলোর মোট যোগফল, হা-মিমের মোট সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর যা থাকে তার সাথে মিলে যাবে!!!
হা-মিম, ১১২১ (১৯*৫৯) ও ১০২৬ (১৯*৫৪)টি। ডিজিটের যোগফল, ৫৯ ও ৫৪।
রাব্বুল আলামিন তার সব সৃষ্টির মধ্যেই, এরকম সামঞ্জস্য বজায় রেখে সৃষ্টি করেছেন। কেউ কেউ তা চোখ খুলে দেখেনা, ফলে বুঝেনা।
১০. কিভাবে এসব হলো !
আল্লাহ পাক কোরআনকে ১৯ সংখ্যাটির গানিতীক কোড দিয়ে সতর্কতার সাথে নাজিল করেছেন। আর দুটি উদাহরণ দেই, ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।
ক. আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বারটি জয়গায় লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্যেখ করেছেন। এবং প্রতিবার তিনি তাদের সম্বোধন করেছেন “কওমে লুত” বলে। কিন্তু সূরা ক্বাফ এর ১৩ নং আয়াতে তিনি লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে “ইখওয়ানুল লুত: বলেছেন; আর্থেল দিকে থেকে উভয়টাই সমান। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাহলে কেন এখানে “ক্বওমে লুত” শব্দটি ব্যাবহার করলেন না ?
কারণ এই সূরাতে এখানে “কওমে লুত” ব্যাবহার হলে এই সূরাতে “ক্বাফ” অক্ষরটির সংখ্যা ৫৮ হয়ে যেতো, যেটাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায় না। সে জন্য একই অর্থবোধক “ইয়াখওয়ানুল লুত” ব্যাবহার করে ক্বাফ এর সংখ্যা এই সূরাতে ৫৭ রাখা হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
থ. সূরা কাহফের ২৫ নং আয়াতটিতে ৩০৯ বছর বুঝানো হয়েছে এভাবে “ওরা গুহার ভিতরে ছিল ৩০০ বছর, তারা এর সাথে যোগ করেছে আরো ৯ বছর।”
আবার নূহ (আ:) এর সাথে সম্পর্কিত ৯৫০ সংখ্যাটি বলতে গিয়ে কোরআন ১০০০ ও ৫০ এর সাহায্য নিয়েছে এভাবে “১০০০ থেকে ৫০ বাদ দিলে যা হয়।”
এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ তায়ালা কি পারতেন না, এভাবে প্রকাশ না করে সংখ্যাগুলিকে সরাসরি প্রকাশ করতে ? অথবা কেন তিনি এমন পদ্ধতি ব্যাবহার করলেন ?
কারন ৯৫০ কে সরাসরি “৯৫০” লিখলে বা ৩০৯ কে সরাসরি “৩০৯” এভাবে লিখলে, কোরআনে যে সংখ্যাগুলি পাওয়া যাবে তাদের যোগফলকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যাবে না!
এভাবে কোরআন এর প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি শব্দ ১৯ এর গানিতিক রহস্যে সাজানো। একটি শব্দের হেরফের করা সম্ভব নয়। কি চমৎকার আর যৌক্তিক মহান প্রভুর নিদর্শণ!
১১. কেন এত ১৯ ? :
১৯ এর এতোসব প্রয়োগ দেখে হয়তো আপনার জানতে ইচ্ছে করছে, এটার কি দরকার ছিল অথবা কোরআনের বাহ্যিক অবস্থানের সাথে এর সম্পর্ক কি। উত্তরটা সহয। কোরআনকে যে কোন ধরনের বিকৃতি থেকে রক্ষা করা। আজ সারা পৃথিবীর প্রতিটা মুসলমানের ঘরে কোরআন আছে। এই কিতাব যেহেতু একটা ধর্মগ্রন্থ তাই এটা অবিকৃতির সাথে সবার ঘরে শোভা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলামের শত্রুরা বসে নেই। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম, কোরআনকে বিকৃত বইয়ের গাদায় ফেলতে। কোরআনকে কেউ যদি বিকৃত করার চেষ্টা করে তা এখন ধরা সম্ভব, ১৯ এর ম্যাথমেটিক্যাল কোড দিয়ে। মহান আল্লাহ এটাকে এমন একটা রক্ষাকবচ বানিয়ে দিয়েছেন, যেটা কোন মানব মস্তিস্ক চিন্তা করারও শক্তি রাখে না।
সুবহানাল্লাহ——
চলুন দেখি এভাবে মিলে যাওয়া কতটা সহয —
আপনি অংকের সম্ভাবনা অধ্যায়টার প্রথম কয়েকটি রুল জানলেই, নিচের আলোচনাটা বুঝতে পারবেন।
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যকার যে কোন একটি শব্দের রিপিটেশনের পরিমান ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, এর সম্ভাবনা = ১/১৯
তাহলে চারটি শব্দেরই রিপিটেসনের পরিমান ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, এর সম্ভাবনাও একইভাবে ১/১৯4
এই চারটি শব্দের অপরিহার্য গুনবাচক শব্দগুলো ততবারই এসেছে যতবার মুল শব্দ এসেছে। এরুপ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাও একইভাবে ১/১৯4
২. এই চারটি শব্দের রিপিটেশন সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর প্রাপ্ত সংখ্যাগুলোর যোগফলকেও ১৯ দ্বারা ভাগ করা সম্ভব। এরুপ হওয়ার সম্ভাভবনা ১/১৯²।
৩. আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নামের সংখ্যাগত মান ২৬৯৮, আল্লাহ শব্দটার রিপিটেশন সংখ্যা ১৬৯৮ এর সাথে মিলে যাবে এরুপ হওয়ার সম্ভাবন ১/২৬৯৮4।
আর বেশি না করি। দেখি এ পর্যন্ত কত দাড়ালো!
উপরে ১,২ ও ৩ নং পয়েন্ট একইসাথে ঘটার সম্ভাবনা ১/১৯4x১/১৯4x১/১৯²x১/২৬৯৮4 = ১/৩২৪৮,৬৫৬৪,৮২৫৫,৭১০১, ৮৪৬৮,৫০৭৮,৪১৬।
আজব! পড়তে পড়তে পারলে পড়েন সংখ্যাটা। এর কোন অস্তিত্ব আছে!!
ভুলে যাবেন না আবার- এটা শুধুমাত্র “বিসমিল্লাহ” আয়াতটির চারটি শব্দের রিপিটেসনের তিনিটি পয়েন্টের গানিতীক সম্ভাবনা! এখানে নেয়া হয়নি সূরা আলাক, সূরা মুদ্দাস্সির, সূরা জ্বীন এর মত গুরুত্বপূর্ণ ১৯ এর মিরাকলগুলো। এমনকি নেয়া হয়নি হরুফে মুকাত্তায়াত এর মত Vast item কে। সবগুলোকে নিয়ে সম্ভাবনা বের করতে গেলে না জানি সংখ্যাটি কত দারাতো!!!
কোরআনে ১৯ এর প্রয়োগ এর উপর আরো বিস্তারিত ডাটা মুছে ফেলা হল পোষ্ট সংক্ষিপ্ত করনার্থে।
হে সত্যান্বেষী! আপনি নিশ্চয়ই জানেন হযরত মুহাম্মদ (স:) ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যাক্তি! এটা বলা খুবি অন্যায় হবে, যদি কেউ বলে ১৯ এর এই গানিতীক মিলে যাওয়াগুলো Coincidence। কুরআনে ১৯ এর এই অলৌকিক ভারসাম্যকে যদি কেউ বুঝে, সে স্বীকার করতে বাধ্য হবে এটা এমন একটা বই যেটার মত লেখা, মানুষের ক্ষমতা ও শক্তির বাহিরে। এর পিছনে হাত আছে এক মহান শক্তির।
আর বইটির মালিক বলেই দিয়েছেন-
“বলূন: যদি সকল মানব আর জ্বীন মিলে, এই কোরআনের অনুরুপ রচনা আনয়ন করার জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্যও করে; তবুও তারা কখনো এর অনুরুপ কিছু আনতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাইল”৮৮)।
(সংগ্রহেঃ মুহাম্মদ নূর)
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
ﻭَﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﻳْﺐٍ ﻣِّﻤَّﺎ ﻧَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰٰ ﻋَﺒْﺪِﻧَﺎ ﻓَﺄْﺗُﻮﺍ ﺑِﺴُﻮﺭَﺓٍ ﻣِّﻦ ﻣِّﺜْﻠِﻪِ ﻭَﺍﺩْﻋُﻮﺍ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ [ ٢: ٢٣ ]
ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢْ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﻭَﻟَﻦ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻭَﻗُﻮﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُۖ ﺃُﻋِﺪَّﺕْ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ
[ ٢: ٢٤ ]
“আমি আমার বন্দার প্রতি যাহা অবতীর্ন করেছি, তাহাতে তোমাদের বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ থাকলে, তোমরা ইহার অনুরুপ কোন সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি সত্যবাদি হও তাহলে আল্লাহ ব্যাতিত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে নিয়ে আস। যদি আনয়ন না কর তবে সেই আগুনকে ভয় কর কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হয়েছে। (সূরা বাকারা:২৩, ২৪)।
এটা এমন এক বিষ্ময়কর কথা, যা মানব ইতিহাসে কোন গ্রন্থকারই নিজের বইয়ের পক্ষে দাবি করেন নি এবং জ্ঞানবুদ্ধি থাকা অবস্থায় কোন মানুষই এমন সাহস করতে পারবেন না যে, সে কোরআনের মত একটা বই লিখে ফেলেছে।
কোরআনের এই চ্যালেঞ্জ চলে আসছে সেই কোরআন নাযিলের সময় থেকে। শত শত লোক, শত শত সংগঠন এই চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা করতে এগিয়ে এসেছে। চরমভাবে ব্যার্থ হয়ে সম্পূর্ণ নিরাস হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের সাবাইকেই।
দুটি ঘটনা :
১. লবিদ বিন রাবিয়া। তৎকালীন আরবের শেষ্ঠ কবি। তার শক্তিশালী ভাষা আর তেজোদিপ্ত ভাব তাকে সারা আরবে পরিচিত করে তুলেছিল। উনি যখন কোরআনের এই চ্যালেঞ্জের কথা জানলেন তখন জবাবে একটি কবিতা রচনা করে কাবা শরীফের চৌকাঠের উপর ঝুলিয়ে রাখলেন। পরে একজন মুসলমান কোরআনের একটি সূরা লিখে ঐ কিতাবের পাশে ঝুলিয়ে দেন।
লবিদ পরের দিন কাবার দরজায় এলেন এবং ঐ সূরা পাঠ করলেন। অত:পর বললেন, “নি:সন্দেহে এটা মানুষের কথা নয় এবং আমি এর উপর ইমান আনলাম” অত:পর তিনি প্রকাশ্য কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। তিনি কোরআনের ভাব আর ভাষায এতো বেশী প্রভাবান্নিত হন যে, পরবর্তীতে তিনি আর কোনদিন কোন কবিতাই রচনা করেন নি।
২. দ্বিতীয় ঘটনাটি হল ইবনে মুকাফ্ফা এর। যা ঘটে কোরআন নাযিলের প্রায ১০০ বছর পর। এই ঘটনা প্রথমটির চাইতেও চাঞ্চল্যকর। এই ঘটনা সম্বন্ধে প্রাচ্যবিদ Wollaston বলেন “That Muhammad is boast as to the literary excellence of Quran was not unfounded is further evidence by a circumstance which occurred about a century after the establishment of Islam”
ঘটনাটি এরকম, ধর্মবিরোধীদের একটি সংগঠন সিদ্ধান্ত নিল ওরা কোরআনের অনুরুপ একটি বই লিখবে। এই লক্ষে ওরা ইবনে মুকাফ্ফার (মৃত্যু-৭২৭ খৃ:) কাছে এলো। যিনি ছিলেন ঐ সময়ের সবথেকে জ্ঞানী, প্রখ্যাতি সাহিত্যিক এবং বিষ্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তিনি তার নিজের কাজের উপর এতো বেশী আস্থাবান ছিলেন যে উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে যান। এবং বলেন এক বছরের মধ্যে তিনি কাজটি করে দিবেন। শর্ত ছিল এই এক বছরকাল সময়টা যাতে তিনি পুরোপুরি মনোযোগের সাথে সূরা রচনা চালিয়ে যেতে পারেন এ জন্য তার যাবতীয় সাংসারিক আর অর্থনৈতিক কাজের দায়িত্ব সংগঠনটিকে নিতে হবে।
ছ’মাস পেরিয়ে গেলে সঙ্গিরা কি পরিমান কাজ হয়েছে জানার জন্য তার কাছে এলো। তারা দেখতে পেল বিখ্যাত ঐ ইরানী সাহিত্যিক অত্যন্ত ধ্যানমগ্ন অবস্থায় হাতে একটি কলম নিয়ে বসে আছেন; তার সামনে রয়েছে একটি সাদা কাগজ এবং কক্ষের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিড়েফারা কাগজের স্তুপ। অসীম প্রতিভাধর, যাদুকরী ভাষার অধিকারী ঐ ব্যাক্তি আপন সর্বশক্তি ব্যায় করে ছয়মাস চেষ্টা করে কোরআন তো দূরের পথ একটি আয়াতও রচনা করে উপস্থাপন করতে পারেন নি।
যা হোক শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত লজ্জিত ও নৈরাশ্যমনে তিনি কাজে ইস্তফা দেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল কোরআন নাযিলের ১০০ বছর পর। কুরআনের ঐ চ্যালেঞ্জ কত শতাব্দি পেরিয়ে গেছে আজো বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জ থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।
সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না পৃথিবীর তাবত তাগুতি শক্তি কিভাবে পরাজিত হয়ে আছে কোরআনের কাছে ?
কোরআন নাজিলের সময় বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতি :
সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল হয়। মানুষ তখন পযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল। তখন মানুষ মহাবিশ্ব, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানতো না। এই যেমন-
সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,
১. পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।
২. পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে। অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা স্তম্ভ।
৩. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল বিশাল পাহাড় আছে।
৪. মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের পেটে বড় হয়।
৫. বাচ্চার লিঙের জন্য মা দায়ি।
৬. গাছের লিঙ্গ নেই।
৭. কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।
৮. ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের সাথে রিলেটেড আয়াতের সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি। অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা গেছে, তা কোরআনের সাথে মিলে গেছে। এরকমই কয়েকটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করা যাক।
১। আকাশের খুটি :
সেই সময়ে নাযিল হওয়া কোরআনে লেখা হল- আকাশের কোন দৃশ্যমান খুটি নেই। “তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা রাদ:২)
আমাদের বিজ্ঞান আজ জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি! আর কোরআনও বলে দিচ্ছে একই কথা।
২। মহাবিশ্বের আদি অবস্থা :
আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্ব গ্যালাক্সিগুলো তৈরী হওয়ার পূর্বে সব পদার্থগুলো গ্যাসিয় অবস্থায় একত্রে ছিল।চলুন দেখি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এ বিষয়ে কি বলে- পৃথিবী সৃষ্টি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে- “অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুমৃকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল স্বেচ্ছায় আসলাম।” (সূরা হামিম আস সিজদাহ : ১১)।
কিভাবে এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কোরআনে এলো!
৩। মহাবিশ্বের প্রসারনশীলতা :
“আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী” (সূরা জারিয়াত : ৪৭)
মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা এই কিছুদিন আগে প্রমাতি হয়েছে। বিজ্ঞানী আরভিন সর্বপ্রথম আলোর লোহিত অপসারন পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন এ বিশ্বজগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সিগুলো একটার থেকে আরেকটা দূরে সরে যাচ্ছে।
মুহাম্মদ (স এর কাছে কি শক্তিশালী কোন টেলিস্কোপ ছিলো, যা দিয়ে উনি গ্যালাক্সিগুলোর সরে যাওয়া দেখেছিলেন ?
৪। বিগ ব্যাং থিওরি :
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম” (আম্বিয়া:৩০)।
আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে পরিস্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময় একজায়গায় পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের জন্ম হয়।
আজকের বিজ্ঞান কি বলে এ সম্বন্ধে ? ষ্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যাং থিওরী আজ সর্বময় স্বীকৃত। এ থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য অদৃশ্য গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভুত ছিল। এবং একটা বিশাল বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এরা চারিদেকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিভাবে মরুভুমির বুকে সংকলিত দেড় হাজার বছর আগের একটি বই এ এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা ধারণ করতে পারল ?
ড:মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সএর নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
ড:মিলার বলেছেন, দেড় হাজার বছর আগে ইসলামের নবীর পক্ষে কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেন নি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক বিষয়, যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে এই আয়াতে সেই বিগ ব্যাং এর কথাই বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে।এই বিগ ব্যাং থিওরীর একটা অনুসিদ্ধান্ত হল “অনবরত দূরে সরে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রগুলো একসময় আবার কাছাকাছি আসা শুরু করবে কেন্দ্রবিমুখী বল শুন্য হয়ে যাওয়ার ফলে এবং সময়ের ব্যাবধানে সব গ্রহ নক্ষত্র আবার একত্রে মিলিত হয়ে একটা পিন্ডে পরিনত হবে”।
“সেই দিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর” (সূরা আম্বিয়া : ১০৪)
কি কিছু বুঝা গেল ? এই হল কোরআন———–!
৬। কে স্থির আর কে গতিশীল :
টলেমী বিশ্বাস করতেন থিওরী অফ জিওছেনট্রিজম এ। আর মতবাদটি হল- পৃথিবী একদম স্থির, আর সূর্য সহ সব গ্রহ নক্ষত্রগুলো ঘুরছে পৃথিবীর চারিদেকে। এ মতবাদটি ষোরস শতাব্দি পর্যন্ত বিজ্ঞান হিসেবে টিকে ছিলো। এরপর কোপার্নিকাস এসে প্রমাণ করলেন, পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের চারিদেকে প্রদক্ষিণ করছে। মাত্র ২৫ বছর আগেও বিজ্ঞান মানুষকে জানাচ্ছিল সূর্য স্থির থাকে, এটি তার নিজ অক্ষের চারপাসে প্রদক্ষিন করে না।কিন্তু আজ এটা প্রমানীত যে পৃথিবী ও সূর্য দুটোই গতিশীল। আর এদের দুজনের রয়েছে আলাদা কক্ষপথ। চলুন দেথি দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এই ব্যাপারে কি বলে !
“তিনিই একজন যিনি নিদ ও রাত সৃষ্টি করেছেন, সুর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে। (সূরা আম্বিয়া:৩৩)
“এবং সূর্য তার নিজস্ব পথে চলছ যা সর্বশক্তিমানেরই আয়ত্বে। তিনিই সব জানেন।”(সূরা ইয়াসিন:৩৮)
এই কিছুদিন আগে প্রমাণিত হয়েছে যে, সূর্যও স্থির নয় বরং গতিশীল এবং ২০ লক্ষ বছরে একবার ওর নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে। আর এর গতি ৭২০০০০ কিমি/ঘন্টা।
“আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা পরিপূর্ণ”(সূরা জারিয়াত:৭)
এটা প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্বের অন্য তারকারাজিও স্থির নয় বরং গতিশীল। যার সাথে আধুনিক বিজ্ঞান একাত্বতা ঘোষণা করেছে।
৭। ব্লাক হোলস :
“আমি শপথ করছি সেই জায়গার যেখানে তারকারাজি পতিত হয়। নিশ্চই এটা একটা মহাসত্য, যদি তোমরা তা জানতে।” (সূরা ওয়াক্বিয়া : ৭৫, ৭৬)
৭৫ নং আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, মহাবিশ্বে এমন জায়গা আছে, যেখানে তারকা পতিত হয়। ঠিক পরের আয়াতেই এটাকে, মহাসত্য বলে দাবি করা হয়েছে। মহাকাশে এরকম স্থান আছে, এটা মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই জায়গাগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ব্লাক হোলস। এগুলোতে শুধু নক্ষত্র নয়, যে কোন কিছুই এর কাছাকাছি এলে, এখানে পতিত হতে বাধ্য।
৮। নিরাপত্তার ছাদ :
“আমরা আকাশে একটি সংরক্ষিত ও নিরাপত্তার ছাদ বানিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া : ৩২)।
আয়াতটি বলছে আকাশে এমন কিছু আছে যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা দেয়।
১.আমাদের পৃথিবীল বায়ুমন্ডলের উপরিভাগ কোটি উল্কাপাত থেকে হামেশা রক্ষা করছে। এটা এমন কিছু যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা দেয়।
২. বায়ুমন্ডলের একেবারে উপরিভাগে ভ্যান-এলেন-বেল্ট নামের একটি অতিরিক্ত স্তর রয়েছে। এই স্তরটি প্রায় ৬০,০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই স্তর শুধুমাত্র সেই সমস্ত রশ্মিই পৃথিবীতে আসতে দেয় যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটা সত্যি বিষ্ময়কর যে শুধু রেডিও ওয়েভ বা আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর মত ক্ষতিকর রশ্মিগুলোই পৃথিবীতে আসতে পারে না। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। একইসাথে এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর কসমিক রে কে পৃথিবীকে আসতে বাধা দেয়। অতিরিক্ত কম ঘনত্বের কারণে, এই স্তরটি আয়োনিত বা প্লাজমা অবস্থায় আছে। এই প্লাজমা মেঘ প্রায় ১০০ বিলিয়ন আনবিক বোমার (হিরোসিমায় মাত্র ১ টা ফেলা হয়েছিল) সমান পরিমান ক্ষতিকর শক্তি বিশিষ্ট রশ্মিকে আটকিয়ে দিতে পারে!
৩. আবার এই স্তর পৃথিবীকে মহাকাশের অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে, যা মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (স কি করে জানলেন, পৃথিবীর উপরের এই সংরক্ষিত আর নিরাপত্তার ছাদের কথা ? তার এই তথ্যের উৎস কোথায় ?
৯। আকাশের চক্রশীলতা বা পর্যায়বৃত্ততা :
“শপথ চক্রশীল আকাশের এবং বিদারণশীল পৃথিবীর”। (সূরা তারিক:১১-১২)
আমাদের বায়ুমন্ডল সাতটি স্তরে বিভক্ত। পত্যেকটি স্তর কিছু ভিন্ন চক্র সম্পূর্ণ করতে কাজ করে। এই যেমন-
ট্রপোস্ফিয়ার : তের থেকে পনের কিলোমিটার উর্দ্ধে অবস্তিত। বায়ু থেকে জলীয় বাস্পকে ঠান্ডা করে বৃষ্টির ফোটা তৈরী করে। এভাবে পানিকে আবার পৃথিবীতে পাঠাতে সাহায্য করে। এভাবে পানি চক্র পূর্ণতা পায়। এই স্তর না থাকলে পৃথিবী সম্পূর্ণ শুস্ক ও অন্ধকার থাকতো।
ওযোন স্তর : ২৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ও রেডিও রশ্মি থেকে পৃথিবীকে বাচতে সাহায্য করে। এই রশ্মিগুলোকে পুনরায় মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়।
আয়নোস্ফিয়ার : পৃথিবী হেত পাঠানো বিভিন্ন রেডিও ওয়েভ আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠাতে সাহায্য করে। যা দ্বারা রেডিও ও টেলিভিশন সিস্টেম কাজ করছে।
…………………………………………বাকীগুলো আর লিখলাম না।
১০। সাত আসমান :
“তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন, যা কিছু যমিনে রয়েচে সেই সমস্ত, অতপর তিনি মনোযোগ দিয়েচেন আকাশের প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত”। (সূলা বাকারাহ:২৯)
আমাদের মাথার উপরের আকাশ অর্থাৎ বায়ুমন্ডল সাতটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই কিছুদিন আগে বিংশ শতাব্দির আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা ইহা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানীত হয়েছে। কোরআনে দেড় হাজার বাছর আগে এই সাতটি স্তরের কথাই এভাবে বলেছে!খুবই বিষ্ময়কর।
এই সাতটি স্তরের নামগুলো এরকম- ট্রাপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, ওযনোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার, আয়নোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিযার।
১১। ভূমির সাতটি স্তর :
“তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং পৃথিবী সেই একই পরিমানে”। (সূরা তারেক:১২)
আয়াতটি আমাদের কি বলছে ? আয়াতটি আমাদের বলছে শুধু আসমানই নয় বরং পৃথিবীরও সাতটি স্তর রয়েছে। মোহাম্মদ (স তখনকার দিনে কিভাবে একথা বলতে পারেন!যখন মানুষ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করাই শেখেনি ?
আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এর উপরিভাগ পর্যন্ত সাতটি স্তর রয়েছে। গঠনগত এবং কার্যগত দিক থেকে একটার সাথে আরেকটার কোন মিলই নেই। এগুলো হল – Crust, 2. Lithosphere, 3. Upper mantle, 4. Asrenosphere, 5. Lower mantle, 6. Outer core, 7. Inner core. (Robart Gardner, Samuel F, Allyn and Bacon, Newton, Howe: General science-1885 Page-319-322)
১২। চাদের আলো কার আলো ? :
“আল্লাহ তায়ালাই এই সূর্যকে করিয়াছেন তেজস্কর আর চন্দ্রকে করিয়াছেন পিতিবিম্বিত আলো”। (সূরা ইউনুস:৫)
“কত কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করিয়াছেন রাসিচক্র এবং উহাতে স্থাপন করিয়াছেন প্রদীপ এবং চাদ-যাহার রহিয়াছে ধার কার আলো”। (সূলা ফুরকান:৬১)
চাদের আলো যে প্রতিবিম্বিত আলো অন্য কথায় ধার করা আলো একথাটা দেড় হাজার বছর আগের একটা বইয়ে আসাটা খুবই স্বাভাবিক, যদি সে বইটা হয় এমন এক মহাসত্বার কাছ থেকে যিনি সাময়িক জাগতীক ধ্যান-ধারণার অনেক উর্ধে। সুবহানাল্লাহ। বিজ্ঞান সুস্পষ্ট কোরআনের সাথে এখন একমত।
১৩। থিওরী অফ রিলেটিভিটি :
রিলেটিভিটি থিওরী মতে আমাদের দৃশ্যমান সময়ের পরিমান, আমাদের নিজেদের আপেক্ষিক বেগের উপর নির্ভর করে। সহজ কথায় সময়ের পরিমাণ বেগের সাথে পরিবর্তনশীল। আইনস্টাইনের আগে কোন বিজ্ঞানী আমাদেরকে এই বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন নি। মানুষ তখন সময়কে একটা ধ্রুব রাসি হিসেবে বিবেচনা করতো। আথচ দেড় হাজার বছর আগের কোরআনে আছে আমরা যে সময়কে বাস্তবে বিবেচনা করতে পারি, সেই সময়ই অন্য একটি ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
“ফেরেশতারা আর রুহেরা আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হয়, এমন একদিনে যাহার পরিমান একহাজার বছরের সমান।” (সূরা মায়ারিজ:৪)
“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কার্য পরিচালনা করেন, অত:পর তা তার কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যাহার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান”। (সূরা সেজদাহ:৫)
সময়ের পরিমান ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন হয়, এই কথাটা থিওরী অফ রিলেটিভিটি যতটা পরিস্কারভাবে বলেছে, তার থেকেও বেশি পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে এই আয়াতদুটিতে। ভুলে গেলে চলবেনা, থিওরীটি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক শতাব্দি আগে!
১৪। পর্বতের গঠন ও কাজ :
“আমি কি করিনি ভূমিকে বিস্তৃত এবং পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে” (সূরা নাবা:৬,৭)।
আয়াতটি বলছে পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে তৈরী করা হয়েছে।
পেরেকের কাজ হলো দুই বা ততোধিক কাষ্ঠখন্ডকে এমনভাবে জোরা লাগানো, যাতে সংযুক্ত বস্তুটিকে নাড়াচড়া করে হলেও খুলে না যায়।
আমরা যে বিস্তির্ণ ভূমির উপর বিচরণ করি, তা মূলত একধরনের পাতলা প্লেট। এদেরকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। পৃথিবীর ঘুর্ণনের ফলে এই প্লেটগুলো সদা নড়াচড়া করে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিয়েছে, দুই বা ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর আরেকটি চলমান হয়, অথবা ধাক্কা খায়, তখন এদের মিলনস্থলে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। এই পাহাড় ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের অংশে অনেকগুন পরিমানে ভূমির নিচে দেবে যায়। অনেকটা ভাজ সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়। অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা পেরেকের মত কাজ করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ একটা ভীষণ উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থে পূর্ণ। পেরেকের আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে, পৃথিবীর ঘুর্ননের কারনে, হয়তো কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ঐ অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের হয়ে আসার সুজোগ করে দিতো। ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো।
যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার সবচেয়ে উচু মাথা ভূমির প্রায় ৯ মাইল উপরে উঠেছে। ঠিক একই জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির নীচে পৌছে গেছে ১২৫ কিমি পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে আমরা বিবেচনা করি, তাহলে একে দেখতে মনে হবে-দৈত্যাকার এক পেরেকের মত!
আর কোরআন চমৎকার ভাবে বলে দিয়েছে একথাটাই দেড় হাজার বছর আগে। আচ্ছা মুহাম্মদ (স কি পৃথিবী ঘুড়ে পর্বতগুলোর নিচে কি রকম তা দেখেছিলেন ?
১৫। পর্বতমালার অবস্থান :
“তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর (আসলে সেগুলো সচল), অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত সচল হবে। এটা আল্লাহর কারিগরি যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংগত। তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা অবগত।” (সূরা নামল:৮৮)
১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সোসাইটি (ওয়াশিংটন ডিসি) প্রমাণ করে যে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে পাহাড়গুলোও সম্পূর্ণ স্থির নয় বরং প্রতি বছর ২-৫ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে। যদিও এদের কার্যক্রম পেরেকের মতই। আর আমরা পাহারকে স্থির মনে করে যে একটা ভুলের মধ্যে আছি. একথাটাই কোরআন বলেছে কাব্যিকভাবে।
১৬। লোহার রহস্য :
আমি লৌহ নাযিল করেছি, যার মাঝে অনেক শক্তি রয়েছে এবং যা মানবজাতির অনেক ব্যবহারে আসবে।” (সূরা হাদীদ:২৫)
বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে, আমাদের সৌরজগতের কোন গঠন প্রনালী নেই যা লোহার উৎপত্তি ঘটাতে পারে। লোহা কেবলমাত্র সূর্যের চেয়ে বড় কোন নক্ষত্রেই তৈরী হতে পারে যেখানে তাপমাত্রা কোটি ডিগ্রির কাছাকাছি। এ রকম কোন গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরনের মাধ্যমেই লোহার উৎপত্তি সম্ভব। আর এই ধরনের বিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট লোহার টুকরাগুলো পরবর্তিতে পৃথিবীতে পরার ফলেই লোহা অস্তিত্বলাভ করেছে।
অর্থাৎ লোহা যে আকাশ থেকে এসেছে এটা বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়, সুরা হাদিদ (হাদীদ অর্থ লোহা) কোরআনের ৫৭ নং সূরা। আজব ব্যাপারটা হলো ‘আলহাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থও ৫৭, অর্থাৎ আরবীতে এই শব্দের মান হল ৫৭।
শুধু ‘হাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থ হল ২৬, যা লোহার এটমিক নাম্বার (২৬) এর সাথে মিলে যাচ্ছে। আর সূরাটির ১ থেকে ২৫ নং আয়াত (২৫ নং আয়াতে লোহার গুন সম্বন্ধে বলা হয়েছে) পর্যন্ত হাদিদ শব্দটি এসেছে ২৬ বার। (হা=৮, দাল=৪, ইয়া=১০, দাল=৪)।
১৭। পেট্রোলিয়ামের সৃষ্টি :
“তিনি তৃনাদি বের করে এনেছেন, অত:পর তিনিই তাদের পরিনত করেন কাল বন্যার পানির মত” (সুরা আলা:৪,৫)
গাছ-গাছরা, ফার্ন, শ্যাওলা এসব অরগ্যানিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে একটা দীর্ঘ পদ্ধতির মাধ্যামে শেসে পেট্রোলিয়াম (খনিজ তেল) এর রূপ নেয়। খনিতে পদার্থটি অনেকটা বন্যার পানির মত গার থাকে, একই সাথে এটির রং থাকে কালোবর্ণের। যদিও মানুষ পেট্রোলিয়ামের ব্যাবহার শিখেছে অনেক আগে, কিন্তু তারা জানতো না কি থেকে এই পদার্থটি পৃথিবীতে তৈরী হয়েছিল।
কোরআন উক্ত আয়াতে একটি তরলের কথা বুঝিয়েছে, যা পেট্রোলিয়ামের বৈশিষ্টের সাথে মিলে যায়। এভাবে-
১. এটি তৈরী হয় তৃনাদি থেকে। অর্থাৎ অরগ্যানিক ম্যাটারিয়াল থেকে।
২. এটির রং কাল হবে, আর এটি বন্যার পানির মত তরল হবে।
কোরআন হাজার বছর আগে বলে দিয়েছে পেট্রোলিয়াম তৈরী হয়েছে গাছ-গাছড়া থেকে। আজ এটা বৈজ্ঞাকি সত্য।
১৮। বাতাশ ও বৃষ্টির সম্পর্ক :
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ুকে চালিত করে আকাশের কছে নিয়ে যাই, অত:পর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদের তা পান করাই। বস্তুত তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই” (সূরা হিজর:২২)
বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকেও মানুষের ধারনা ছিল যে, বৃষ্টির সাথে বাতাসের সম্পর্ক হল, বাতাস মেঘকে চালিত করে দূরে নিয়ে যায়, ফলে বৃষ্টি সমভাবে হয়। বাতাসের মাধ্যমেই যে জলিয়বাস্প উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে, এ সম্পর্কে মানুষ জানত না।
বৃষ্টিভর্গ বায়ু বলতে জলিয়বস্পপূর্ণ বায়ু বুঝানো হয়েছে। “বাতাস জলিয়বাস্পকে আকাশে উড়িয়ে নেয়, অত:পর মেঘ সৃষ্টি হয়” একথা এই আয়াতে। বাতাসের ভুমিকা না থাকলে সূর্য যতই তাপ দিক না কেনো জলিয়বাস্প কখনোই আকাশে পৌছতেই পারতো না, মেঘ হওয়া তো দূরের কথা।
১৯। পরিমানমত বৃষ্টি :
“তিন সে যিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী পানি পৃথিবীতে বর্ষণ করেছেন। যা একটি মৃত জমিকেও জীবিত করতে পারে, ঠিক সেভাবে যেভাবে একদিন তোমরা জীবিত হবে” (সূরা যুখরাফ:১১)
প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬ কোটি পানি বাতাসের সাথে মিশে। যা বছরে পাচ হাজার তেরশ কোটি টন। এই পানির পুরোটাই আবার প্রতি বছর মাটিতে ফিরে আসে। যদি এই ফিরে আসাটা পরিমিত না হত তাহলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতো। যেমন পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হয়। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখার জন্য যা খুবি জরুরী। গবেষনায় দেখা গেছে যদি ঠিক এই পরিমাণ পানি বাতাশে না মিশে কিছু কম মিশতো, তাহলে মেরু অঞ্চলের জীববৈচিত্র নষ্ট হয়ে যেত। কারন মেরু অঞ্জলে বরফ স্তরের গভীরতা বেড়ে যেতো। যা গোটা পৃথিবীর জীববৈচিত্র রক্ষার সাথে সম্পর্কিত।
২০। সমুদ্রের পানির রহস্য :
“তিনি পাশাপশি দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, উভয়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।”(সূরা আর-রহমান:১৯-২০)
সমুদ্রের এই বৈশিষ্ট্য অতি সম্প্রতীককালে আবিষ্কৃত হয়েছে। সমুদ্রের সারফেস টেনসন এবং ঘনত্বের পার্থক্যের জন্য এক সমুদ্রের পানি অপরটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও মিশে যায় না। যেমন গালফ অফ মেক্সিকোতে এর হাজার হাজার মাইলব্যাপি লোনা আর মিষ্টি পানির সাগর পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও একটির পানি আরেকটির সাথে মিশে যায় না। কোরআন নাযিলের সময় মানুষের মাঝে পদার্থবিজ্ঞানের কোন জ্ঞান ছিল না আর মুহাম্মদ (স ছিলেন মরুভুমির মানুষ।
২১। সমুদ্র বিজ্ঞান :
সূরা নূরের ৩০ ও ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
“যারা কাফের তাদের কাজ মরুভুমির মরীচিকার মত, যাকে পিপাসার্ত ব্যাক্তি পানি মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, এরপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব নেন। অথবা (তাদের কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের মত, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের পর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই”
সমুদ্র বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের আলোর তিন থেকে ত্রিশ ভাগ সাগরে প্রতিফলিত হয়। তাই ২০০ মিটার গভীর সাগরে নীল রং ছাড়া আলোর সব রংই মিশে যায়। আগেকার দিনে মানুষ যন্ত্র না থাকায় ২০-২৫ মিটারের নীচে নামতে পারতো না। সাবমেরিনসহ নানা উন্নত সাজ সরাঞ্জাম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জেনেছেনে গভীর সাগরের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় দুই ধরনের ঢেউ সৃষ্টি হয়। উপরের ঢেউ ও ভিতরের ঢেউ। নিচের ঢেউ অন্ধকার হওয়ায় দেখা যায় না। ফলে কেউ হাত বের করলেও সেই হাত দেখতে পারবে না ।সাগর বিষয়ক জার্মান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্গারও মনে করতেন বিজ্ঞানের উন্নতির কারেনে ধর্মেল দরকার নেই। কিন্তু সূরা নূরের এ আয়াত শোনার পর তিনি বলেছেন, “এসব কথা কোন মানুষের কতা হতে পারে না, এ আয়াত ইসলামের অলৌকিকতার প্রমাণ।
২২। বাচ্চার লিংগ :
“তিনিই জোরা সৃষ্টি করেছেন, ছেলে অথবা মেয়ে, যা একফোটা বীর্য এর দ্বারাই নির্ধারিত”।
আধুনিক জীববিজ্ঞানের আবিস্কারের পূর্বে মানুষের ধারনা ছিল যে, ছেলে বা মেয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য মহিলাই দায়ি। কিন্তু কোরআনে দেড় হাজার বছর আগে বলা হয়েছে বাচ্চার লিংগ নির্ধারন হয় স্পার্ম দ্বারা। অর্থাৎ বাচ্চার লিংগ কি হবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে স্বামি বা পুরুষের উপর।
আর আজকে জেনেটিক আর বায়োলোজিকাল গবেষকগণ বহু পরিক্ষারিরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে, স্পার্ম সেলের মাধ্যমে লিংগ নিধার্রন হয় যা আসে পুরুষ হতে।
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে একথাটা কে জানতে পারে ?
২৩। গাছের লিংগ :
“তিনি প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।” (সুরা রাদ:৩)
“আর তিনি প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন, তা জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ হোক, কিংবা তারা স্বয়ং অথবা এমন সৃষ্টি হোক যার সম্বন্ধে তারা এখনো জানেই না।” (সূরা ইয়াসিন:৩৬)
জোড়া অর্থাৎ পুরুষ আর স্ত্রী লিঙ্গ। এই আয়াতটি আমাদের বলছে গাছপালারও লিঙ্গ রয়েছে। আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে গাছপালারও লিঙ্গ থাকে। পুরুষ গাছ এবং স্ত্রী গাছ। এমনকি উভলিঙ্গ গাছে পুরুষ এবং মাহিলা অংশ আলাদা অবস্থায় থাকে।
সর্বপ্রথম যে বিজ্ঞানী উদ্ভিদরে মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল লিনে। খৃষ্টিয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তার ওই বক্তব্যে অনেকেই বিষ্মিত হয় এবং তারা গীর্জার কর্মকর্তাদরেকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে কয়েক বছর ধরে ইউরোপে তার লেখনীকে ভূর মতামত হিসেবে ধরা হত। কিন্তু এর কিছু পরই বিজ্ঞানীরা লিনের মতামতকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেন এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক মূল নীতি হিসেবে গৃহিত হয়।
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে কে জানতো যে গাছেরও লিঙ্গ আছে ?
২৪। গাছের নি:শ্বাস-ফটোসিনথেসিস :
“শপথ সকালের যখন তারা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়”। (সূরা তাকভীর:১৮)।
ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার পূর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল। মানুষ ভাবতো এটা এমন কি হতে পারে যা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা, কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা। যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি মানুষকে জানালো এমন এক প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে গাছ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড কে শোষণ করার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে। একইসাথে অক্সিজেনকে পরিবেশ এ মুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের বেলাতেই ঘটে, যেহেতু আলো এখানে অনঘটক হিসেবে কাজ করে।
অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি গাছের উল্যেখ করে আয়াতটি নাজিল করেন নি। বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও কোরআন যে কালোত্তির্ন, এই বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।
২৫। জমাট রক্ত বা আলাক :
“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি মানুষকে তৈরী করেছেন জমাট রক্তপিন্ড(আলাক)থেকে”। (সূরা আলাক:১,২)
আলাক শব্দটির অর্থ আরবিতে জমাট রক্তপিন্ড, পরিস্কারকারি যন্ত্র, জোক। যে কোন একটি বা একাধিক অর্থ নিতে পারেন আপনার পর্যবেক্ষনের জন্য, যাই নেন না কেন, তা ভ্রুনের বৈশিষ্টের সাথে মিলে যাবে! শব্দটির ব্যাবহার এতটাই যৌক্তিক!
এটি কি খুবি আশ্চর্য নয় যে, মাতৃগর্ভাষয়ে একেবারে প্রথমদিকে জন্ম নেওয়া জাইগট বা জিগট দেখতে ঠিক জোকের মত, গর্ভের দেয়ালে ঝুলেও থকে ঠিক জোকের মত, এটা মায়ের দেহ থেকে খাবার নেয় অন্য কথায় মায়ের দেহ পরিস্কারের কাজ করে আর এটা জৈবিক গঠন ঠিক রক্তপিন্ডের মত?
শত শত বছর আগে নিশ্চয়ই মানুষ জানতো না জাইগোটের এই বৈশিষ্টগুলো!
২৬। আঙ্গুলের ছাপের ভিন্নতা :
“মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহকে একত্রিত করতে পারব না? বস্তুত আমি উহাদের অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত সুবিন্যস্ত করব”। (সূরা কিয়ামাহ: ৩,৪)
অর্থাৎ কারো আঙ্গুলের অগ্রভাগই অন্য কারো সাথে পুরোপুরি একই হবে না।
আজ প্রমানীত এ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। কারো ছাপই কারো সাতে মিলবে না। আর এ জন্যই এই ছাপ এখন ব্যবহার করা হয় পরিচয়পত্র হিসেবে। ১৯ শতকের পূর্বে মানুষ আঙ্গুলের ছাপকে শুধু কিছু ভাজ বলেই জানতো।
উল্লেখ্য আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন হয়, এটা ১৮৮০ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন।
২৭। পেশি ও হাড়ের গঠন :
কোরআনে বলা হয়েছে মাতৃগর্ভাষয়ে মাংশপেশী গঠিত হওয়ার আগই বাচ্চার হাড় গঠিত হয়।
“এর পর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাটরক্তবিন্দুতে পরিনত করেছি, অত:পর জমাট রক্তকে মাংষপিন্ডে অত:পর সেই পিন্ডকে হাড়-এ আর তারপর সে হাড়কে মাংসপেশী দ্বারা সজ্জিত করি। এবং এরপর তাকে একটি নতুন সৃষ্টিতে রুপান্তরিত করি, আল্লাহতায়ালার আর্শিবাদ দ্বারা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রূপে। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কত কল্যানময়।” (সূরা মুমিনুন:১২-১৪)
কিছুদিন পূর্বেও এম্ব্রয়লোজি জানতো যে, এম্ব্রয় এর হাড় ও মাংসপেশী একই সময়ে তৈরী হয়। এখন আধুনিক এমব্র্যয়লজি এভাবে দেয়া হয়েছে “সাত সপ্তাহের মদ্ধে কংকালের গঠন শেষ হয় এবং দেহের সবখানে ছড়িয়ে পরতে থাকে। এবং হাড় এর বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। অষ্টম সপ্তাহের দিকে মাংসপেশী গঠিত হতে থাকে যা হাড়ের চারপাশে অবস্থান নিতে থাকে।” Keith Moore (developing Human, 6 part)-1998
অর্থাৎ মানুষের জন্ম ঠিক সেভাবেই হয় যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে।
মার্কিন নাগরিক ও বিজ্ঞানী মার্শাল জনসন ভ্রুনতত্ত্ব সম্পর্কিত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভ্রণের বিকাশের পর্যায়গুলো সম্পর্কে কোরআনের এ বাস্তবতা আবিস্কার করা সম্ভব। কোরআন হল দেড় হাজার বছর আগের গ্রন্থ। সে সময় কোন মাইক্রোসকোপের অস্তিত্ব ছিল না। তখনও মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃতই হয়নি। কোরআন নাজিলের বহু বছর পরে যখন মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃত হল তখন ওই মাইক্রোস্কোপ কোন বস্তুকে ১০ গুণের বেশি বড় করতে পারতো না এবং স্বচ্ছতাও কম ছিল কাজেই কোরআনের বানী মানুষের হতে পারে না”
২৮। জন্মের তিন ধাপ :
“তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক (ধাপে ধাপে) ত্রিবিধ অন্ধকারে”। (সূরা যুমার:৬)
আধুনিক এমব্রয়লজি ও বিজ্ঞান জানিয়েছে গভাষয় তিনটি দেয়াল বা স্তর নিয়ে গঠিত। ১. ইন্টেরিয়ার এবডোমিনাল ওয়াল, ২. ইউটেরাইল ওয়াল, . এমনিওকার্ডিওনিক মেমব্রেন। ভ্রুনের বৃদ্ধি ব্যাখ্যা করতে কোরআনে বলা তিনটি অন্ধকার স্তর এবং বাস্তবে পাওয়া তিনটি স্তর মিলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, কারণ কোরআন সকল বিজ্ঞানের উর্দ্ধে। বিজ্ঞান ভুল করতে পারে কিন্তু কোরআন কালোত্তির্ন।
২৯। দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি: কোনটা আগে ?
“অত:পর তিনি তাতে রুহ সঞ্চার করেন, এবং তোমদের দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্ত:করণ, তোমরা সামা্ন্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”। (সূরা সেজদাহ : ০৯)।
“অত:পর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা ইনসান : ০২)।
অর্থাৎ কোরআন বলছে মানুষ আগে শ্রবণশক্তি আর তারপর দৃষ্টিশক্তি পায়। আসলে কি তাই? চলুন দেখি বিজ্ঞানীরা কি বলেন- গর্ভে পাচ মাস থাকার পর ভ্রুনের শ্রবন ইন্দ্রিয় তৈরী হয়। পরবর্তিতে সাত মাস থাকার পর ভ্রুনের চোখ তৈরী হয়।
কি ধ্রুব-বিজ্ঞানময় এই কোরআন!
৩০। পেইন রিসেপটর, ব্যাথাটা আসলে কোথায় লাগে ?
আগেকার দিনের ডাক্তাররা ভাবত শুধুমাত্র ব্রেণের কারণে, আমরা ব্যাথা অনুভব করি। এখন আমরা জানি চামড়ার নিচে কিছু রিসেপ্টর আছে যেগুলোকে বলা হয় পেইন রিসেপ্টর। এগুলোর কারনেই আমরা ব্যাথা অনুভব করতে পারি। এগুলো পুড়ে যাওয়ার পর ঐ পোড়াযায়গাতে খোচালেও মানুষ ব্যাথা অনুভব করে না ।
“যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করিবে তাহাদেরকে দোযখের অগ্নিতে দগ্ধ করিব, আর যখনি উহাদের চর্ম ঐ অগ্নিতে দগ্ধ হইবে তখনি উহার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করিয়া দিব, যাহাতে তাহারা শাস্তি ভোগ করিতে পারে।” (সূরা নিসা : ৫৬)।
এই আয়াত আমাদের বলছে আমাদের চামড়ায় একটা কিছু আছে যেটার কারণে আমরা ব্যাথা অনুভব করি। আর এই কারনে নতুন করে ব্যাথা দিতে গেলে নতুন চামড়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কি রহস্যময় বিজ্ঞান এই কোরআন!
৩১। পাখিদের গতিপথ :
“তাহারা কি উড়ন্ত পাখির দিকে লক্ষ করে না? যাহারা আকাশে শু্ন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রনাধিন। অন্য কেহই তাহাদের স্থির রাখে না, শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।” (সূরা নাহল:৭৯)।
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কার কি ? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে পাখিদের মাথায় উড়ে বেড়ানোর প্রোগ্রামিং করা আছে। আর এই কারনেই ছোট ছোট পাখি আগে কোনরকম অভিজ্ঞতা না থাকলেও হাজার হাজার মাইল উড়ে বেড়িয়ে আবার নিজ বাসায় ফিরে আসতে পারে। এই যেমন শীতকালে আমাদের দেশে সাইবেরিয়া থেকে এভারেষ্ট এর উপর দিযে উড়ে আসে অতিথী পাখিরা। শীত শেষে আবার চলে যায় নিজের বাসায়। এই বিশাল দুরুত্ব (মাত্র ৬৫০০ মাইল গড়ে) পরি দিতে ওদের কোন গাইড লাগে না! কে তাদরে মাথায় রাস্তা চেনার এই ক্ষমতা দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আ্ল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।”
কি আশ্চর্যকর এই কোরআন!
৩২। পিপিলিকার সমাজ :
“সোলায়মানের সম্মুখে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বীন, মানুষ ও পক্ষিকুলকে। অত:পর তাদরেকে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যষিত উপত্যকায় পৌছল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সোলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদরে পিষ্ট করে ফেলবে”( সূরা নামল: ১৭,১৮)।
কি ভাবছেন ? কোরআনে এসব রুপকথার গল্প লিখা হয়েছে কেন ?
হে বিজ্ঞানপ্রেমী, এগুলো এখন আর রুপকথা নয়! আপনার বিজ্ঞান ঘোষনা করে দিয়েছে, মানুষের সাথে সামাজিক কাঠামোয় সবথেকে মিল যে পাণীর সেটা পিপীলিকা। ওরা আরো জানিয়েছে পিপীলিকারা নাকি ওদের মৃহদেহ কবর দেয়, ওদের সমাজের কাজ নাকি ভাগ করে করে, ওদের নাকি আছে ম্যানেজার, সুপারভাইজার, শ্রমিক ইত্যাদি ব্যাবস্থা! ওরা নাকি ভবিষ্যত চিন্তা করে মানুষের মত খাদ্য মজুদ করে, আরো অবাক করা কথা কি জানেন, ওদের মজুদকৃত শষ্যদানায় যদি কুড়ি গজায় তো ওরা কুড়িগুলো কেটে ফেলে, যেন ওরা জানে, এই কুড়িগুলো ওদের শষ্যকে নষ্ট করে দিবে। আর কোনভাবে শষ্যদানাগুলো ভিযে গেলে, ওরা ওগুলো বাইরে এনে শুকাতে দেয়। যেনো ওরা জানে, এগুলো না শুকালে শষ্যগুলো পচে যাবে!
পিপীলিকাদের এই উন্নত প্রকৃতি সম্বন্ধে বিজ্ঞান আমাদরে জানালো এই কিছুদিন আগে। আর কোরআন জানিয়েছে ——-১৪০০ বছর আগে!
৩৩। পাখিরা কথা বলে ?
“সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হলো, সে বলল, হে মানুষরা আমাদের উড়ন্ত পক্ষিদের ভাষা পর্যন্ত শিখানো হয়েছে।”(সূরা নামল:১৬)
কোরআন এখানে পাখিদের ভাষার কথা বলছে, যা শিথানো হয়েছিল সুলায়মান (আ কে ।পাখিরা কি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারে ?
চলুন দেখি বিজ্ঞান কি বলে। মারিয়া লুইসা ডা সিলভা কর্তৃক ব্রাজিলিয়ান হামিং বার্ড এর উপর দীর্ঘ এক গবেষণার পর এর ফলাফল বিখ্যাত সাইন্স ম্যাগাজিন “ন্যাচার” এ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়-হার্মিং বার্ড এর কন্ঠনি:সৃত শব্দগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, যেগুলো অন্য হার্মিং বার্ডকে নির্দিষ্ট কাজ করতে উৎসাহিত করে। এরা নিজেদের মধ্যে শব্দ বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।
কাকের উপর গবেষণার একটি ফলাফল এরকম- এরা কয়েকশত প্রকারের বিভিন্ন সাউন্ড তৈরী করতে পারে, যেগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, একটি কলোনির সকল কাকাকে সতর্ক করতে, কোন কলোনির কাকাদরকে এক জায়গায় একত্রিত করতে, নিজেদের দুরবস্থার কাথা অন্যকে জানাতে——এর নির্দিষ্ট ধরনের সাউন্ড তৈরী করে থাকে। এমনকি এরা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রয়োগ ঘটিয়েও অন্য কাককে তা মনের কথা জানাতে পারে।
এ রকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে।
৩৪। মধুর ওষুধীগুন :
“মৌমাছির উদর হইতে নির্গত হয় বিবিধ বণের পানীয়, যাহাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য” (সূরা নাহল:৬৮, ৬৯)
আমারা আগে জানতাম মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফুল থেকে অত:পর তা মৌচাকে মজুদ করে রাকে সরাসরি। আসলে তা নয়, বিজ্ঞান কিছুদিন আগে প্রমাণ করেছে মৌমাছির শরীর থেকে মধু বের হয়। কোরআন দ্বারা যা প্রমাণিত।
কোরআন আরো বলেছে মধুর ওষুধীগুনের কথা। আজ আমরা জেনেছি মধুর মদ্ধে রয়েছে প্রচুর ধাদ্যগুন। আছে প্রচুর ভিটামিন কে আর ফ্রুক্টোজ। আরো আছে মাঝারি এন্টিসেপ্টিক গুন। কেটে যাওয়া যায়গায় মধু লাগিয়ে রাখলে কোনরকম ইফেকশান হয়না।
৩৫। সূরা নাহল ও কর্মি মৌমাছির লিঙ্গ :
কোরআনে মৌমাছিকে নিয়ে একটি সূরা আছে। এটি হল সূরা নাহল, নাহল শব্দটির অর্থ মৌমাছি।
ক. এই সূরাটির অবস্থান কোরআনের ১৬ নাম্বার স্থানে।
খ. খুব সম্প্রতি বিজ্ঞান জানিয়েছে, পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোসোম সংখ্যা ১৬! ইস্ত্রী মৌমাছির ৩২ । ১৬*২=৩২ ।এভাবে মিলে যেতে হবে ?
গ. আবার সুরাটিতে আয়াত আছে ১২৮ টা। ১৬*৮=১২৮।
ঘ. এই সূরার ৬৮ নং আয়াতে প্রথম নাহল বা মৌমাছি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এই আয়াতটিতে ১৩টি শব্দ আছে। সূরাটির একেবারে প্রথম শব্দ থেকে গুনে গুনে এই নাহল শব্দটি পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৮৮৪। তো কি হয়েছে ? ৬৮ নং আয়াতে ১৩ টা শব্দ থাকতেই পারে আর সর্বপ্রথম নাহল শব্দটিও থাকতেই পারে, এটার গুরুত্ব কি আছে! আছে বৈ কি, কারণ ১৩*৬৮=৮৮৪ হয় যে!!!
কি অস্বাভাবিক গানিতীক অবস্থান এই কোরআন মেনে চলে!!!
এই সূরার ৬৮ এবং ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে কর্মি মৌমাছির কথা। ওখানে কর্মী মৌমাছিকে বলা হয়েছে”কুল্লিঅফাছলুক”। এই শব্দটির অর্থ স্ত্রী মৌমাছি ।অর্থাৎ কোরআন কমী মৌমাছিদেরকে বলেছে মেয়ে মৌমাছি।
“আর তোমর প্রভু নারী মৌমাছিকে বললেন, তোমাদের বাসস্থা বানাও। পাহারে, বৃক্ষে আর মানুষের গৃহে” (সূরা নাহল:৬৮)।
আগে আমরা জানতাম কর্মী মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি। আজ আমরা জেনেছি কর্মী মৌমাছিদের আসলে কোন রাজা নেই আেছে রাণী আর কর্মী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি। কোরআন দেড় হাজার বছর আগে মৌমাছির লিঙ্গ সনাক্ত করেছিল ?
৩৬। কিছু রহস্যময় আয়াত :
১. ইলেকট্রিক বাল্ব : ” আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের নূর। তার নূরের উদাহরণ যেন এক কুলঙ্গি, যাতে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপিট একটি কাচপাত্রে আবদ্ধ। কাচপাত্রটি নাশপতি ফল বা পৃথিবীর আকৃতির। যাকে প্রজ্জলিত করা হয়, পবিত্র বৃক্ষের তেল দ্বারা, যা পূর্বমূখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। যার তেল আলোর ঠিক নিকটে থাকে, যদিও অগ্নি উহাকে স্পর্শ করতে পারে না। জ্যোতির উপরে জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথ দেখান তার জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (নূর:৩৫)
কার সাথে তুলনা করেছেন মহান আল্লাহ এই আয়াতে ? এটা কি আধুনিক যুগের ইলেকট্রিক বাল্ব নয় ? যা দেখতে পৃথিবীর মতই গোলাকার, কাচপাত্রে আবদ্ধ, যার তেল হচ্ছে ইলেকট্রন কনা, যার আলো সমভাবে ব্যাপ্ত হয় (কোন নির্দিষ্ট দিকে নয়) আর প্রজ্জলনের সময় এই তেলটা শিখার একেবারে কাছই থাকে, কিন্তু এই তেলে কখনো আগুন লাগে না। কি অবাক মিল এই বস্তুটির সাথে ?
দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ, যে ইলেকট্রিক বাল্ব দেখেনি, ইলেকট্রন এর বৈশিষ্ট জানেনা তাকে এর থেকে সহজ আর যৌক্তিক উপায়ে উলেকট্রিক বাল্ব সম্বন্ধে ধারনা দেয়া সম্ভব ?
২২. স্টেট অফ ম্যাটার : “কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল- আপনি আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি উহাকে আপনাকে এনে দিব। অত:পর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখতে পেলেন, তখন তিনি বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ”। (সূরা নামল : ৪০)
বস্তুর রুপান্তর করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, আলোর গতিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই টেকনোলজীকে বলে স্টেট অফ আর্ট বা ম্যাটার সাইন্স। এই তত্বটা নিয়ে সারা দুনিয়ায় ১৯৯৩ সালের পর থেকে ব্যাপক গবেষনা হচ্ছে। এমন একদিন আসবে হয়ত মানুষ চোখের পলকে একটি বস্তুকে আমেরিকা থেকে জাপানে পাঠিয়ে দিবে। এটা সম্ভব কারণ কোরআন বলছে হাজার হাজার বছর আগে সোলাইমান (আ এর যুগেই এমন ঘটনা ঘটে গেছে!
৩৭। কোরআনের ভবিষ্যতবানি :
১. মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে আল্লাহ তায়ালার আদেশে মুহাম্মদ (স মদিনায় হিযরত করেন। মদিনায় তিনি ও তার সাথিরা এতোটা নি:স্ব অবস্থায় পৌছান যে উনাদের মাথা গোজার ঠাই না থাকায় খোলা ছাপরার মদ্ধে দিন পার করছিলেন। এ কারনেই ওনারা আসহাফে সুফফা নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। তার উপর ছিল কাফেরদের আক্রনের ভয়। এমনি ভায়ানক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা ওহী পাঠালেন-
“তুমি মসজিদুল হারামে নিরাপদভাবে প্রবেশ করবে, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কোন ভয় ছারা। তোমার মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তিনি যানেন তোমরা যা জান না। এবং আদেশক্রমে এই জায়গায় তোমাদেরই জয় হবে।” (সুরা ফাতাহ:২৭)
সত্যি সত্যি কিছু কালের মদ্ধেই সমগ্র আরব ভূ-খন্ড আল্লাহর রাসূলের অধিকারে এসে গেল, আর মুহা্ম্মদ (স মক্কায় প্রবেশ করলেন কোন বাধা ছারাই। সামান্য কয়েকজন নি:স্ব গরীব লোক, ঐ সমস্ত লোককে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত করল, যারা সংখ্যায় ছিল অধিক, সময় ও পরিবেশ ছিল যাদের অনুকুলে এবং যাদের কাছে ছিল উন্নত সমরাস্ত্র ও ধন-সম্পদের প্রাচুর্য।
২. কোরআনের আর একটি ভবিষ্যতবানী, যার উল্লেখ আমি এখানে করতে চাই তাহলো- ইরানীদের উপর রোমানদের বিজয়।
“রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবকিছু নিচু জায়গায় এবং তারা পরাজয়ের পর বিজয়ী হবে এবং কিছু বছরের মদ্ধেই। অগ্র পশ্চাতের কাজ হাতেই, সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে।” (সূরা রুম:২-৩)
এই আয়াতগুলো নাযিল হয় ৬২০ সনে। তখন রোমান অর্থাৎ বাইজেন্টাইনরা, ইরান বা পারস্য শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিজেরা এতটাই দূর্বল হয়ে পরেছিল যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকবে কিনা এই নিয়ে শংসয় চলছিল। উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার ঠিক ৭ বছর পর ৬২৭ সনে রোমানরা অবিশ্বাস্যভাবে ইরানীদের পরাজিত করে। সত্যি প্রমাণিত হয় কোরআনের ভবিষ্যতবাণী।
আর একটি বিষয় খুবি চাঞ্চল্যকর। বলা হয়েছে “রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবচেয়ে নিচু জায়গায় (Adna al-ard পৃথিবীর নিম্নতম স্থান)। – রোমানরা ইরানীদের কাছে যে জায়গায় পরাজিত হয় সেটা হল ডেড সি বেসিন। এটি কি সত্যি পৃথিবীর নিম্নতম স্থান ?
আজকে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর নিম্নতম স্থান হল ডেডসি বেসিন, এই স্থানটি সমুদ্রতল থেকে মিটার নীচে অবস্থিত। পূর্বে নিশ্চয়ই এটি জানা অসম্ভব ছিলো যে, এটিই পৃথিবীর সবচাইতে নিচু জায়গ। মহানবী (স এই জাযগাটির গভীরতা কি দিয়ে পরিমাপ করেছিলেন ?
৩. কোরআনের ভবিষ্যতবানীর আরেকটি দৃষ্টান্ত সূরা কাওসার। বিশ্বনবী (সএর পুত্র সন্তান মারা যাওয়ায় এবং তার দ্বিতীয় কোন জীবিত পুত্র সন্তান না থাকায় কোন কোন অজ্ঞ মুশরিকরা বলত, মুহাম্মদ (স এর বংশ নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। যে লোকটি রাসূল (স কে ‘আবতার’ বা বংশহীন বলে উল্লেখ করত পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাকেই ‘আবাতার’ বলে উল্লেখ করেছেন।বাস্তবেও হয়েছে তাই। লোকটির সন্তানাদি থাকা সত্বেও দু্ই প্রজন্ম পরই তার বংশ নিশ্চিহৃ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বনবী (স এর পবিত্র বংশধারা (আওলাদে রাসূল) তার কণ্যা হযরত ফাতেমা (রা এর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে এবং তা আজো অব্যাহত রয়েছে। পবিত্র বৃক্ষের মত এর শাখা-প্রশাখা আজো ক্রমবর্ধমান। মহান আল্লাহ পাক সূরা কাওসারে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওসার (তথা ব্যাপক কল্যাণ ও বরকত) দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নাময পড়ুন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বর্শ।”
৪. ফেরাউনের লাশ সংরক্ষন :
কোরআনে আছে ফেরাউন ডুবে মারা গেছে আর মৃত্যুর পরও তার শরীর অক্ষত রাখা হবে, পরবর্তি সীমালংঘনকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে।
“বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী, অত:পর তাদের পশ্চাদ্ভাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্ধেশ্যে, এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করলো, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া যার ইবাদত করে বনী ইসরাঈলরা। অতএব আজকের দিনে রক্ষা করছি আমি তোমার দেহকে যাতে তা তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নি:শন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।” (সূরা ইউনুস:৯২)।
ঐতিহাসিকগণ ১৮৯৮ সালে ফেরাউনের লাশ উদ্ধার করেন। যা আজ মিশরের কায়রোতে দ্যা রয়েল মমী হলে একটি কাচের সিন্দুকের মধ্যে রয়েছে। এর দৈর্ঘ ২০২ সেন্টিমিটার। ৩১১৬ বছর পানির নীচে থাকা সত্ত্বেও তার লাশে কোন পচন ধরে নি। এটা কি মোটেও যৌক্তিক ? মুহাম্মদ (স এর যুগের আরব জাতি ও অন্যরা মিশরীয়দের মধ্যে, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিংবা তার লাশ যে সংরক্ষিত হবে এরকম ভবিষ্যতবানী করা এবং তা মিলে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব।
ইরাম শরহ এর রহস্য :
কোরআন মাজিদের সূরা আল ফজর এর সাত নং আয়াতে ইরাম নামক একটি শহর এর ধ্বংস এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইরাম নামক কোন শহর এর নাম পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায় না। এজন্য ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকগণ ঐ শহরটির সম্বন্ধে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। বহুদিন ধরেই বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল কোরআন।
১৯৭৩ সালে সিরিয়ার এরলুস নামক একটি প্রাচিন শহর খননের সময় কিছু শিলালিপি পাওয়া যায়। এ সমস্ত লিপি পর্যবেক্ষন করে সেখানে ৪০০০ বছরের পুরনো একটি সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। শিলালিপিগুলোতে উল্যেখ পাওয়া যায় ইরাম নামক একটি শহরের নাম, যে শহরের সাথে তৎকালীন এরলুস শহরের লোকজন ব্যবসা-বানিজ্য করতো।
এই সত্যটা অবিস্কার হলো মাত্র সেদিন, ১৯৭৩ সালে। এর আগে কেউ এই শহরের রহস্য জানতো না। অথচ কোরআন শহরটির কথা বলে গিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। কোরআনের উৎস কোথায় ?
কোরআনের শব্দ রিপিটেশন চ্যালেঞ্জ :
কোরআনের আয়াত রচনার জন্য Choose করা বিভিন্ন শব্দগুলো নেয়া হয়েছে বিশেষ নিয়মে। একই অর্থবোধক ও বিপরীত অর্থবোধক শব্দগুলোর রিপিটেসনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে। যেমন, দিন, মাস, ঘন্টা। কতগুলো শব্দের রিপিটেসন পর্যবেক্ষনগত নিরিক্ষনের সাথে আর্শ্চাভাবে মিলে গেছে। যেমন ভুমি ও জলাভুমি। এমনকি তুলনা ও ফলাফলগত শব্দগুলির মধ্যেও সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। আমরা নিচে শ্রেনীবদ্ধভাবে এগুলোর আলোচনা পাব।
ক. একদিনে কত ঘন্টা হয় ? কোরআনে ঘন্টা অর্থে ‘সায়াত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৪ বার।
একবছরে কতদিন হয় ? কোরআনে ‘দিন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ৩৬৫ বার। (একবচনে)
এভাবে বহুবচনে দিন (days) শব্দটি এসেছে ৩০ বার। (আরবীতে ৩০ দিনে হয় একমাস)।
মাস শব্দটি এসেছে ১২ বার। (একবছর হয় ১২ মাস এ)
চাদ শব্দ- ২৭ বার। (চাদ পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২৭.২৩ দিন)। এখানে অনেকে বিভ্রান্তিতে পরতে পারেন, পূর্ণচন্দ্রের সময (২৯.৫৩ দিন) এর সাথে। এই সময়টা লাগে চাদের এক পূর্নিমা থেকে আরেক পুর্ণিমা পর্যন্ত পৌছতে। আর এটা দিয়ে আরবী মাস হিসেব করা হয়)।
বছর শব্দটি কোরআনে এসেছে ১৯ বার। এর পেছনেও সুনির্দিষ্ট কারন আছে। লিপ-ইয়ার এর মাধ্যমে সৌরবর্ষ সঠিক করা হয়। পৃথিবী যে সময়ে (৩৬৫ দিন) সূর্যের চারিদেকে একবার ঘুরে সেই সময়ে চাদ প্রায ১২ বার (একটু কম) পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে। প্রথমটা দিয়ে সৌরবর্ষ আর পরেরটা দিয়ে চন্দ্রবর্ষ হিসেব করা হয়। এভাবে পৃথিবী ও চাদ যে স্থান থেকে ঘুরা শুরু করেছিল ঠিক সেই অবস্থানে আসতে সময় লাগে ১৯ বছর। আর কোরআনে ঠিক ১৯ বারই এসেছে বছর শব্দটি। কি অনুপম মিল রাখে এই কোরআন।
খ. শাস্তি-১১৭ বার, ক্ষমা- ২৩৪ (২*১১৭) বার।
গরিবী- ১৩ বার, প্রাচুর্য- ২৬ (১৩*২) বার।
ধার্মিক- ৬ বার, নাস্তিক- ত বার।
প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত দয়ালু (রহমত)- ১১৪ বার। দয়াবান (রহিম)- ১১৪ বার, সদয় (রহমান)- ৫৭ বার (৫৭*২=১১৪) বার করে এসেছে।
আশা এবং ভয় শব্দ দুটি এসেছে = ৮ বার।
গরম এবং ঠান্ডা = ৪ বার।
কালু (তারা বললো) এবং কুল (তুমি বল) = ৩৩২ বার।
বীজ এবং চারা এবং ফল = ১৪ বার।
অশ্লিলতা এবং পথভ্রষ্ট এবং সীমালংঘনকারী = ২৪ বার।
পাপ = ৪৮ (২৪*২) বার।
দুনিয়া এবং আখেরাত = ১১৫ বার।
পবিত্র এবং অপবিত্র = ৭ বার।
অপবিত্রতা এবং নোংরামী = ১০ বার।
উপকার এবং অপকার = ২০ বার।
খোলামেলা এবং জনসম্মুখে = ১৬ বার।
ফেরেশতা এবং শয়তান = ৮০ বার।
যাদু এবং প্রলুব্ধকারী = ৬০ বার।
ভাষা এবং উপদেশ = ২৫ বার।
ক্ষমা এবং পথ-প্রদর্শক = ৭৯ বার।
ন্যায়নিষ্ট এবং পুরুস্কার = ২০ বার।
গন্তব্যহীন এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল = ২৮ বার।
বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস = ২৫ বার।
যাকাত এবং আর্শিবাদ = ৩২ বার।
সাত বেহেশ্ত এবং বেহেশ্ত তৈরীকরণ = ৭ বার।
সূর্য এবং আলো = ৩৩ বার। সুবিচার এবং অবিচার = ১৫ বার।
খুবি অল্প এবং উপলব্ধিযোগ্য = ৭৫ বার।
নবী এবং সাধারণ মানুষ = ৩৬৮ বার।
লাভ এবং ক্ষতি = ৯ বার।
কেয়ামতের প্রথম ফুৎকার এবং দ্বিতীয় ফুৎকার শব্দ দুটি এসেছে = ৫ বার।
ঘ. মানুষ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার।
মানুষ = ( মাটি- ১৭ বার + বীর্য ফোটা- ১২ বার + ভ্রুন- ৬ বার + মাংসপিন্ড- ৩ বার + হার- ১৫ বার + মাংস- ১২ বার) = ৬৫।
অর্থাৎ মানুষ তৈরীর বিভিন্ন উপাদানগুলো কোরআনে যতবার করে এসেছে এই রিপিটেসনের সংখ্যার যোগফল আর মানুষ শব্দটির শব্দটার রিপিটেসনের সমান। (মানুষ= মটি+বীর্যফোটা+ভ্রুন+মাংসপিন্ড+হার+মাংস)
এটা কি এমনি এমনি মিলে গেছে ?
চ. বর্তমান বিজ্ঞান নিরীক্ষনের মাধ্যমে দেখিয়েছে পৃথিবীতে স্থলভাগের মোট আয়তনের ২৯ ভাগ আর জলভাগের পরিমান ৭১ ভাগ প্রায়। চলুন দেখি কোরআন কি বলে-
কোরআনে সমুদ্র বা জলাধার শব্দটি এসেছে ৩২ বার।
ভুমি বা জমি শব্দটি এসেছে ১৩ বার।
এদের রিপিটেশন এর পরিমানকে অনুপাতে প্রকাশ করলে পাওয়া যায়-
স্থলভাগের পরিমাণ = {১৩/(১৩+৩২)}=২৮.৮৮৮%
জলভাগের পরিমান = {৩২/(১৩+৩২)}=৭১.১১১%
দেড় হাজার বছর আগের কোন মানুষ কি জানতো পৃথিবীর জলভাগ আর স্থলভাগের অনুপাত কতো! এভাবে মিলে যাওয়ার কি কারন থাকতে পারে ?
ছ. আসহাবে কাহাফ বা গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা থেকে জানা যায় ওরা গুহার ভিতর ৩০৯ বছর ঘুমন্ত ছিল। এই গুহার অধিবাসিদের বর্ণনা আছে, কোরআনের সূরা কাহাফের ৯ থেকে ২৫ নং আয়াতে। এই আয়াত কয়টির মোট শব্দের সংখ্যা গণনা করুন্ ৩০৯ টি শব্দ পাবেন!
জ. সামুদ জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনা বলতে গিয়ে কোরআন বলেছে ভয়ংকর এক শব্দের মাধ্যমে আজাবের কথা। এখানে আজাবের উপকরন “ভয়ংকর শব্দ”। আবার লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার কথা বলতে গিয়ে কোরআন বলছে পাথর-বৃষ্টির কথা। এখানে আজাবের উপকরণ “পাথব বা শিলা-বৃষ্টি”।
ভয়ংকর শব্দ – ১৩, সামুদ জাতি – ২৬ (১৩*২) বার করে এসেছে।
পাথর বৃষ্টি – ৪ বার, লুত সম্প্রদায় – ৮ (৪*২) বার করে এসেছে।
লক্ষনীয় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতীর রিপিটেশন, ধ্বংস করার উপকরণের রিপিটেশনের দ্বিগুন।
ঝ. কোরআন অনেক জায়গায় তুলনা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হলো যে দুটি শব্দের মাঝে তুলনা করা হয়েছে ঐ দুটি শব্দ কোরআনে সমপরিমান সংখ্যায় এসেছে।যেমন-
১. “আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমরে মত”। (আল-ইমরান : ৫৯)।
২. যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মত”। (সূরা আরাফ)
যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অস্বীকার করে বাক্যটি কোরআনে এসেছে ৫ বার। আবার কুকুর শব্দটিও কোরআনে এসেছে ৫ বার।
ঞ. কোন কাজ করলে সেই কাজের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল সম্পর্কিত রিপিটেশন সমান সংখ্যায় এসেছে কোরআনে।
১. যাকাত দিলে বরকত আসে। তাই যাকাত ও বরকত শব্দ দুটি এসেছে ৩২ বার করে।
২. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদ করা। তাই “মানুষ সৃষ্টি” ও “ইবাদত” শব্দ দুটি এসেছে ১৬ বার করে।
৩. গোলামের কাজ হলো গোলামী করা। গোলাম ও গোলামী শব্দ দুটি এসেছে ১৫২ বার করে।
৪. নেশা করলে মাতাল হয়। “নেশা” ও “মাতাল” শব্দ দুটি এসেছে ৬ বার করে।
৫. হায়াত লাভ করলে মউত হবেই। তাই হায়াত ও মউত শব্দ দুটি এসেছে মোট ১৬ বার করে।
৬. মানুষ হেদায়েত পেলে তার উপর রহমত বর্ষিত হয়। হেদায়েত ও রহমত শব্দ দুটি এসেছে মোট ৭৯ বার করে।
৭. কাজ করলে কাজের ফলাফল হবে। কাজ – ১০৮ বার ফলাফল ১০৮ বার।
কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে – “এটি যদি আল্লাহর বানী না হত তাহলে এতে অনেক ভুল এবং পার্থক্য লক্ষ্য করা যেতো।”
এইটা কি করে সম্ভব ? !!!
ক. কোরআনে Specially চাদকে নিয়ে একটি সূরা লেখা হয়েছে। ৫৪ নং সূরা; সূরা আল-ক্বামার। ক্বামার অর্থ চাদ।
মানুষ প্রথম চাদে পদার্পন করে ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দে। যদিও চাদে অবতরন নিয়ে রাসিয়ানরা প্রথমদিকে সন্দিহান ছিলেন কিন্তু কেউই রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘটনাটার মোকাবেলা করার সাহস পায়নি। এবং প্রথম চাদে অবতরনের বছর হিসেবে ১৯৬৯ সালই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে লক্ষনীয় যে ১৯৬৯ সাল হল হিজরী ১৩৮৯ সাল।
১. এখন সূরা আল-ক্বামার এর প্রথম আয়াত “কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ন হয়েছে” এই আয়াতটির আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৮৯ । যেমন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এই আয়াতটির আক্ষরিক মান ৭৮৬।
২. এই সূরাটির প্রথম আয়াত থেকে শুরু করে গুনে গুনে কোরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত গুনলে মোট আয়াত সংখ্যা হয় ১৩৮৯ টা।
এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতেই বলা হয়েছে, “এরা কোন নিদর্শন দেখলে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটাতো একটা চিরাচরিত (স্বাভাবিক ) ব্যাপার” – (আল-কামার : ০২)।
আমি জানিনা এই সূরার অবস্থান এবং এর পরবর্তি সূরাগুলোর আয়াত কাঠামো, আর এই সূরাটির প্রথম আয়াতের গঠন, কেন এভাবে চাদে অবতরনের বছরের সাথে মিলে যায়! তবে এটা কিছুটা বুঝতে পেরেছি, কেন আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন- তার নিদর্শন সম্বন্ধে।
এটা অসম্ভব! পৃথিবীর ইতিহাসে আরো লক্ষ কোটি ঘটনা আছে। তাদের মধ্য হতে বেছে বেছে শুধুমাত্র চাদের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই বছরটার সাথে এতো অবিকলভাবে এগুলোর এরকম মিলে যাওয়যটার সত্যি কোন ব্যাখ্যা হতে পারে না!
খ. “তিনিই সর্বোচ্চ ডিগ্রীর অধিকারী, আর তিনিই আরশের মালিক” (সুরা মুমিন : ১৫)।
এ আয়াতে ডিগ্রী শব্দটি বুঝাতে আরবী “রাফিই” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে । রাফিই শব্দটির সংখ্যাগত মান ৩৬০ । রা-২০০, ফা-৮০, ইয়া-১০, আইন-৭০। আজকের বিশ্বে সর্বোচ্চ ডিগ্রী যে ৩৬০ ডিগ্রী ধরা হয়, এটা কে না জানে! কথা হচ্ছে ডিগ্রী বুঝাতে কোরআনের “রাফিই” কেই ব্যাবহার করতে হবে ! যার সংখ্যাগত মান ৩৬০ ?
কুরআনে ১৯ সংখ্যাটির প্রয়োগ :
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ এখানে ১৯ টি অক্ষর দ্বারা বাক্যটি গঠিত যা একটি সুরা বাদে প্রতিটি সুরার শুরুতে ব্যবহার করা হয়েছে
ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺗِﺴْﻌَﺔَ ﻋَﺸَﺮَ
٧٤ :٣٠
ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔًۙ ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻋِﺪَّﺗَﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﺘْﻨَﺔً ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻟِﻴَﺴْﺘَﻴْﻘِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﻳَﺰْﺩَﺍﺩَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎۙ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺮْﺗَﺎﺏَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَۙ ﻭَﻟِﻴَﻘُﻮﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻢ ﻣَّﺮَﺽٌ ﻭَﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻬَٰﺬَﺍ ﻣَﺜَﻠًﺎۚ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻳُﻀِﻞُّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳَﻬْﺪِﻱ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀُۚ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺟُﻨُﻮﺩَ ﺭَﺑِّﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۚ ﻭَﻣَﺎ ﻫِﻲَ ﺇِﻟَّﺎ ﺫِﻛْﺮَﻯٰ ﻟِﻠْﺒَﺸَﺮِ [ ٧٤ :٣١ ]
“এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ । আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি-যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান। আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।। (সূরা মুদ্দাসসির : ৩০,৩১)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্যে ও ১৯ জন ফেরেশ্তা রাখা হয়েছে। আর তাদের সংখ্যাকে কাফেরদের পরিক্ষা করার জন্য নিধারণ করা হয়েছে। একই সাথে কিতাবীদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে আর মুমিনদের ইমান বৃদ্ধির কাজেও নাকি লাগবে!
১৯৭৪ সালে প্রথম আবিস্কৃত হয় যে, কোরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি শব্দ ১৯ সংখ্যার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পরে আরো ব্যপক গবেষণার ফলে ফলাফল এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যে কেউ সামান্য গুন, ভাগ বুঝতে পারলে, কোরআনে ১৯ এর প্রয়োগ বুঝতে পারবে। এসব গবেষণার ফল আমাদেরকে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই কিতাবটিতে ১৯ সংখ্যাটিকে একটি গানিতিক কোড হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। যা কিতাবটিকে সুরক্ষিত করেছে।
চলুন দেখি কিভাবে ১৯ সংখ্যাটি কিতাবী আর মুমিনদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে সাহায্য করে-
১. কোরআনে মোট ১১৪ টি সূরা আছে। ১১৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১১৪/১৯=১৬।
২. প্রথম আয়াত নাযিল করা হয় সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত। যাতে ১৯ টি শব্দ আছে। এই ১৯ টি শব্দের মধ্যে ৭৯ টি অক্ষর। ৭৬ শব্দটিও ১৯ দ্বারা নি:শেষে বিভাজ্য। ৭৬/১৯=৪ ।
সূরাটিতে মোট ২৮৫ টি অক্ষর আছে । যা এই সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ১৯ ।
সুরাটি যদিও নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে সবার আগে কিন্তু কোরআনে এর অবস্থান ৯৬ তম। যদি উল্টা দিক থেকে গুনা শুরু করেন (অর্থৎ সূরা নাস কে ১, ফালাক কে ২ এভাবে) তাহলে এই সূরাটির অবস্থান হবে ১৯ তম।
সূরা মুদদাসসির এর ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “এর উপর রয়েছে ১৯” যা আমি শুরুতে একবার বলেছি। ঘটনা তা না, ঘটনা হল- আল্লাহ তায়ালা সূরা মুদদাসসির এর ৩০ নং আয়াতটি নাযিলের পর একটু বিরতি দিয়ে সুরা আলাকের বাকি ১৪ টি আয়াত নাযিল করেন। এর ফলে পুর্বে নাযিলকৃত ৫ আয়াত সহ, গোটা সূরা আলাকের আয়াত দাড়ালো ১৯ । সূরাটিতে ১৯ এর যে আকষ্যিক কোন কারিসমা রচিত হয় নি, বরং এর পিছনে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার সূক্ষ ইচ্ছা তা এই ঘটনার রহস্য বুঝে বুদ্ধিমানরা সহযেই আন্দাজ করতে পারবেন।
৩. কোরআনের সর্বশেষ সূরাটি হল সূরা আন-নাস। এটি ১১৪ তম সূরা। এ সূরার শব্দ সংখ্যা হল ১৯। আর এই ১৯ টি শব্দে আছে মোট ৬ টি আয়াত। ১৯*৬=১১৪। কি অদ্ভুত মিল!
৪. প্রথম ওহী সূরা আলাকের প্রথম পাচটি আয়াতের শব্দসংখ্যার মতই কোরআনের আরো বহু পরিসংখ্যান ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
কোরআন যিনি নিয়ে এসেছেন তিনি রাসূল। রাসূল শব্দটি এসেছে- ৫১৩ বার।
যার বানি রাসূল নিয়ে এসেছেন তিনি রব। রব শব্দটি এসেছে- ১৫২ বার।
কোরআনের কেন্দ্রীয় বানি হচ্ছে ইবাদাত। ইবাদাত শব্দটি এসেছে- ১৯ বার।
কেন্দ্রীয় বানির অপর পরিভাষা হচ্ছে আবদ। আবদ শব্দটিও এসেছে- ১৫২ বার।
আবদ এর কাজ যে করবে তাকে বলে আবীদ। আবিদ শব্দটিও এসেছে- ১৫২ বার।
এ সব কটি পরিসখ্যানই ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
৫. কোরআনে “সংখ্যা” এর উল্লেখ আছে ২৮৫ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য। আবার কোরআনে যে সংখ্যাগুলো উল্লেখ আছে তাদের যোগফল করলে দাড়ায় ১৭৪৫৯১, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৬. কোরআনে বিভিন্ন সূরা শুরু হয়েছে বিচিত্র কিছু বর্ণমালা দিয়ে। এগুলোর কোন অর্থ কেউ এখনো বের করতে পারেনি। এগুলোকে বলা হয় “হরুফে মুকাত্তায়াত”। যেমন আলিফ-লাম-মিম, হা-ত্বোয়া-সিন ইত্যাদি।
ক. হরুফে মুকাত্তায়াত আছে ২৯ টি সূরার শুরুতে। হরুফে মুকাত্তায়াত মোট ১৪ টি মৌলিক বর্ণ সমাহারে গঠিত। ১৪ টি বিভিন্ন সমাহারে এই বর্ণগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। এদের যোগফল ২৯+১৪+১৪=৫৭, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
খ. “আলিফ-লাম-মিম” এই হরুফে মুকাত্তায়াতটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬ টি সূরার শুরুতে। সূরা বাকারা, সূরা আল-ইমরান, সূরা আনকাবুত, সূরা রুম, সূরা লুকমান, ও সূরা সাজদায়। এ সূরা গুলোর মধ্যে আলিফ, লাম ও মিম যতোবার করে এসেছে তার যোগফল ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে এ যে এক অসম্ভব কল্পনা!
সূরা বাকারা : আলিফ-৪৫০২ লাম-৩২০২ মিম-২১৯৮ মোট- ৯৮৯৯ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা আল ইমরান : আলিফ-২৫২১ লাম-১৮৯২ মিম-১২৪৯ মোট-৫৬৬২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা আনকাবুত : আলিফ-৭৭৪ লাম-৫৫৪ মিম-৩৪৪ মোট- ১৬৭২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা রুম : আলিফ-৫৪৪ লাম-৩৯৩ মিম-৩১৭ মোট- ১২৫৪ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা লূকমান : আলিফ-৩৪৭ লাম-২৯৭ মিম-১৭৩ মোট- ৮১৭ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা সাজদা : আলিফ-২৫৭ লাম-১৫৫ মিম-১৫৮ মোট- ৫৭০ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এর পরও কি কোন অবিশ্বাসী থাকতে পারে ?
আসুন এবার দেখি এই ছয়টি সূরাতে আলিফ লাম আর মিমের মোট অবস্থাটা কি দ্বারায়।
উল্লেখিত ছয়টি সূরাতে আলিফ মোট ৮৯৪৫ বার, লাম মোট ৬৪৯৩ বার, মিম মোট ৪৪৩৬ বার এসেছে। এদের মোট যোগফল ১৯৮৭৪, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযিম।
গ. সূরা মারইয়াম এর হরুফে মুকাত্তায়াত : ক্বাফ, হা, ইয়া, আইন, সোয়াদ। এ সূরায় ক্বাফ-১৩৭ বার, হা-১৭৫ বার, ইয়া-৩৪৩ বার, আইন-১১৭ বার, সোয়াদ- ২৬ বার করে এসেছে। এদের যোগফল- ৭৯৮, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ঘ. সূরা আরাফ এর হরুফে মুকাত্তায়াত : আলিফ, লাম, মিম, সোয়াদ। এ সূরায় আলিফ ২৫২৯ বার, লাম ১৫৩০ বার, মিম ১১৬৪ বার, সোয়াদ ৯৭ বার করে এসেছে। এদের যোগফল- ৫৩২০, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ঙ. সূরা মুমিন থেকে সূরা আহক্বাফ পর্যন্ত ৭ টি সূরার শুরুতে রয়েছে একই হরুফে মুকাত্তায়াত; হা-মিম। এ সাতটি সূরায় হা ও মিম এই অক্ষরগুলো যতবার ব্যাবহার হয়েছে তার যোগফল ২১৪৭। এ সংখ্যাটিও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
চ. সূরা ইউসুফ, সূরা ইব্রাহীম ও সূরা হেজর এর হরুফে মুকাত্তায়াত হচ্ছে আলিফ-লাম-রা।
সূরা ইউসুফ এ আলিফ-লাম-রা এসেছে মোট ২৩৭৫ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য।
সূরা ইব্রাহীম এ আলিফ-লাম-রা অক্ষরগুলো এসেছে ১১৯৭ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভায্য।
সূরা হেজর এ আলিফ-লাম-রা অক্ষরগুলো এসেছে ৯১২ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এছাড়া সূরা ইউনুস ও সূরা হুদ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-রা দিয়ে। এ দুটি সূরাতে এই আক্ষরগুলো ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৮৮৯ বার। এ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ছ. সূরা রাদ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-রা এই অক্ষর ৪টি দিয়ে। এই সূরাতে এই চারটি অক্ষর এসেছে মোট- ১৪৮২ বার; যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
জ. হরুফে মুকাত্তায়াত সম্বলিত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে সূরা কালাম। এই সূরার শুরু মাত্র একটি অক্ষর দিয়ে- নুন। এই সূরাটিতে নুন অক্ষরটি এসেছে ১৩৩ বার, এটিও নি:সন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৭. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
ক. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এই আয়াতটি লিখতে ১৯ টি অক্ষর লাগে। কোরআনে মোট ১১৪ বার এই আয়াত এসেছে। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
খ. এই আয়াতে মোট চারটি শব্দ আছে। ইছেম, আল্লাহ, রহমান ও রহীম। ঘটনা তা না; ঘটনা হল এই চারটি শব্দ কোরআনে যতবার করে এসেছে সেই সংখ্যাগুলো ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ইছেম – ১৯ বার এসেছে; ১৯/১৯=১।
আল্লাহ – ২৬৯৮ বার এসেছে; ২৬৯৮/১৯=১৪২।
রহমান – ৫৭ বার এসেছে; ৫৭/১৯=৩।
রহীম – ১১৪ বার এসেছে; ১১৪/১৯=৬।
এমনকি ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর যে সংখ্যাগুলো পাওয়া গেলো এদের যোগফলও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। (১+১৪২+৩+৬) = ১৫২ (১৯*৮) কি পরাক্রান্ত সেই মহাপ্রজ্ঞাময়!
গ. কোরআনে এই চারটি শব্দের অন্তত একটি শব্দ আছে এরকম আয়াতের সংখ্যা কত ? এরকম আয়াতের সংখ্যা ১৯১৯!!! যা নি:সন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ঘ. ইছেম শব্দটির অর্থ নাম। বাকি তিনটি শব্দ আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম। এই তিনটি শব্দের সংখ্যাগত মানের যোগফলও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য!
আল্লাহ (৬৬) + রহমান (৩২৯) + রহীম (২৮৯) = ৬৮৪। ৬৮৪/১৯=৩৬।
ঙ. হরুফে মুকাত্তায়াত সম্বলিত সূরাগুলোর মধ্যে এই চারটি শব্দ এসেছে মোট ১২৯২ বার। সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ইসেম ৩১ বার + আল্লাহ ১১২১ বার +রহমান ৬৬ বার + রহীম ৭৪ বার = ১২৯২ বার। ১২৯২/১৯=৬৮।
এতোটা কোডিং করে কি কিছু লিখা সম্ভব !
চ. আরেকটি আশ্চার্যের বিষয় : “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটির চারটি শব্দ কোরআনে যতবার যে সংখ্যায় এসেছে, শব্দগুলোর অপরিহার্য গুণবাচক শব্দটিও ঠিক ততবার করে এসেছে।
ইছেম এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “হয়াহেদ” এসেছে ১৯ বার।
আল্লাহ এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “যুল ফাদল” এসেছে ২৬৯৮ বার।
রহমান এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “মাজিদ” এসেছে ৫৭ বার।
রহীম এর অপরিহার্য গুনবাচক শব্দ “জামেউ” এসেছে ১১৪ বার।
ছ. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ আয়াতটিতে ব্যবহৃত ১৯ টি সংখ্যামানের সমষ্টি ৭৮৬ আয়াতটিতে একই অক্ষরের পুরাবৃত্তি বাদ দিলে মৌলিক অক্ষর থাকে মোট ১০ টি। আয়াতটিতে পুনরাবৃত্তি অক্ষরগুলোর সংখ্যামান ৪০৬। ৭৮৬ থেকে ৪০৬ বাদ দিলে থাকে ৩৮০।
যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
জ. সূরা তওবা “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে শুরু হয় নি। অন্যদিকে সূরা নামলে এই বাক্যটি ২ বার এসেছে। ফলে বাক্যটির মোট রিপিটেসন ১১৪ হয়েছে। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। একইসাথে সুরা তওবা থেকে সূরা নামল পর্যন্ত মোট সূরা সংখ্যা ১৯।
ঝ. সূরা নামল কোরআনের ২৭ নং সূরা। এই সূরার শুরুতে একবার এবং ৩০ নং আয়াতে একবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটি এসেছে। ৩০ তম সংখ্যাটি ১৯ তম নন প্রাইম সংখ্যা। (৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪,১৫,১৬,১৮,২০,২১,২২,২৪,২৫,২৬,২৭,২৮, ৩০)।
প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আছে ১১৩ টি সূরাতে। ১১৩ সংখ্যাটি অংকের ৩০ তম প্রাইম নাম্বার!
ঞ. যদি আমরা যোগ করি সূরা নামলের ক্রমিক নং (২৭) এবং রিপিট হওয়া “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর আয়াত নাম্বার (৩০), তাহলে যোগফল হবে ৫৭ ! যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
ট. ৯ নং সূরা (সূরা তওবা) তে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” নাই। ২৭ নং সূরাতে আছে দুই বার। যদি আমরা যোগ করি ৯ নং থেকে ২৭ নং সূরা পর্যন্ত, সূরার ক্রমিক নং গুলো (৯+১০+১১+…….+২৭) তাহলে যোগফল পাব ৩৪২। ৩২৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এই শেষ নয়!
২৭ নং সূরাটির ৩০ নং আয়াত যেখানে রিপিটেড “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাওয়া গেছে, সূরাটির প্রথম শব্দ থেকে রিপিটেড বিসমিল্লাহ শব্দ পর্যন্ত মোট শব্দ আছে ৩৪২ টি। এখানেই শেষ নয়!
৯ নং সূরার প্রথম থেকে শুরু করে ২৭ নং সূরার রিপিটেড “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পর্যন্ত মোট আয়াত সংখ্যা ৩৪২ টি।
এই পরিসংখ্যানগুলোর একটার সাথে আরেকটার গণনায় বাহ্যিক কোন সম্পর্ক নেই, অথচ এরা কি সামঞ্জস্যতার সাথে ঘোষণা দিচ্ছে রিপিটেড ও মিসিং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আয়াতটির অবস্থানগত কারনের!
ঠ. এবার আমরা একটু অন্যভাবে পরিক্ষা করবো কোরআনকে। আমরা সুরা নামলের ৩০ নং আয়াতকে মধ্য আয়াত ধরে (যে আয়াতে মিসিং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাওয়া গেছে) কোরআনকে দুই ভাগ করে ফেলব। এভাবে ভাগ করার পর দেখা যাবে, প্রথম ভাগে ইসেম+আল্লাহ+রহমান+রহীম শব্দের মোট সংখ্যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যাবে। এমনকি দ্বিতীয় ভাগেরটাও।
দুইভাগ করার পর প্রথম ভাগে শব্দের সংখ্যা :
ইসেম – ৯, আল্লাহ – ১৮১৪, রহমান – ৩৫, রহীম – ৮০ মোট ১৯৩৮
= ১৯*১০২।
দ্বিতীয় ভাগে শব্দের সংখ্যা :
ইসেম – ১০, আল্লাহ – ৮৮৪, রহমান – ২২, রহীম – ৩৪ মোট ৯৫০
= ১৯*৫০।
সুবহানআল্লাহ! —— তিনি অর্থহীন কিছুই করেন না।
৮. কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালার সর্বোমোট নামের সংখ্যা ১১৪ টি (মূল ও গুনবাচক মিলে), যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৯. আল্লাহ শব্দটি কুরআনে এসেছে ২৬৯৮ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯*১৪২=২৬৯৮।
এখানে ১৪২ সংখ্যাটির একটি তাৎপর্য খুজে পাওয়া গেছে।
কোরআনের কিছু সূরার প্রথম আয়াতে “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে। প্রথম আয়াতে শব্দটি এসেছে মোট ৪২ বার। এখন এই ৪২ এর সামনে আল্লাহ শব্দটির অত্যাবশ্যকীয় গুনবাচক সংখ্যা ১ বসিয়ে দিলে, পাওয়া যায় ১৪২! আরো আছে!
২৬৯৮ সংখ্যাটিরও একটা সুন্দর তাৎপর্য আছে। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নাম হলো ‘যুল ফাদল আল-আজিম’। এই নামটির সংখ্যাগত মান ২৬৯৮, কি অদ্ভুত মিল!
শুধু এটাই শেষ নয়। যে আয়াতগুলোতে “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে, তাদের ক্রমিক নাম্বারগুলো একত্র যোগ করলে পাওয়া যায় ১১৮১২৩, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯*৬২১৭, এখানেই যদি শেষ হতো!
প্রথম হরুফে মুকাত্তায়াত “আলিফ-লাম-মিম” আছে ২ নং সূরায়, আর শেষ হরুফে মুকাত্তায়াত “নুন” আছে ৬৮ নং সূরায়। ২ নং থেকে ৬৮ নং সূরা পর্যন্ত “আল্লাহ” শব্দটি এসেছে ২৬৪১ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। আর বাকি কোরআন জুড়ে শব্দটি এসেছে ৫৭ বার। এটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১০. সূরা ইয়াসিনে “ইয়া” হরফটি আছে ২৩৭ বার। আর “ছিন” হরফটি আছে ৪৮ বার। উভয়ের সমষ্টি ২৮৫, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ২৮৫/১৯=১৫।
১১. সূরা ত্বহা এর মধ্যে “ত্ব” হরফটি আছে ২৮ বার আর “হা” হরফটি আছে ৩১৪ বার। উভযের সমষ্টি ৩৪২, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ৩৪২/১৯=১৮।
১২. গোপন সূরার গোপন খবর:
কোরআন যে ১৯ সংখ্যার গানিতীক কোড দিয়ে সাজানো এটা প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৪ সালে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়।
আরবী “মুদ্দাসসির” শব্দটির অর্থ “লুকায়িত” বা গোপন। সূরা মুদ্দাসসির কোরআনের ৭৪ তম সূরা, আর এই সূরাতেই ১৯ সংখ্যাটির প্রয়োগ উল্লেখ করে একটি আয়াত (৩০ নং) আছে। যা এই অধ্যায়ের শুরুতে উল্লেখ করেছি। কথা হচ্ছে, যখন আমরা আবিষ্কৃত ১৯ আর সূরা মুদ্দাসসির এর কোরআনে অবস্থান ৭৪ কে পাশাপাশি বসাই, তখন যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা হলো ১৯৭৪, যা যে সালে বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে তার সমান।
হযরত ইসা (আ:) এর জন্মের পর ১৯৭৪ বছর ধরে একটা গোপন রহস্য মানবজাতীর জ্ঞানচক্ষুর আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন মহাশক্তিশালী বিচার দিনের মালিক !! কি মহামহিম তিনি!!!
রহস্য যদি এখানেই শেষ হয়ে যেতো! ইস! ——- কি পহাপরাক্রমশালী তিনি !!
১৯৭৪ সালটি যখন দুনিয়াতে চলছিল, তখন দুনিয়াতে হিজরী সাল চলছিল ১৩৯৩ সাল। কোরআন প্রথম নাজিল হওয়া শুরু হয় হিজরতের ১৩ বছর আগে। এই তের বছর ১৩৯৩ এর সাথে যোগ করলে মোট দাড়ায় ১৪০৯ বছর। অর্থাৎ কোরআন নাজিলের শরু থেকে শুরু করে মোট ১৪০৯ বছর পর কোরাআনের একটা “মুদ্দাসসির” বা “গোপন” রহস্য উন্মোচিত হয়। ১৪০৯ ?? এটার আবার গুরুত্ব কি ? হুমম—- ১৯ কে ৭৪ দিয়ে গুন করলে ১৪০৯ হয়ে যায় যে! ১৯*৭৪=১৪০৯।
রহস্যটা যদি এখানেই খতম হয়ে যেতো!
এই সূরার প্রথম দুই আয়াত এরকম ১. হে চাদরাবৃত ২. উঠুন সতর্ক করুন।
এই দুই আয়াতে মোট অক্ষর এর সংখ্যা ১৯ টি। আর আয়াতদুটির মোট সংখ্যাগত মান কত জানেন ? আপনি হয়তো ভাববেন আমি ভুল তথ্য দিচ্ছি, আসলে বলতে গিয়ে আমি আবেগাপ্লুত হযে যাচ্ছি ।এই আয়াতদুটির সংখ্যাগত মান হিসাব করলে তা দ্বারায় ১৯৭৪!!!!!! সতর্ক কেন করতে বলেছেন তিনি, বুঝেছেন ?
আয়াত দুটি হল, ইয়া আইয়্যুহাল মুদ্দাসসির, কুম ফাআনযির।
ইয়া=১০, আলিফ=১, আলিফ=১, ইয়া=১০, আলিফ=১, আলিফ=১, লাম=৩০, মিম=৪০, দাল=৪, ছা=৫০০, র=২০০, ক্বাফ=১০০, মিম=৪০, ফা=৮০, আলিফ=১, নুন=৫০, যাল=৭০০, র=২০০
মোট মান = ১০+১+১+১০+———-+১+৫০+৭০০+২০০=১৯৭৪।
এখা্নেই যদি শেষ হয়ে যেতো রহস্যের! সুবহানাআল্লাহ—তিনি কত মহান–!
সূরাটি ৭৪ নং সূরা, মুদ্দাসসির শব্দটা আছে ১ নং আয়াতে। সুতরাং ১ নং আয়াতকে কোথাও রেফার করা হয় (৭৪,১) লিখে। কমা ছারা সংখ্যাটি ৭৪১, কথা তা না, কথা হচ্ছে, এই ১ নং আয়াতটি থেকে শুরু করে , কোরআনের সর্বশেষ আয়াত পর্যন্ত গননা করলে মোট ৭৪১ টা আয়াত পাওয়া যায়। ৭৪১ আক্ষরটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য (১৯*৩৯=৭৪১)।
কোরআনে কিভাবে একেকটা আয়াত, একেকটা শব্দ, একেকটা অক্ষর এতো অবাক Mathematics কে মেনে চলতে পারে ? এগুলোকে কি বলবেন আপনি ? Coincidence ? আন্দাজে মিলে গেছে ?
দুনিয়ার কোন ঘটনাই কারণ ছারা ঘটে না। যা হোক মেনে নিচ্ছি আপনার কথা। আসুন আরো কিছু আন্দাজে (!) মিলে যাওয়া ঘটনা দেখি !
সূরাটিতে অগ্নি অর্থে “সাকার” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬, ২৭ ও ৪২ নং আয়াতে। যেগুলোতে বলা হচ্ছে, যারা সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখার পরও, কোরআনকে মানুষের উক্তি বলবে, তাদরেকে সাকার বা অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। এখন ২৬+২৭+৪২=৯৫, লক্ষনীয় ১৯*৫=৯৫।
এই ২৬, ২৭ ও ৪২ নং আয়াত তিনটির সংখ্যাগত মান (৫৫৬,৬৮৩,৬৬১) একত্রে যোগ করলে পাওয়া যায় ১৯০০, লক্ষনীয় ১৯*১০০=১৯০০।
আরো অবাক ব্যাপারটা হলো, যদি আমরা এই তিনটি আয়াতের সংখ্যাগত মানের সাথে, কোরআনের সূরাটির অবস্থান (৭৪) কে যোগ করি তাহলে আমরা সেই সালকে পাব যে সালে ১৯ এর রহস্য আবিষ্কার করা হয়। যে সূরাতে এতোকিছুকে গোপন করে রাখা হয়েছে, তার নাম মুদ্দাসসির কেন দেয়া হলো, এবার বুঝতে পেরেছি!
শেষ! না, এখনো হয় নি,——–
আপনি যদি সূরা মুদ্দাসসির পরেন, তাহলে দেখবেন, এই সূরাটির ১ টি আয়াত বাদে বাকি সব আয়াতগুলো খুব ছোট ছোট। আর এই অস্বাভাবিক আয়াতটা হচ্ছে সূরাটির ৩১ নং আয়াত। একমাত্র এই আয়াতেই ১৯ এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে বলা হয়েছে। সূরাটর ১ টি আয়াতে গড়ে যতগুলো অক্ষর এসেছে, তার ১২ গুন অক্ষর এসেছে এই ৩১ নং আয়াতে।
উল্লেখ্য কোরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত, সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত। সূরা বাকারতে একটি আয়াতে গড়ে যতগুলো অক্ষর এসেছে, তার সমান ৬ গুন অক্ষর এসেছে ২৮২ নং আয়াতটিতে। অর্থাৎ গড় অনুপাতের দিকে বিবেচনা করলে মুদ্দাসসির এর ৩১ নং আয়াতটি বাকারার ২৮২ নং আয়াতেরও ২ গুন। এই আয়াতটিতেই যেহেতু এসেছে ১৯ সংখ্যাটির কথা, তাই নিশ্চয়ই আয়াতটির মধ্যে ১৯ এর রহস্য লুকানো আছে ! আছে কি ?
আয়াতটিতে মোট ৫৭ টি শব্দ আছে। ১৯*৩=৫৭। আবার আয়াতটির যে বাক্যটিতে ১৯ অক্ষর আছে তাতে ৩ টি শব্দ আছে। ৩ এর একটা অর্থ আছে এখানে। তা হলো এই আয়াতে শব্দ সংখ্যা ৫৭, যেটা ১৯ কে ৩ দিয়ে গুন করে পাওয়া যায়।
আয়াতটির একটা বাক্য হলো, “——— আল্লাহ এর দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছেন?” এই বাক্যটিতে মোট ১৯ টা শব্দ আছে। আর আয়াতটির প্রথম থেকে এই আয়াত পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৩৮ টি। লক্ষনীয়, ১৯*২=৩৮। আরো লক্ষনীয় এই বাক্যটির পরের বাক্যগুলোতে মোট ১৯ টা শব্দ আছে।
প্রথম থেকে শুরু করে এই অস্বাভাবিক বড় আয়াতটি পর্যন্ত মোট আয়াত ৩০ টি। এই ৩০ টি আয়াতে মোট শব্দ সংখ্যা ৯৫ টি । লক্ষনীয, ১৯*৫=৯৫।
প্রথম থেকে শুরু করে এই আয়াতে উল্লেখিত “উনিশ” শব্দটি পর্যন্ত মোট ৩৬১ টি অক্ষর আছে। ৩৬১ কে ১৯ দিয়ে ভাগ করলে ১৯ পাওয়া যায়। (১৯*১৯=৩৬১)। সুবহানাল্লাহ——! এটা কি মোটেও মেনে নেয়ার মত !
সূরাটির প্রথম থেকে উনিশতম আয়াত পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৫৭ টি। ১৯*৩=৫৭।
সূরাটিতে ক্রমিক নম্বর সহ আয়াত আছে মোট ৫৬টা। আর ক্রমিক নম্বর ছারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আয়াতটি আছে সূরার শুরুতে। তাহলে মোট আয়াত ৫৬+১=৫৭। লক্ষনীয় ১৯*৩=৫৭। রাব্বুল আলামীন নিশ্চয়ই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কে “মুদ্দসসির” (গোপন) রেখেছেন সূরাটির নামটিকে শিল্পোত্তির্ণ করতে!
১৩. “হিসাব” শব্দের অদ্ভুত হিসাব :
“যাতে আল্লাহ জেনে নেন যে, রাসূলগণ তাদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কিনা। আল্লাহর সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন”। (সূরা জ্বীন : ২৮)।
এই আয়াতে “আদাদা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে হিসাব বুঝোতে। শব্দটি সূরা জ্বীনের সর্বশেষ আয়াতের সর্বশেষ শব্দ। লক্ষনীয়, কোরআনে ৫৭ (১৯*৩) প্রকারের বিভিন্ন সংখ্যা (আদ্দা) ব্যাবহার করা হয়েছে।
সূরা জ্বীন কোরআনের ৭২ নং সূরা আর “আদাদা” শব্দটি এসেছে এই সূরার ২৮ নং আয়াতে। এখন ৭+২+২+৮= কত ? = ১৯ !
“আদাদা” শব্দটি সুরাটির শেষ আয়াতের শেষ শব্দ। এই সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের শেষ শব্দগুলোর মোট অক্ষর সংখ্যা ১১৪। ১১৪=১৯*৬।
সূরাটির ২৮ টা আয়াত শেষ হয়েছে ২৮ টা শব্দ দিয়ে। কিছু কিছু শব্দ পুনরায এসেছে। এই পুনরায় আসা শব্দগুলোর রিপিটেসন বাদ দিলে পাওয়া যায় ১৯ টি মৌলিক শব্দ।
আর এই ১৯ টি মৌলিক শব্দ গঠিত হয়েছে ১৯ টি বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন সমাহারে। উল্লেখ্য আরবী বর্ণমালা ২৮ টি বিভিন্ন বর্ণ নিয়ে গঠিত।
“আদাদা” শব্দটি লিখা হয় আইন, দাল, দাল ও আলিফ বর্ণ দিয়ে। সূরা জ্বীন এ আইন ৩৭ বার, দাল ৫৪ বার, দাল ৫৪ বার, আলিফ ২১৬ বার করে এসেছে। এই অক্ষরগুলো মোট রিপিটেশন ৩৭+৫৪+৫৪+২১৬=৩৬১। ১৯*১৯ = কত ? ৩৬১! সুবহানাল্লাহ—– না জানি আরো কত হিসাব বাকি পরে আছে !
বুঝেছেন ! এতকিছু হিসেব করে এই একটি শব্দ “আদাদা” কে বসানো হয়েছে। কি বিষ্ময়কর এ মহাগ্রন্থ!
১৪. কোরআনে আসা সংখ্যাগুলো :
কোরআনে মোট ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যা এসেছে। কোরআনে আসা এই ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যার সমষ্টি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
(১*+২*+৩*+৪*+৫*+৬*+৭*+৮*+৯*+১০*+১১+১২*+১৯+২০+৩০*+৪০*+৫০+৬০+৭০*+৮০+৯৯+১০০*+২০০*+৩০০+১০০০*+২০০০+৩০০০+৫০০০+৫০,০০০+১০০,০০০=১৬২,১৪৬ (১৯*৮৫৩৪)।
এই সংখ্যাগুলোর মধ্যে স্টার দেয়াগুলো কোরআনে রিপিট করা হয়েছে। এদের রিপিটেসনকে ধরে নিয়ে যোগ করলে, যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। আর সংখ্যাটি হলো ১৭৪,৫৯১। ১৯*৯১৮৯!
মুহাম্মদ (স:) কি অংকের শিক্ষক ছিলেন? না ধর্মপ্রচারক? পৃথিবীর যে কোন অংকবিদ, ১৯ এর এরকম রহস্যভরা কোন বই লিখার সাহস করুক দেখি! আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন? নাকি ভয় পাচ্ছেন? রহস্য এখনো শেষ হয়নি—!!!
কুরআনে ৩০ টি পূর্ণ সংখ্যা ছাড়াও, ৮টি দশমিক সংখ্যার উল্যেখ আছে। এগুলো হলো- ১/২০, ১/৮, ১/৬, ১/৫, ১/৪, ১/৩, ১/২, ২/৩। এই আটটি সংখ্যাকে ধরলে কোরআনে মোট মৌলিক সংখ্যা দ্বারায় ৩৮টি। ৩৮ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ কোরআনে উল্যেখিত মোট সংখ্যার সংখাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
যেসব সংখ্যাকে ঐ সংখ্যা ও ১ ব্যাতিত অন্য কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না তাদেরকে প্রাইম নাম্বার বলা হয়। ১৯ একটি প্রাইম নাম্বার।
কুরআনে পূর্ণ সংখ্যার সংখ্যা ৩০ টি। আর ৩০ সংখ্যাটি অংকের ১৯ তম নন-প্রাইম সংখ্যা। (৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪,১৫,১৬,১৮,২০,২১,২২,২৪,২৫,২৬,২৭,২৮, ৩০)।
কুরআনে ৮টি দশমিক সংখ্যা আছে। অংকে ৮ নাম্বার প্রাইম নাম্বার হচ্ছে ১৯। গুনে দেখতে পারেন। (২,৩,৫,৭,১১,১৩,১৭, ১৯)।
১৫. ১৯তম অক্ষর ক্বাফ :
ক্বাফ অক্ষরটি সংখ্যাগত মানের দিক থেকে আরবী বর্ণমালার ১৯তম অক্ষর।
(আলিফ, বা, তা, ছা, জ্বিম, হা, খা, দাল, জাল, রা, ঝা, ছিন, সিন, সোয়াদ, দোয়াদ, ত্বো, জো, আইন, গইন, ফা, ক্বাফ)
যেহেতু ১৯ নাম্বার অক্ষর, তাই এটার মধ্যেও নিশ্চয়ই মিরাকল থাকবে—
ক. কোরআনের সকল সূরার ১৯ নং আয়াতগুলোতে ক্বাফ অক্ষরটি এসেছে মোট ৭৬ বার। ৭৬ কে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। ৭৬/১৯=৪।
খ. কোরআনে যেসব সূরার অবস্থানকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়, ঐ সকল সূরায় ক্বাফ এসেছে মোট ২২৮ বার। যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১৯ ৩৮ ৫৭ ৭৬ ৯৫ ১১৪ মোট
৮৬ ৭৪ ৪৯ ১৫ ৩ ১ ২২৮
১৬. এটাই শেষ আর লিখবো না—–
হা-মিম এই দুটি অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে কোরআনের ৭ টি সূরা। এগুলো হলো ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নং সূরা। সূরাগুলোতে হা ও মিম এই অক্ষর দুটি এসেছে এভাবে
সূরা নং হা মিম ডিজিট গুলোর যোগফল মোট ডিজিট
৪০ ৬৪ ৩৮০ ৬+৪+৩+৮+০ ২১
৪১ ৪৮ ২৭৬ ৪+৮+২+৭+৬ ২৭
৪২ ৫৩ ৩০০ ৫+৩+৩+০+০ ১১
৪৩ ৪৪ ৩২৪ ৪+৪+৩+২+৪ ১৭
৪৪ ১৬ ১৫০ ১+৬+১+৫+০ ১৩
৪৫ ৩১ ২০০ ৩+১+২+০+০ ৬
৪৬ ৩৬ ২২৫ ৩+৬+২+২+৫ ১৮
মোট ২৯২ ১৮৫৫ ১১৩
মোট হা-মিম =২১৪৭ (১৯*১১৩)!!! মোট ডিজিট = ১১৩।
শুধু এই নয়- যদি আমরা সূরাগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করি; এভাবে ৪০,৪১,৪২ এক গ্রুপে আর বাকী চারটি আরেকগ্রুপে, তাহলে প্রতি গ্রুপে হা-মিমের মোট সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য পাওয়া যাবে। আর উপরের টেবিলের মতই ডিজিটগুলোর মোট যোগফল, হা-মিমের মোট সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর যা থাকে তার সাথে মিলে যাবে!!!
হা-মিম, ১১২১ (১৯*৫৯) ও ১০২৬ (১৯*৫৪)টি। ডিজিটের যোগফল, ৫৯ ও ৫৪।
রাব্বুল আলামিন তার সব সৃষ্টির মধ্যেই, এরকম সামঞ্জস্য বজায় রেখে সৃষ্টি করেছেন। কেউ কেউ তা চোখ খুলে দেখেনা, ফলে বুঝেনা।
১০. কিভাবে এসব হলো !
আল্লাহ পাক কোরআনকে ১৯ সংখ্যাটির গানিতীক কোড দিয়ে সতর্কতার সাথে নাজিল করেছেন। আর দুটি উদাহরণ দেই, ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।
ক. আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বারটি জয়গায় লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্যেখ করেছেন। এবং প্রতিবার তিনি তাদের সম্বোধন করেছেন “কওমে লুত” বলে। কিন্তু সূরা ক্বাফ এর ১৩ নং আয়াতে তিনি লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে “ইখওয়ানুল লুত: বলেছেন; আর্থেল দিকে থেকে উভয়টাই সমান। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাহলে কেন এখানে “ক্বওমে লুত” শব্দটি ব্যাবহার করলেন না ?
কারণ এই সূরাতে এখানে “কওমে লুত” ব্যাবহার হলে এই সূরাতে “ক্বাফ” অক্ষরটির সংখ্যা ৫৮ হয়ে যেতো, যেটাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায় না। সে জন্য একই অর্থবোধক “ইয়াখওয়ানুল লুত” ব্যাবহার করে ক্বাফ এর সংখ্যা এই সূরাতে ৫৭ রাখা হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
থ. সূরা কাহফের ২৫ নং আয়াতটিতে ৩০৯ বছর বুঝানো হয়েছে এভাবে “ওরা গুহার ভিতরে ছিল ৩০০ বছর, তারা এর সাথে যোগ করেছে আরো ৯ বছর।”
আবার নূহ (আ:) এর সাথে সম্পর্কিত ৯৫০ সংখ্যাটি বলতে গিয়ে কোরআন ১০০০ ও ৫০ এর সাহায্য নিয়েছে এভাবে “১০০০ থেকে ৫০ বাদ দিলে যা হয়।”
এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ তায়ালা কি পারতেন না, এভাবে প্রকাশ না করে সংখ্যাগুলিকে সরাসরি প্রকাশ করতে ? অথবা কেন তিনি এমন পদ্ধতি ব্যাবহার করলেন ?
কারন ৯৫০ কে সরাসরি “৯৫০” লিখলে বা ৩০৯ কে সরাসরি “৩০৯” এভাবে লিখলে, কোরআনে যে সংখ্যাগুলি পাওয়া যাবে তাদের যোগফলকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যাবে না!
এভাবে কোরআন এর প্রতিটি আয়াত, এমনকি প্রতিটি শব্দ ১৯ এর গানিতিক রহস্যে সাজানো। একটি শব্দের হেরফের করা সম্ভব নয়। কি চমৎকার আর যৌক্তিক মহান প্রভুর নিদর্শণ!
১১. কেন এত ১৯ ? :
১৯ এর এতোসব প্রয়োগ দেখে হয়তো আপনার জানতে ইচ্ছে করছে, এটার কি দরকার ছিল অথবা কোরআনের বাহ্যিক অবস্থানের সাথে এর সম্পর্ক কি। উত্তরটা সহয। কোরআনকে যে কোন ধরনের বিকৃতি থেকে রক্ষা করা। আজ সারা পৃথিবীর প্রতিটা মুসলমানের ঘরে কোরআন আছে। এই কিতাব যেহেতু একটা ধর্মগ্রন্থ তাই এটা অবিকৃতির সাথে সবার ঘরে শোভা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলামের শত্রুরা বসে নেই। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম, কোরআনকে বিকৃত বইয়ের গাদায় ফেলতে। কোরআনকে কেউ যদি বিকৃত করার চেষ্টা করে তা এখন ধরা সম্ভব, ১৯ এর ম্যাথমেটিক্যাল কোড দিয়ে। মহান আল্লাহ এটাকে এমন একটা রক্ষাকবচ বানিয়ে দিয়েছেন, যেটা কোন মানব মস্তিস্ক চিন্তা করারও শক্তি রাখে না।
সুবহানাল্লাহ——
চলুন দেখি এভাবে মিলে যাওয়া কতটা সহয —
আপনি অংকের সম্ভাবনা অধ্যায়টার প্রথম কয়েকটি রুল জানলেই, নিচের আলোচনাটা বুঝতে পারবেন।
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যকার যে কোন একটি শব্দের রিপিটেশনের পরিমান ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, এর সম্ভাবনা = ১/১৯
তাহলে চারটি শব্দেরই রিপিটেসনের পরিমান ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, এর সম্ভাবনাও একইভাবে ১/১৯4
এই চারটি শব্দের অপরিহার্য গুনবাচক শব্দগুলো ততবারই এসেছে যতবার মুল শব্দ এসেছে। এরুপ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাও একইভাবে ১/১৯4
২. এই চারটি শব্দের রিপিটেশন সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে ভাগ করার পর প্রাপ্ত সংখ্যাগুলোর যোগফলকেও ১৯ দ্বারা ভাগ করা সম্ভব। এরুপ হওয়ার সম্ভাভবনা ১/১৯²।
৩. আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নামের সংখ্যাগত মান ২৬৯৮, আল্লাহ শব্দটার রিপিটেশন সংখ্যা ১৬৯৮ এর সাথে মিলে যাবে এরুপ হওয়ার সম্ভাবন ১/২৬৯৮4।
আর বেশি না করি। দেখি এ পর্যন্ত কত দাড়ালো!
উপরে ১,২ ও ৩ নং পয়েন্ট একইসাথে ঘটার সম্ভাবনা ১/১৯4x১/১৯4x১/১৯²x১/২৬৯৮4 = ১/৩২৪৮,৬৫৬৪,৮২৫৫,৭১০১, ৮৪৬৮,৫০৭৮,৪১৬।
আজব! পড়তে পড়তে পারলে পড়েন সংখ্যাটা। এর কোন অস্তিত্ব আছে!!
ভুলে যাবেন না আবার- এটা শুধুমাত্র “বিসমিল্লাহ” আয়াতটির চারটি শব্দের রিপিটেসনের তিনিটি পয়েন্টের গানিতীক সম্ভাবনা! এখানে নেয়া হয়নি সূরা আলাক, সূরা মুদ্দাস্সির, সূরা জ্বীন এর মত গুরুত্বপূর্ণ ১৯ এর মিরাকলগুলো। এমনকি নেয়া হয়নি হরুফে মুকাত্তায়াত এর মত Vast item কে। সবগুলোকে নিয়ে সম্ভাবনা বের করতে গেলে না জানি সংখ্যাটি কত দারাতো!!!
কোরআনে ১৯ এর প্রয়োগ এর উপর আরো বিস্তারিত ডাটা মুছে ফেলা হল পোষ্ট সংক্ষিপ্ত করনার্থে।
হে সত্যান্বেষী! আপনি নিশ্চয়ই জানেন হযরত মুহাম্মদ (স:) ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যাক্তি! এটা বলা খুবি অন্যায় হবে, যদি কেউ বলে ১৯ এর এই গানিতীক মিলে যাওয়াগুলো Coincidence। কুরআনে ১৯ এর এই অলৌকিক ভারসাম্যকে যদি কেউ বুঝে, সে স্বীকার করতে বাধ্য হবে এটা এমন একটা বই যেটার মত লেখা, মানুষের ক্ষমতা ও শক্তির বাহিরে। এর পিছনে হাত আছে এক মহান শক্তির।
আর বইটির মালিক বলেই দিয়েছেন-
“বলূন: যদি সকল মানব আর জ্বীন মিলে, এই কোরআনের অনুরুপ রচনা আনয়ন করার জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্যও করে; তবুও তারা কখনো এর অনুরুপ কিছু আনতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাইল”৮৮)।
(সংগ্রহেঃ মুহাম্মদ নূর)
Comments
Post a Comment